টাচফোনে প্রেম-পুজো
০১২-র যোধপুর পার্কের প্যান্ডেলের বাইরে অনভ্যাসের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখে বন্ধুরা আহা, উফ্ফ, কী দারুণ করতে ব্যস্ত। কপালের ওপর এলিয়ে থাকা চুল হালকা হাতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার ফাঁকে মেয়েটার নজর তার স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে। পাঁচটায় ফেম সাউথ সিটিতে সিনেমা দেখা, বেরিয়ে একটু উইনডো শপিং, তার পর মেনল্যান্ড চায়নায় ডিনার কখন যে আসবে! সব প্ল্যান চটকে গেল বলে। এ দিকে ফোনে মুভির টিকিটটাও বুক হয়ে গেল!
ফেসবুক পোস্টে, ইন্সটাগ্রামে ফোটো-ভিডিয়ো শেয়ারিংয়ের দৌলতে জেনারেশন ওয়াই প্রেম এখন থ্রিজি নেটওয়ার্কের মতোই সুপার ফাস্ট। অস্মিতা যেমন ওর বিবিএম স্টেটাস চেক করেই জানতে পারে ওর এক্স-বয়ফ্রেন্ড এখনও সিঙ্গল। বা অর্ণবও হোয়াটস্অ্যাপে জেনে যায় অরিঞ্জয়ের প্রেমিকার সঙ্গে জমিয়ে প্রেমটা করতে পারবে কিনা।
এই যেমন সার্ভে পার্কের নীলাঙ্কুর। সদ্য স্কুল পেরিয়ে কলেজের ফার্স্ট ইয়ার। দেখতে অতি সাধারণ। বেশ মজা করে বলল, “আমি জানো তো ইন্সটাগ্রামে আমার একটা ভুলভাল ছবি পোস্ট করে দিয়েছিলাম। সেটা দেখে কত প্রোপোজাল! ইনফ্যাক্ট পুজোর চার দিনের চারটে অ্যাপোও ঠিক করে ফেলেছি।”
শুধুই কী তাই! রোহনের সঙ্গে ওর বান্ধবী মৃত্তিকার গোটা কলেজ জীবনের সম্পর্কও এককথায় কাট হয়ে গিয়েছে এক অদ্ভুত ঘটনায়। শুনলাম মৃত্তিকার কাছেই। গত বছর অষ্টমীর বিকেলে ওদের দু’জনের যাওয়ার কথা ছিল সল্টলেক আর নর্থ-এর ঠাকুর দেখতে। মৃত্তিকাও প্ল্যান অনুযায়ী অপেক্ষা করছিল রোহনের জন্য। “রোহনের আসতে খুব দেরি হচ্ছিল। তখন আমি আমার ফোনের লোকেশন শেয়ারিং অ্যাপস্-এ খুঁজে বের করি রোহন আছে মানিকতলা অঞ্চলে। অথচ ও আমায় বলেছিল জ্যাম-এ আটকে আসতে পারছে না। ছিল আমাদেরই কলেজের অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে। ডেট-এ বেরিয়েছিল ওরা,” হতাশ শোনায় মৃত্তিকাকে।
কথা হল সল্টলেকের অনিল-লাবণ্য সরকারের সঙ্গে। “পুজোর দিনগুলো ছিল বাবা-মার শাসনের হাত থেকে কিছু দিনের মুক্তি। আমাদের চিঠি লেখা ছাড়া তো উপায় ছিল না। এখন তো টাচফোনে, ট্যাবলেটে প্রেমের আদানপ্রদান,” বলেন অনিলবাবু। ঘাড় নাড়েন তাঁর স্ত্রী-ও।
অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী
“সত্যি বলতে এত গাদাগাদি ভিড় তখন কল্পনাও করতে পারতাম না। পুজোর মতোই বছরে এক বার এক জায়গায় হওয়ার জন্য প্রেমিক-প্রেমিকারা মুখিয়ে থাকতেন তখন। কত অপেক্ষা, লুকিয়েচুরিয়ে কত প্ল্যান...” কথা শেষ হয় না তাঁর।
পুজোর ক’দিন হাতে-হাত গলাগলি, ব্র্যান্ডেড-নন নন-ব্র্যান্ডেড রেস্তোরাঁয় ইটিং-আউট, মুঠোতে মুঠোতে ঝাঁ চকচক স্মার্টফোন, ম্যাডক্স স্কোয়্যার আলো করে আড্ডা মারা লিভাইস-সিসিডি জেনারেশন কি তা হলে সত্যিই পুজোর দিনের যে একটা প্রেমের নিজস্ব রীতি ছিল, তাতে আর বিশ্বাস করে না!
যাদবপুর কম্পারেটিভ লিটারেচার বিভাগের রঞ্জা বলল, “পুজোয় প্রেম ডেফিনিটলি হয়। কিন্তু পুজো শেষ হলে সেটা ফুস হয়ে যায়। আমার অনেক বন্ধুই তো পার্টনার থাকা সত্ত্বেও পুজোর সময় অপরিচিত ছেলেমেয়েদের ডেট করে। ফর আ চেঞ্জ।”
কম্পারেটিভ ডিপার্টমেন্টেরই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুজিত মণ্ডল আবার এই গ্যাজেট নির্ভর প্রেমের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন। বললেন, “শহুরে টেক-স্যাভি প্রেমিক-প্রেমিকাদের কথা আমার বিশেষ জানা নেই। এখানে পড়ে এমন অনেক ছেলেমেয়েকেই দেখি যারা স্মার্টফোন, অ্যাপস্, এ সব নিয়ে তেমন জানে না। অনেকেই পুজোর দিনেও ক্যাম্পাসে বসেই মেলামেশা করে বা প্রেম করে। বাইরে কী হচ্ছে তা নিয়ে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। পুজোয় ক্যাম্পাসের গেট বন্ধ কেন তা নিয়ে সিকিউরিটির সঙ্গে ঝগড়াও হয় ওদের।”
জয়পুরিয়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বর্ণালি চৌধুরী কিন্তু ভালই ওয়াকিবহাল এখনকার পুজোর প্রেম কী ভাবে হয়, তা নিয়ে। “ইদানীং তো দেখি ফেসবুকে দু’দিন চ্যাট করেই ডেটিংয়ে চলে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। কলেজে যারা পড়তে আসছে, সবার হাতেই স্মার্টফোন। পুজোর প্রেম যতটা না প্যান্ডেল আর ঠাকুর দেখায়, তার বেশি শপিং মল আর নামজাদা সব রেস্তোরাঁয়। গ্যাজেটেই প্রেম করে এরা,” বলেন বর্ণালি।
ফোন নম্বরটা দিতেও পারে,নাও দিতে পারে। চার চোখের চাওয়া মিলিয়ে যেতে পারে প্যান্ডেলের বাইরে। সম্পর্কটা হতেও পারে। হলে নাও টিকতে পারে। অবলীলায় পার্টনারও বদলে যেতে পারে। হোক না পুজোর চারটে দিনই তার মেয়াদ। তবু ভাললাগাটুকু নিয়েই তো কাটিয়ে দেওয়া যায়! এই না হলে জেন ওয়াই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.