ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গড়তে জেলাজুড়ে ঘোড়া কেনাবেচা চলল।
শুক্রবার জেলার বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের দিন ছিল। জেলার ৬টি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে এ দিন তিনটির বোর্ড গঠন হয়। রাজনীতির কারবারিরা আগাম আশঙ্কা করেছিলেন বোর্ড গড়তে দল ভাঙানোর খেলা চলবে। ভাবনা সত্যি করে এ দিন পুরোদমে নীতিহীনতার জোট বেঁধে রাজনৈতিক দলগুলি বোর্ড গড়েছে। ভোট পর্ব মেটার পর বাম-তৃণমূল শিবিরের জেলা নেতারা বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে একলা চলার নীতি কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বা তা হল না। সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের সমর্থনে বোর্ড গড়ল তৃণমূল। সুতি-১ ব্লকে ‘জেলার জাতশক্র’ তৃণমূলের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে পঞ্চায়েত সমিতির দখল নিল কংগ্রেস। অন্যদিকে সুতি-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ ও তৃণমূল সদস্যদের সমর্থনে বোর্ড গঠন করল।
সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ৩৩। তারমধ্যে তৃণমূল জয়ী হয় ১৬টিতে। কংগ্রেস ও বামেদের ঝুলিতে গেছে যথাক্রমে ৯টি ও ৮টি আসন। এ দিন শপথ গ্রহনের পর সিপিএম প্রার্থীরা ভোটাভুটি বয়কট করেন। কিন্তু ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্য ফজল বারি বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে শাসকদলকে সমর্থন জোগাড়। ফলে তৃণমূল ১৭-৯ ভোটে কংগ্রেসকে হারিয়ে ওই পঞ্চায়েত সমিতির দখল নেয়। সুতি-১ পঞ্চায়েত সমিতির ১৮টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনের পেয়ে একক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কংগ্রেস। বামেরা লাভ করে ৭টি আসন। তৃণমূল ও বিজেপি ১টি করে আসনে জয়ী হয়। তৃণমূল সদস্য শেখ মহম্মদ জালালুদ্দিন কংগ্রেসকে সমর্থন করেন। ফলস্বরুপ ১০-৭ ভোটে বামেদের হারিয়ে বোর্ড গড়ল কংগ্রেস। অনৈতিক জোট গঠনের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে সুতি-২ ব্লকেও। তৃণমূল নেত্রীর ‘জাতশক্র’ বামেদের সমর্থন করেছে তাঁর দলের জয়ী সদস্যরা। ওই পঞ্চায়েত সমিতির ২৮টি আসনের মধ্যে ১২টি পেয়েছে কংগ্রেস। বামেরা জিতেছে ১১টি আসনে। তৃণমূলের আসন সংখ্যা সাকুল্যে দু’টি। জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি লতিফুদ্দিন বিশ্বাসের অনুগামী বিক্ষুব্ধ তৃণমূলরা ৩টি আসনে জিতেছে ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে। বৃহস্পতিবার লতিফুদ্দিন বিশ্বাস বোর্ড গড়তে বামেদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তৃণমূল অবশ্য বাম-কংগ্রেস উভয় পক্ষ থেকে সম দূরত্ব বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু শুক্রবার বোর্ড গঠন সংক্রান্ত ভোটভুটিতে তৃণমূলের দুই জয়ী সদস্য চির প্রতিদ্বন্দ্বী বামেদের পক্ষে ভোট দেন।
কুর্সির দখল পেতে ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার ক্ষেত্রে জেলার তিন রাজনৈতিক দলের নেতারাই অন্যায়ের কিছু দেখছেন না। সাগরদিঘিতে ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্যের তৃণমূলকে সমর্থন করা প্রসঙ্গে দলের জেলা সম্পাদক বিভাস চক্রবর্তী বলেন, “বামপন্থী ভোটারদের সঙ্গে ছলনা করে ওই সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। দল এর তদন্ত করবে।” রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুব্রত সাহা বাম সদস্যের সমর্থন নেওয়ার মধ্যে অন্যায্য কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের স্লোগানে মুগ্ধ হয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্য ফজল বারি আমাদের সমর্থন করেছেন।” সুতি-১ ব্লকে তৃণমূল সদস্যের সমর্থনে বোর্ড গড়া প্রসঙ্গে জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক অশোক দাস বলেন, “কেউ স্বেচ্ছায় আমাদের সমর্থন করলে কেন নেব না?” সুতি-২ ব্লকে তৃণমূল ও বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়া প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্গ ভট্টাচার্য বলেন, “একক বৃহত্তম দল হিসেবে আমরা বোর্ড গঠনে প্রার্থী দিয়েছিলাম। এতে কেউ আমাদের সমর্থন করলে কী করা যাবে?” মৃগাঙ্গবাবু যাই বলুন না কেন সিপিএম সুতি-২ ব্লকে ভেবেচিন্তে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের সমর্থন নিয়েছে। সহ সভাপতির পদ বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মৃগাঙ্গবাবু বলেন, ‘‘নির্দলদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধাতে অন্যায়ের কিছু নেই।”
|