আনন্দplus
জীবনে আশা ছেড়ে দিলে আর কী পড়ে রইল

১) আমরা এখন যাঁকে চিনছি, তিনি যত না গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী, তার চেয়ে বেশি লড়াকু এক মহিলা। এই ফাইটার মনীষা কি বরাবর জীবিত ছিলেন? নাকি ক্যানসার তাঁর চিন্তার জগৎ বদলে নতুন মনীষাকে গড়ে দিল?

আমি বরাবরই নিজের মধ্যে লড়াইকে প্রশ্রয় দিয়েছি। এমন পরিবেশে আমি জন্মেছি যেখানে অসম্ভব প্রতিযোগিতা ছিল। যেখানে চ্যালেঞ্জকে সব সময় স্বাগত জানানো হত। আমার পেশাটাও ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। বাইরে থেকে হয়তো তুলতুলে মনে হয়। হয়তো মনে হয় ভীষণ গ্ল্যামারাস। কিন্তু ভেতরে ভেতরে লুকিয়ে আছে হাড়ভাঙা খাটুনি, ত্যাগ আর লড়াই। এই লড়াইতে অভ্যস্ত থাকলেও কখনও ভাবিনি যে, জীবনে আমায় কখনও একেবারে অন্য ধরনের লড়াইতে নামতে হবে... যে লড়াইয়ের নাম ক্যানসার। ক্যানসার এমন একটা রোগ, যার হয় তাকে গোটা জীবনের জন্য বদলে দেয়। ক্যানসার রুগিরা দ্রুত সুযোগ পেয়ে যায় যে, জীবন কত ভঙ্গুর তা জানার। এটা মানুষ মুখে বলে যে, জীবন ভঙ্গুর, সবাইকে একদিন যেতে হবে। ক্যানসার হলে সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাটা হয়। আমার মনে হয়, এই রোগে যারা আক্রান্ত হয়, তারা অনেক বিনয়ী হয়ে পড়ে। জীবনের মূল্য তারা আরও ভাল বুঝতে শেখে। যাবতীয় বস্তুর প্রতি তাদের মমত্ব বেড়ে যায়। যে কোনও জিনিসের নশ্বরতা তারা আরও ভাল বুঝতে শেখে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসের মধ্যেও তারা আনন্দ খুঁজে পায়। ছোট ছোট জিনিসের প্রতি শিশুর মতো তারা আকর্ষিত হয়ে পড়ে। আমি যেমন ক্যানসার হওয়ার পর অনেক বেশি স্বাস্থ্যসচেতন। ছোট একটা চিন্তার জগতের অন্ধ গলিতে না-ঢুকে সামগ্রিক লাইফস্টাইল নিয়ে ভাবি। শরীর-মন-স্পিরিট শুদ্ধ রাখা নিয়ে ভাবি। মেডিটেশন করি। যোগাসন করি। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করি। বেশির ভাগ সময় নিরামিষ খাই। অর্গানিক ফ্রেশ খাবার খাই। আমার জন্য এখন নো সোডা, নো ক্যানড ফুড, নো কেমিক্যালি গ্রোন ফুড। বরঞ্চ টাটকা ফল খাই। নিজেকে সব সময় পজিটিভ রাখি।

