আসছে কৌশিকী অমাবস্যা
পরিকল্পনার ঘাটতি নেই, তবু আঁধারেই তারাপীঠের গলি
ময় বদলালেও সাধক বামাখ্যাপার সাধনভূমি তারাপীঠের অব্যবস্থার ছবিটা বদলায়নি। মন্ত্রী থেকে আমলারা আসেন, দিয়ে যান প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তারাপীঠ রয়ে যায়, সেই তারাপীঠেই।
তারাপীঠকে সাজাতে বামফ্রন্ট সরকার উদ্যোগী হলেও সেই কাজ শেষ করে যেতে পারেনি। নানা জটিলতায় কাজের গতি হারিয়েছে। ২০০৯ সালে তারাপীঠের সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা করেছিল বীরভূম জেলাপরিষদ। রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব অশোকমোহন চক্রবর্তী তারাপীঠে পুলিশফাঁড়ির সামনে ফলক উন্মোচন করেন। ঘোষণা হয় একগুচ্ছ প্রস্তাবের। কিন্তু সেই পরিকল্পনার পুরোমাত্রায় বাস্তবায়ন এখনও হয়নি।
পরিকল্পনায় কী ছিল?
তারাপীঠের সৌন্দার্যায়নের সঙ্গে নিরাপত্তা ও পরিষেবা ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা মাফিক শ্মশানযাত্রীদের জন্য আলাদা রাস্তা তৈরি করা হয়। তৈরি হয়েছে মুণ্ডমালিনী যাওয়ার পাকা রাস্তাও। তারাসাগর পুকুরের পাড় বাঁধানো হয়েছে। দ্বারকা নদের দু’পাড়ও বাঁধানো হয়। শ্মশান ঘাটে সন্ধ্যায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হলেও, রাত ১১টার পর সেই আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে অমাবস্যা ও অন্য দিনগুলিতে রাতে ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে আসা ভক্তেরা অন্ধকারে বেজায় সমস্যায় পড়ছেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ার তালিকা কিন্তু আরও দীর্ঘ। এখনও ১০টি সুলভ শৌচাগার তৈরি হয়নি।
রয়েছে নোটিস। তবুও বেদখল তারাপীঠের ফুটপাথ।—ফাইল চিত্র।
২৪ লক্ষ টাকা খরচ করে বেশ কয়েকটি তোরণ (ওয়েলকাম গেট) তৈরি করার কথা থাকলেও শুধুমাত্র মুণ্ডমালিনী তলা ছাড়া আর কোথাও তা হয়নি। জেলা পরিষদের এক কর্তার আশ্বাস, মনসুবা মোড়ে ও আটলা মোড়ে আরও দু’টি তোরণ তৈরি করা হবে। টাকার সমস্যায় সেই কাজ আটকে। অটো ও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আজও তৈরি হল না। জমি চিহ্নিত হলেও জায়গা বেদখল করে কিছু দোকান গজিয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায় বলেন, “নজরদারির অভাবে ওই জায়গা বেদখল হয়েছে। শীঘ্রই মুক্ত করা হবে। প্রাচীর দিয়ে চারপাশ ঘিরে দেব।” সরকারি অতিথিশালা নির্মাণও শেষ হয়নি। জমি নিয়ে বিভ্রাট তৈরি হওয়ায় মাঝপথে কাজ বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। তবে কবে শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ময়লা ফেলার ভ্যাট তৈরি হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে। মেরামত করা হয়নি। ফলে আগের মতোই আবর্জনার স্তূপ রাস্তার যত্রতত্র। রামপুরহাট-তারাপীঠ রাস্তা চওড়া ও দৃঢ়িকরণ করা এবং রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করারও পরিকল্পনা ছিল। সে কাজও হয়নি। কেন হয়নি? পূর্ত দফতরের (সড়ক)-র এক জেলা কর্তার দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জেলা থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু টাকা বরাদ্দ হয়নি। তারাপীঠ লজ মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল ও তারাপীঠ ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য বাদল রায়দের অভিযোগ, “সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও উপযুক্ত তদারকি এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে জেলা পরিষদ তার বাস্তব রূপ দিতে পারেনি।” তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়ের খেদ, “দিন দিন তারাপীঠের সৌন্দর্যায়ন বৃদ্ধি তো দূরের কথা, সমস্যা আরও বাড়ছে।” এ তো গেল চার বছর আগে নেওয়া উদ্যোগের বর্তমান হাল। তারও আগে ফুলিডাঙা মোড়ে বাস টার্মিনাসের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। সেই কাজও বিশবাঁও জলে। ট্যুরিস্ট বাসগুলি তাই তারাপীঠের বাইরেই থামিয়ে দেওয়া হয়। মন্দিরের পথ, দ্বারকা নদের পাড় ও নদীর ঘাট থেকে শালপাতা, ফুল, বেলপাতা তুলে নিয়ে গিয়ে জৈব সার তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বছর খানেক আগে, তাও বন্ধ। দুর্গন্ধের ঠেলায় দর্শণার্থীদের এখন নাকে রুমাল চাপতে হচ্ছে। তারাপীঠের বাসিন্দা সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “দেশের তীর্থস্থানগুলো একে একে সেজে উঠছে। আর তারাপীঠ যেন দুয়োরানি হয়ে রয়েছে। কেন এই বৈষম্য?” একই প্রশ্ন ভক্তদেরও। বিধানবাবুর স্বীকারোক্তি, “আমরা যে সব পরিকল্পনা নিয়েছিলাম, তার অনেকগুলি এখনও নানা সমস্যায় বাস্তবায়িত হয়নি। যেগুলি করা হয়েছিল, নজরদারির অভাবে তার অনেককিছুই নষ্ট হয়ে পড়েছে। তাঁর আশ্বাস, নতুন জেলা সভাধিপতিকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলা হবে।” নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনের। খোঁজ নেওয়া হয়েছে তাও।
(চলবে)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.