থাকবেন? থাকবেন না?
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন রবিবারের কলকাতা বৈঠকে সশরীরে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে হাজিরা দেবেন কি না, তা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটমহল যেমন সংশয়ে শুক্রবার ডুবে গেল। তার অর্ধেকও বীরেন্দ্র সহবাগের কামব্যাক ঘটবে কি না, তা নিয়ে নেই!
সাদা চোখে শ্রীনির অবস্থা বেশ কঠিন। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট নোটিশ পাঠিয়েছে শ্রীনিবাসন এবং চেন্নাই সুপার কিংসকে। বলা হয়েছে, বম্বে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নতুন তদন্ত কমিশন কেন গড়া হবে না, তার সদুত্তর আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দিতে। অনেকে মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রকারান্তরে আইপিএল গড়াপেটা কাণ্ডে বোর্ড নিযুক্ত তদন্ত কমিশনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল। আর নতুন তদন্ত কমিশন যদি এর পর তৈরিও হয়, তা হলে শ্রীনিবাসনের প্রত্যাবর্তনও চলে যাবে বিশ বাঁও জলে। সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রথম আইপিএল গড়াপেটা মামলার সঙ্গে শ্রীনিবাসনের নাম সরাসরি জড়িয়ে পড়ল। সুপ্রিম কোর্ট শ্রীনি-র নাম করে নোটিশ পাঠিয়েছে। যা আজ পর্যন্ত হয়নি। বম্বে হাইকোর্টের রায়েও প্রত্যক্ষ ভাবে জড়াতে হয়নি শ্রীনিবাসনকে।
অর্থাৎ কলকাতার ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক যেটা নিয়ে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়ল বোর্ডের বার্ষিক সভা পিছিয়ে দেওয়া হবে কি না। ঠিক সময়ে বার্ষিক সভা হলে সেটা হওয়ার কথা ২৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি নির্বাচন হলে শ্রীনির পক্ষে সেখানে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। রাতের দিকে আবার শোনা গেল, শ্রীনি-ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ আবার সরে দাঁড়ানো বোর্ড প্রেসিডেন্টকে বোঝাতে শুরু করেছেন যে, চেয়ার নেওয়ার হলে এখনই নিয়ে নিন। কলকাতার বৈঠকেই সেটা করে ফেলতে হবে। নইলে বার্ষিক সভায় প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা করা কঠিন হবে যাবে। যার পাল্টা আবার দিয়ে রেখেছেন বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা। রীতিমতো আক্রমণাত্মক মেজাজে বলে দিলেন, “শ্রীনি একবার ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে ঢুকে দেখুক না। সোজা আদালত অবমাননার মামলায় ফেলব। আজকের পর থেকে তো গড়াপেটা মামলায় ও-ও পার্টি। প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার আগে ওকে আদালতে টেনে নিয়ে যাব।”
যা নিয়ে শ্রীনি-ঘনিষ্ঠরা নাকি তাঁকে বোঝাতে শুরু করেছেন যে, ‘কনটেম্পট অব কোর্ট’-এর মামলা হলে হবে। সেটা পরবর্তী ব্যাপার। আপাতত দরকার বোর্ড প্রেসিডেন্টের মসনদে বসে পড়া। স্বয়ং শ্রীনিবাসনকে চেন্নাইয়ে ফোন করা হলে তাঁর গলা বেশ হতাশ শোনাল। আনন্দবাজারকে শুধু বললেন, “যা চলছে, তার পর ক্রিকেট নিয়ে কোনও রকম কথাই কারও সঙ্গে বলার ইচ্ছে আমার নেই।” বলেই ফোন বন্ধ করে দিলেন শ্রীনি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সারা দিন যাঁকে ফোনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে জাতীয় মিডিয়া।
আর জগমোহন ডালমিয়া? বোর্ডের অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট অদ্ভুত এক পরিস্থিতির সম্মুখীন। বোর্ডের কাগজপত্র কিছুই প্রায় সই করছেন না। যেহেতু ভবিষ্যতে তিনিই প্রেসিডেন্টের চেয়ারে থাকবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই। এমনকী রবিবারের বৈঠকেও ‘চেয়ার’ করবেন কি না, জানেন না। আশ্চর্য সব মন্তব্যের মুখেও তাঁকে পড়তে হচ্ছে। বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল যেমন। এ দিন বলে রেখেছেন, “শ্রীনিবাসন রবিবারের বৈঠকে এলে ভালই হয়। অনেক কাগজপত্র ওঁকে দিয়ে সই করানোর আছে। যেটা মিস্টার ডালমিয়ার এক্তিয়ারে পড়ে না! নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে দরকার। আর শ্রীনিবাসনের বৈঠকে আসা নিয়ে আইনি জটিলতা কিন্তু নেই। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি। উনি ইচ্ছে করলেই আসতে পারেন।”
যা শুনে ডালমিয়া কোনও মন্তব্য করতে যাননি। শুধু বললেন, “আমি এ সবের পার্টি নই। কেন কথা বলতে যাব?” কিন্তু ডালমিয়া-শিবিরের কেউ কেউ আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন বোর্ড সচিবের মন্তব্য দেখে। বলাবলি চলছে, পুরো ব্যাপারটা যখন এখনও আদালতের অধীনে, তা হলে বোর্ড সচিব কী ভাবে মন্তব্য করে বসছেন শ্রীনিকে নিয়ে?
সব মিলিয়ে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে। ডালমিয়ার হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। শ্রীনিবাসন নিজেও কোনও কাগজপত্রে সইসাবুদ করতে পারছেন না। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি সংক্রান্ত ব্যাপারস্যাপারও ঝুলে রয়েছে। পঞ্চাশ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির জন্য যাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ভেবেছিল বোর্ড, এনসিএ-র প্রশাসনিক কর্তা অজয় কুমার ঝা বুধবার প্রয়াত হয়েছেন। এখন বুঝে ওঠাই যাচ্ছে না যে, সমস্ত তথ্য কোথা থেকে পাওয়া যাবে! ধোনিদের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সূচি দু’দেশের বোর্ডের মতান্তরের কারণে ঝুলে রয়েছে।
যা অবস্থা, তাতে ভারতীয় টিমই শুধু জিতছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে চেতেশ্বর পূজারারা-ই শুধু বিদেশ থেকে ট্রফির পর ট্রফি জিতে আনছেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের হাল খুব খারাপ। আপাতত, রবিবাসরীয় কলকাতা বৈঠকে ক্রিকেট-প্রশাসনের ভাগ্য কী ঘটতে চলেছে সেটাই জানতে আগ্রহী ভারতের ক্রিকেটমহল। |