২) ‘নাইন্টিন ফর্টি-টু: আ লাভ স্টোরি’র মনীষা আর এই মহিলার মধ্যে তফাত কী?
অনেক তফাত। ওই সময়টা অনেক পুরনো। তার পর থেকে অনেক রাস্তা চলে এসে আরও ম্যাচিওর করেছি। অনেক পরিপূর্ণতা এসেছে। সব চেয়ে বড় কথা নিজের মধ্যে এখন যে মনটাকে নিয়ে বয়ে বেড়াই, তার স্পিরিট শিশুদের মতো। উৎসাহের একটা প্রাচুর্য নিজের মধ্যে চলে এসেছে। যা আগে এই মাত্রায় ছিল না।
৩) অসুস্থ হওয়া। আবার সেরে ওঠা মাঝখানের সময় যুবরাজ সিংহের সঙ্গে কখনও কথা হয়েছে?
হ্যাঁ, যুবিকে আমি ফোন করেছিলাম। ওর ফাইটিং স্পিরিট আর লড়াইয়ে মুগ্ধ হয়ে। যখন ও অসুস্থ ছিল, কথা হয়নি। নেটে ওর কাহিনি আমি পড়ি। পড়ে আমার পক্ষে বোঝা খুব সহজ ছিল যে, কীসের মধ্যে দিয়ে ও যাচ্ছে। তার পর যেভাবে ও ফিরে এল, সেটা আমার কাছে ভীষণ ইন্সপায়ারিং। আমি শিওর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কোটি কোটি কোটি কোটি লোক যুবরাজের দৃষ্টান্ত থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। আমার মনে হয়, অজস্র ধন্যবাদ যুবির প্রাপ্য যে, ওর জন্যই ক্যানসার আক্রান্ত হয়েও মানুষ আশা ছেড়ে দিচ্ছে না। আর জীবনে যদি মানুষ আশা-ই ছেড়ে দেয় তাহলে আর কী পড়ে রইল! আমি যুবরাজের জীবনে ফেরার ধরনে অসম্ভব ইম্প্রেসড হয়েছিলাম। আমি ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, ওর লাইফস্টাইল এখন কী রকম? আমার জানার খুব কৌতূহল ছিল। তার কারণ এমনিতেও আমি ক্যানসার হারিয়ে জেতা মানুষদের জীবনযাত্রার ধরন জানতে খুব উৎসাহী। আমার নিজেরটাও মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে ভালবাসি। যদি তা থেকে লোকে কোনও গোপন মন্ত্র খুঁজে পায়। অনেকের মনে হয়, স্বাস্থ্যসম্মত হয়ে বাঁচাটা বড্ড বেশি সিরিয়াস। বোরিং। পায়ে শিকল দিয়ে বাঁচার মতো। আমার মনে হয়, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মধ্যেও এনজয়মেন্ট আনা সম্ভব। মজা আনা সম্ভব। আর তা হলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও বাচ্চা বয়স থেকেই এটা ফলো করতে পারবে। আজ জেনে গেছি, স্পর্শদোষে ছড়ায়নি এমন বেশির ভাগ রোগই এড়িয়ে চলা সম্ভব যদি ছোটবেলা থেকেই কেউ নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে। আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে অনেক কিছু স্বাস্থ্যকর জিনিস লুকিয়ে রয়েছে। আয়ুর্বেদ, দিনচর্য এই সব। শুধু সেগুলোকে নতুন করে শিখতে হবে। আমি শিক্ষার্থীদের দলে সানন্দে নাম লিখিয়েছি।

৪) আপনাকে আর যুবরাজকে নিয়ে ক্যানসারজয়ীদের অনুপ্রেরণামূলক বৈঠক যে কলকাতা শহরে হচ্ছে তার মধ্যে বিশেষ কোনও তাৎপর্য খুঁজে পান?
আরে বাংলার সঙ্গে আমার একটা অদ্ভুত যোগাযোগ আছে। সাহিত্য আর সংস্কৃতিতে বাংলার এমনই ঐশ্বর্য যে সম্মোহিত না-হয়ে উপায় নেই। আমি বরাবর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমিক। সত্যজিৎ রায়ের অসম্ভব গুণমুগ্ধ। ঋত্বিক ঘটকের ছবি পছন্দ করি। নতুন জেনারেশনের বাংলা পরিচালকদের কাজ আমার ভাল লাগে। ঋতুপর্ণদাকে যেমন আমার খুব ভাল লাগত। ওর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আরও ভাল লেগে যায়। ঋতুদার সহকারী আমাকে বাড়ি থেকে বাঙালি খাবার এনে দিত। যার আমি ভীষণ ফ্যান। কলকাতা থেকে ঋতুপর্ণা আর সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন ক্যানসার সারভাইভার্স মিট-য়ে যোগ দেওয়ার জন্য আমায় অনুরোধ পাঠায়, আমি এক কথায় হ্যাঁ করে দিই। এই রোগাক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করা। ক্যানসারের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে রুখে দাঁড়ানো, এমন উদ্যোগে আমায় শামিল করার জন্য কৃতজ্ঞ। আমার ভাবলে অবাক লাগে, কলকাতায় প্রতি বাড়িতে হয় সঙ্গীতশিল্পী, নয়তো অভিনেতা। জীবনের সব ক্ষেত্রেই ওখানে সংস্ক্ৃতির ধারাগুলো এত ধনী যে, আমার বিনম্র প্রার্থনা, এটা আরও একশো গুণ ধনী হোক। খুব সত্যি কথা বলছি, আমি বাংলা সম্পর্কে টানা বলে যেতে পারি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। হয়তো পূর্বজন্ম এখানেই কাটিয়েছি, আর সেটা ফিরে ফিরে আসছে! নইলে শহরটার সঙ্গে এত আত্মীয়তার পরশ ব্যাখ্যা করব কী করে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.