পানীয় জল আনতে গিয়েছিলেন দফতরেরই এক কর্মী। উপর থেকে ইট-সিমেন্টের চাঙর খসে মাথায় পড়েছিল। জখম সেই কর্মীকে নিয়ে ছুটতে হয়েছিল হাসপাতালে। একই হাল হয়েছিল দফতরের এক নিরাপত্তা কর্মীরও। একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দফতরেরই বহু গাড়ি।
রামপুরহাট শহরে ডাক্তার পাড়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের শাখা অফিসে অবস্থিত ৬০ ফুট উচ্চতার একটি জলের ট্যাঙ্কই ওই সব ঘটনার খলনায়ক। প্রায় ৩০ বছরের পুরনো জীর্ণ ওই জলট্যাঙ্ককে নিয়েই শহরের বিভিন্ন স্তরের মানুষের এত রকমের অভিযোগ। প্রায় দিনই উঁচু ওই জলট্যাঙ্ক থেকে ছোটবড় চাঙর খসে পড়ছে। মানুষ জখম হচ্ছেন। ঝড়ের সময় কী হয় না হয় ভেবে এলাকার মানুষের বুকও কাঁপছে। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের অভাবে শহরের বুকে এমন বিপুল উচ্চতার জলট্যাঙ্কটি যে কোনও দিন বড় বিপদ ডেকে আনতে পারলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই বলেই পুরবাসীর অভিযোগ।
শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের ওই অফিসের প্রধান গেটে ঢুকতেই জলট্যাঙ্কটি নজরে পড়বে। ওই দফতরের দায়িত্বে ১৯৮৪ সালে রামপুরহাট পুরসভার ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডগুলিতে পানীয় জল সরবরাহের এক লক্ষ গ্যালন জলধারণে ক্ষমতাবিশিষ্ট ওই জলট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছিল। |
১৯৯২ সালে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর তা রামপুরহাট পুরসভাকে হস্তান্তরিত করে। অভিযোগ, গত ২১ বছর ধরে দায়িত্বে থাকলেও পুরসভা তার ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। ফলে সময়ের অগ্রগতি অনুযায়ী উপযুক্ত মেরামতি না পেয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি জলট্যাঙ্ক বর্তমানে জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই জীর্ণতা দেখে জলট্যাঙ্ককে ঘিরে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন খোদ জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের বাস্তুকারেরাই।
জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের রামপুরহাট শাখা অফিসের সহকারী বাস্তুকার জয়দীপ পাল মজুমদার জানিয়েছেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যে ১২টি পিলারের উপরে নির্ভর করে জলট্যাঙ্কটি দাঁড়িয়ে আছে, তার সব ক’টিতেই ভাঙন ধরেছে। সিমেন্টের চাঁই খসে খসে পড়ছে। বেরিয়ে পড়া লোহার রডগুলিতেও মরচে ধরেছে। বছর পাঁচেক আগেই ভেঙে পড়েছে ওই জলট্যাঙ্কটিতে ওঠার সিঁড়িটিও। তিনি বলেন, “ভাঙার প্রাথমিক অবস্থাতেই সেগুলির প্রয়োজনীয় মেরামতি না হওয়ায় অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝড় উঠলেই মনে হয়, এই বুঝি হুড়মুড় করে ওটি ভেঙে পড়ল। এমন বিপদ সঙ্কুল অবস্থায় দাঁড়িয়েও পুরসভা যে কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা বোঝা যাচ্ছে না।” উপরে ওঠার সিঁড়ি ভেঙে যাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্তমানে জলট্যাঙ্কটি পরিষ্কার করার জন্য উপরে ওঠার পথ বন্ধ। ফলে নিয়মিত ভাবে তা আর পরিষ্কার করা হয় না। অন্য বাসিন্দাদের মতোই জয়দীপবাবুও বলছেন, “নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ওই জলট্যাঙ্কের জমা জল থেকে ময়লা বের হচ্ছে। অথচ প্রতি মাসে একবার করে ওই জলট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা উচিত।” এ দিকে বিভাগের জেলা নির্বাহী আধিকারিক অর্ধেন্দু দত্তের দাবি, “ওই জলট্যাঙ্কের সংস্কারের জন্য নানা সময়ে রামপুরহাটের পুরপ্রধানদের দফতর থেকে লিখিত ভাবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এমনকী, জলট্যাঙ্কটি সংস্কার করার জন্য প্রকল্প ব্যয় তৈরি করে দফতর থেকে পুরসভাতেও জমা দেওয়া হয়।” কিন্তু পুরসভা কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি বলেই তাঁর অভিযোগ। এ দিকে ওই শহরবাসীর প্রয়োজনে জলট্যাঙ্কটিকে অবিলম্বে সংস্কার করা দরকার বলে মেনে নিয়েছেন পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারিও। তাঁর আশ্বাস, “পুরসভার তরফ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রকল্প ব্যয় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই আমরা কাজ শুরু করব।” |