লঞ্চ চলল না। তৈরি হয়ে পড়ে রইল একাধিক জেটি। খালপাড় বাঁধানোর কাজও অসম্পূর্ণ। খালপাড় এখন জঙ্গলে ভরা। এ ছবি বলে, বাম আমলের কেষ্টপুর খালপাড়ের সৌন্দর্যায়নের কোনও প্রতিশ্রুতিই কার্যত বাস্তবায়িত হয়নি। এ বার কেষ্টপুর খালপাড়কে সিঙ্গাপুরের নদীর পাড়ের মতো সাজানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু ঝুপড়ি-সহ নানা দখলদারির জন্য এ কাজে সমস্যা হতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করছে প্রশাসনের একাংশ। যদিও সেচ ও পুর দফতরের দাবি, পুজোর আগেই কাজ শুরু করা যাবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে উল্টোডাঙা সংলগ্ন অংশে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত খালের পাড় সাজানো হবে। এর নকশা তৈরি করতে ইতিমধ্যেই একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়নকে বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্থির হয়েছে, ভিআইপি রোডের দুর্গাপুর সেতুর কাছে পূর্ব কলকাতার প্রবেশমুখে লন্ডন আই-এর ধাঁচে একটি স্মারক তৈরি করা হবে। থাকবে একটি গেটওয়েও। খালের দু’দিকে থাকবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির নানা নিদর্শন, হাঁটার পথ। বসবে সুদৃশ্য বাহারি রেলিং। জলে থাকবে বাহারি বোট। খালের উপরে রোপওয়ে তৈরির চিন্তাও রয়েছে। পাশাপাশি থাকবে ফুডকোর্ট। একই সঙ্গে এই খাল বরাবর পাইপের মাধ্যমে রাজারহাটে জল নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সিঙ্গাপুরের নদী-পরিকল্পনার মতো কাজ হবে। দ্রুত কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।” |
পরিকল্পনা কার্যকরী হলে সল্টলেকের সৌন্দর্যায়নের মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হবে বলেই দাবি সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “খালপাড় অবহেলায় পড়েছিল। মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি এই প্রকল্প ঘিরে কর্মসংস্থানও হবে।” কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, খাল সংস্কার না করে এই কাজ করলে ফের সমস্যা হবে। সল্টলেক (বিধাননগর) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “সেন্ট্রাল পার্ক-সহ সল্টলেকের নানা অংশে সবুজ কমে গিয়েছে। খালপাড়ে এখনও অনেক গাছ রয়েছে। উন্নয়নের জন্য তা যেন বিপন্ন না হয়। খালপাড় সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি খালের সংস্কার দরকার। বর্ষায় খাল ভরে গিয়ে ভোগান্তি হচ্ছে।”
বাসিন্দাদের এই দাবি সমর্থন করে সেচমন্ত্রী বলেন, “সৌন্দর্যায়ন করতে গেলেও সংস্কার করতে হবে। সবুজ অটুট রেখেই সার্বিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” প্রশ্ন উঠেছে, দুই কিলোমিটার পরীক্ষামূলক সংস্কারের পরে কী হবে? সেচ দফতরের আধিকারিকরা জানান, এই প্রকল্প সফল হলে বাকি অংশেও তা কার্যকরী হবে। কিন্তু কেষ্টপুর খালের নানা অংশে ঝুপড়ি-সহ নানা দখলদারি রয়েছে। একটি অসম্পূর্ণ সেতুও রয়েছে। শাসক দলের নীতি হল পুনর্বাসন দিয়ে উচ্ছেদ করা। ফলে বাকি অংশের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে সেচমন্ত্রীর আশ্বাস, “কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্প আটকে থাকতে পারে না। আলোচনা করে সমাধানের পথ বার করা হবে।”
কবে কাজ শুরু হবে? সেচমন্ত্রী বলেন, “আমার দফতরের কাজ শেষ। রাজ্য সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি।” সূত্রের খবর, পুজোর আগেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। |