বছর দেড়েক আগেকার ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডে ধৃত অম্বিকেশ মহাপাত্রকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কলকাতা হাইকোর্টও মনে করে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশবাবু ওই ঘটনায় ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য শোনা দরকার। হাইকোর্টে নিজের বক্তব্য জানাতে হবে ওই অধ্যাপককে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্রকে ঘিরে ২০১২ সালের এপ্রিলে গ্রেফতার হন নিউ গড়িয়ার একটি আবাসনের বাসিন্দা অম্বিকেশবাবু ও আবাসনের সম্পাদক সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার আগে এক দল যুবক ওই আবাসনে চড়াও হয়ে মারধর করে অম্বিকেশবাবুকে। জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হলেও ওই অধ্যাপককে লক-আপে রাত কাটাতে হয়। এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। প্রতিবাদে নামে প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ শিক্ষাজগৎ। রঙ্গরসের রাজনীতির ব্যাপারে শাসক দলের বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতার অভাবের অভিযোগও ওঠে। পুলিশের একাংশ মেনে নেয়, অধ্যাপককে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে গলদ ছিল। মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করে, অম্বিকেশবাবুর উপরে পুলিশের অতি সক্রিয়তার জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে
হবে সরকারকে।
ক্ষতিপূরণের সেই সুপারিশ মানেনি রাজ্য সরকার। কেন সরকার ওই সুপারিশ মানছে না, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মানবাধিকার কমিশনকে একটি চিঠি দিয়ে তা জানান। তার পরেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা হয়। শুক্রবার ছিল সেই জনস্বার্থ মামলার শুনানি।
আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, একটি কার্টুনের জন্য ওই অধ্যাপককে পুলিশ লক-আপে রাত কাটাতে হয়েছে। মানবাধিকার কমিশন বিষয়টির তদন্ত করে পুলিশের কাজ যথাযথ নয় বলে জানিয়ে
দেয়। অধ্যাপকের ক্ষতি পূরণে সরকারকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার সুপারিশ করেছিল কমিশন। কিন্তু সরকার জানিয়ে দেয়, তারা ওই সুপারিশ মানবে না। কেন মানবে না, তা ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্রসচিব মানবাধিকার কমিশনকে চিঠি দেন। সেই চিঠিতে তিনি জানান, অম্বিকেশবাবুকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। রাজ্য সরকার সেই জন্যই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ মানবে না। বিকাশবাবু উচ্চ আদালতে বলেন, মানবাধিকার কমিশন একটি স্বশাসিত সাংবিধানিক সংস্থা। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব সেই সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চিঠি লিখতে পারেন না।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ মনে করে, জনস্বার্থের মামলা হলেও এখানে ওই অধ্যাপক ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই তাঁর কথা শুনতে হবে। পরবর্তী শুনানির দিনেই নিজের বক্তব্য জানাতে হবে অম্বিকেশবাবুকে।
|