পাকিস্তানি সাংবাদিক আসবে শুনেই অনুশীলনের ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন উইম কোভারম্যান্স। পুলিশ মাঠে টিম ইন্ডিয়া ঢোকার দশ মিনিট আগে সাংবাদিকদের মোবাইলে মিডিয়া ম্যানেজারের মেসেজ চলে এল। “শুরুতে নির্ধারিত ফুটবলারদের সঙ্গে পনেরো-কুড়ি মিনিট কথা বলার পর মাঠ ছেড়ে যেতে হবে সবাইকে।”
ট্রেভর জেমস মর্গ্যান বা সম্প্রতি মার্কোস ফালোপার দৌলতে ‘ক্লোজ ডোর’ কলকাতার সাংবাদিকদের চেনা শব্দ। তা বলে উইম কোভারম্যান্স!
নেহরু কাপে যা কখনও করেননি, সাফ কাপে এসে সেটাই করলেন ডাচ কোচ। ভারতে কোচিং করতে আসার পর প্রথম বার ক্লোজ ডোর অনুশীলন হল সুনীল ছেত্রী-মেহতাব হোসেনদের। দক্ষিণ এশিয়ার ‘ডার্বি’-র ৪৮ ঘণ্টা আগে। কেন আপনার এই পরিবর্তন? “পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ভেরি স্পেশ্যাল। ওরাও তো এখানে আছে। বাংলাদেশও আছে। আমি বিশেষ কিছু মুভ অনুশীলন করাতে চাই, সে জন্যই,” পুলিশ মাঠে শুক্রবার অকপট জাতীয় কোচ।
কিন্তু কেন তিনি হঠাৎই ‘গোপন অনুশীলন’ করালেন? টিম সূত্রের খবর, ‘ফলস নাইন’ ছাড়া বাকি টিম সাজিয়ে ফেলেছেন তিনি। ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’-এর জন্য।
নেহরু কাপের অন্যতম সেরা অস্ত্র চোটে বাতিল ক্লিফোর্ড মিরান্ডার জায়গায় স্ট্রাইকার জেজে-কে খেলানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কোভারম্যান্স। দূর থেকে হঠাৎ হঠাৎ দুর্দান্ত শটে গোল করে যাওয়ার ক্ষমতার জন্যই জেজেকে ওই গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে বাছা হয়েছে। লেফটব্যাকে মোহনরাজ। উইঙ্গার রহিম নবিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে রাইট ব্যাকে। কিন্তু ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে সুনীল ছেত্রীর পিছনে ‘ফলস নাইন’ কে? নেহরু কাপে খেলেছিলেন ফ্রান্সিস ফার্নান্ডেজ। এ বার তিনি মাঝমাঠে। ক্লোজ ডোরে ওই পজিশনে ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখে নেওয়া হয়েছে জুয়েল রাজা আর রবিন সিংহকে। “সাধারণত টুর্নামেন্টগুলোয় ২৩ জনের নাম নথিভুক্ত করা যায়। এখানে মাত্র কুড়ি জন। এটা বড় সমস্যা,” কোভারম্যান্সের কপালে ভাঁজ।
কিন্তু নেহরু কাপে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা দেশগুলোর বিরুদ্ধে নামার আগেও তো এতটা টেনশনে ছিলেন না নবিদের হেডমাস্টার! |
সাফে সুনীলদের প্র্যাক্টিসেরছবি এআইএফএফ-এর সৌজন্যে। |
কোথাও কি বিপদের আঁচ পাচ্ছেন তিনি? “সাফ কাপে সবাই ধরে নিয়েছে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব। এটা শুধু আমার একার উপর চাপ নয়, ছেলেদের উপরও চাপ। সে জন্য পাঁচটা ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনাল। ট্রফিটা ধরে রাখতে হবে,” বলেই টিম যে দিকে অনুশীলন করছে সে দিকে হাঁটতে শুরু করেন ডাচ কোচ। তখন অনুশীলনও শুরু হয়ে গিয়েছে আরাতাদের। কিন্তু নেহরু কাপের চেয়েও এটা কঠিন? “এ সব নিয়ে আমি কখনও কিছু বলি না।”
