ঋদ্ধিমান সাহা শেষ পর্যন্ত বাংলা অধিনায়ক হচ্ছেন? না, হচ্ছেন না?
ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ফেরত যে ঋদ্ধিমানকে শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে পাওয়া গেল, তাঁর কথা শুনলে মনে হবে সংশয়ের জায়গা এখনও যথেষ্ট আছে!
এবং উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরও সহজ। ঋদ্ধিমান অধিনায়ক হতে পারেন। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে।
পুরো ব্যাপারটা কী?
এত দিন সিএবি কর্তারা মোটামুটি ধরেই নিয়েছিলেন যে, রঞ্জিতে ঋদ্ধিই বাংলার সম্ভাব্য অধিনায়ক। মনোজ তিওয়ারিকে পাওয়া যাবে না। লক্ষ্মীরতন শুক্লকে বাংলার এক জন দুঁদে যোদ্ধা হিসেবেই কর্তারা বেশি করে দেখতে চাইছিলেন। বলা হচ্ছিল, জাতীয় দলের প্রেক্ষিতে ঋদ্ধিমানই এই মুহূর্তে বাংলার সেরা সম্ভাবনা। তাঁকে যতটা সম্ভব সামনে আনতে হবে। কিন্তু শুক্রবার বাংলার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের মন্তব্য শুনে কিছুটা হলেও ফের দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সিএবি কর্তাদের কপালে। |
ছুটির মেজাজ
দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মল-এ সস্ত্রীক ঋদ্ধিমান। ছবি: উৎপল সরকার |
“দেখুন, যদি আমাকে আজও বলা হয় তুমি টিমে প্লেয়ার হিসেবে থাকতে চাও না অধিনায়ক হিসেবে, আমি বলব প্লেয়ার। আমার আজও ক্যাপ্টেন্সি করার তেমন ইচ্ছে নেই,” এ দিন দুপুরে স্ত্রী-র সঙ্গে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে আনন্দবাজারকে বলে দিলেন ঋদ্ধি। সঙ্গে যোগ করলেন, “আমি কথাটা সিএবি কর্তাদেরও বলেছি। প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও একপ্রস্ত কথা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে। আসলে কী জানেন, অধিনায়ক হলে আমি দেখেছি কেউ কেউ অনৈতিক সুযোগসুবিধে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমার পক্ষে ওসব সম্ভব নয়। আর আপনারা বলছেন, ক্যাপ্টেন্সি নিতে অসুবিধে কোথায়? আমি তো বলব সাধারণ প্লেয়ার হিসেবে খেলতেও আমার অসুবিধে কোথায়?”
নিজের মুখে কোনও ভাবেই ঋদ্ধি স্বীকার করছেন না, যে সব শর্ত তিনি দিয়েছেন, সেগুলো মানা না হলে অধিনায়কত্ব করবেন না। বলছিলেন, “আমি তো সেটা বলিনি। কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। দেখা যাক সিএবি সেটা নিয়ে কী করে।” কিন্তু সিএবি কর্তাদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, অধিনায়কত্বের জন্য তিনটে শর্ত দিয়েছেন ঋদ্ধিমান।
এক) ক্যাপ্টেন হলে দল নির্বাচনী সভায় তাঁর মতামত নিয়মিত গ্রাহ্য করতে হবে। তিনি যে টিম বাছবেন, সেটা অন্তত দু’তিন ম্যাচে রাখতে হবে।
দুই) কোনও ক্রিকেটারকে টিমে নিলে তাঁকে দু’টো থেকে তিনটে ম্যাচ সুযোগ দিতে হবে। একটা ম্যাচ দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেন না আসা হয়।
তিন) অনেক সময় দেখা যায়, কোনও ক্রিকেটার ভাল পারফর্ম করেও একটা ম্যাচ খেলে বসে যাচ্ছে। কিন্তু আর এক জন স্রেফ ময়দানের বড় ক্লাব পিছনে আছে বলে পারফরম্যান্স ছাড়াই ম্যাচের পর ম্যাচ থেকে যাচ্ছে। তিনি এ সব জটিলতায় থাকতে চাইছেন না।
সিএবি-র কোনও কোনও কর্তার কাছে ব্যাপারটা খোলাখুলি বলেছেন ঋদ্ধিমান। তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাঁর প্রস্তাব অবশ্যই বিবেচনা করে দেখা হবে। কিন্তু অধিনায়কত্ব করবেন না, সিদ্ধান্তটা মোটেই ঠিক হবে না। কারণ এক দিকে তাতে তাঁর নিজের ক্ষতি। অন্য দিকে, বাংলা ক্রিকেটের ক্ষতি। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় জাতীয় নির্বাচক বিক্রম রাঠৌর-ও নাকি উপস্থিত কাউকে কাউকে বলে ফেলেছেন, ছেলেটাকে এখনই বাংলার ক্যাপ্টেন করে দেওয়া উচিত। সিএবি দেরি করছে কেন? এ দিন রাতে সিএবি-র এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলছিলেন, “ঋদ্ধিমান ওর শর্তগুলো আমাদের বলেছে। কিন্তু বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক না মিটলে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। আমরা ঋদ্ধিকে ক্যাপ্টেন করার আপ্রাণ চেষ্টা করব।”
|