কোচ না বললেও ব্যাপারটা খোলসা করে দেন মেহতাব। “নেহরু কাপে ক্যামেরুনের মতো দলকে হারালেও সাফে চাপ বেশি। কারণ সবাই ধরে নিয়েছে ভারতই চ্যাম্পিয়ন। সাফ কাপে আমাদের অবস্থা অনেকটা পেনাল্টি মারার মতো। গোল করলে ঠিক আছে। না পারলেই সমালোচনা।” টিম ইন্ডিয়ার সদস্যদের কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে আগেই। ফোনে কথা বলাও বন্ধ। ফুটবলাররা কোচের ভয়ে এতটাই জড়সড় যে, সাংবাদিক দেখলেই পালাচ্ছেন। দু’জন ফুটবলারকে এ দিন কথা বলতে পাঠানো হয়েছিল। মেহতাব আর গৌরমাঙ্গী। দু’জনেই আশ্বাস দিয়ে গেলেন, ট্রফি না জেতার কারণ নেই।
ভারতের টিম হোটেলেই আছে ছ’টা টিম। পাকিস্তানও। কিন্তু কোনও টিমেই এ রকম ‘ফতোয়া’ নেই। কোভারম্যান্স যে এই টুর্নামেন্ট নিয়ে কতটা সিরিয়াস, টের পাচ্ছেন সংগঠকরাও। আট দেশের অধিনায়ককে নিয়ে ফটো সেশন ছিল এ দিন। অনুশীলন আর ফটোশু্যট একই সময়ে ছিল বলে সেখানে ডাচ কোচ যেতেই দেননি সুনীল ছেত্রীকে। জানিয়ে দিয়েছেন, “অনুশীলন আগে। ফটো নয়।” জানা গেল, আগের দিন রাত আটটায় ভারতীয় দলকে জানানো হয়, অধিনায়কদের ট্রফি নিয়ে ছবি তোলার নির্ধারিত সময় সকাল এগারোটা। যখন ভারতের অনুশীলন রয়েছে। সময় পাল্টে সেটা সকাল ন’টায় করতে বলেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু উদ্যোক্তারা রাজি হননি।
সাফ কাপের দৈত্য ভারতের অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে সেশন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়। তবে এ সব তোয়াক্কা না করেই এ দিন বিকেলে স্টেডিয়াম দেখতে চলে যান জাতীয় কোচ। দশরথ স্টেডিয়াম দেখে তিনি খুশি। আজ নেপাল এবং বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে সাফ কাপ।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন প্রথা মেনে কোচ-অধিনায়কদের সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন কোভারম্যান্স। গত বার ঘরের মাঠে সাফ কাপ দেওয়া কোচ এ বারের সহকারী হয়ে আসা স্যাভিও মেদেইরা অবশ্য দাঁড়িয়েছিলেন সবার অলক্ষ্যে। হোটেলের বলরুম থেকে বেরনোর দরজার কাছে। শুনছিলেন কে কী বলেন। সুনীলকে প্রশ্ন করা হয়, গত বারের চেয়ে এ বারের সাফ কি আলাদা মনে হচ্ছে? সুনীল বলে দেন, “গত বার দেশের মাটিতে এই ট্রফি জিতেছিলাম। এ বার বাইরে হচ্ছে। এটাই যা পার্থক্য।” সুনীল যেটা বলেননি তা হল, এ বার শুরুতেই পাকিস্তান।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভারত কি পারবে এ বারও ট্রফি জিততে? কোভারম্যান্স-সুনীল যেখানে বসে কথা বলছিলেন, মিনিট দশেক আগেই সেখানে বসে পাক কোচ শাহজাদ আনোয়ার কিন্তু ‘হুমকি’ দিয়ে গিয়েছেন, “আমরা তৈরি। সপ্তাহের প্রতি দিন কিন্তু রবিবার হয় না।” |