এ বার জলপথে ‘শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দ ট্যুরিস্ট সার্কিট’-এ দক্ষিণেশ্বরকে সংযুক্ত করতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। সেই লক্ষ্যে মন্দিরের কাছে গঙ্গায় একটি জেটি তৈরির জন্য শুক্রবার রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র দক্ষিণেশ্বরে পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির কর্তৃপক্ষ, আদ্যাপীঠের সম্পাদক-সহ সেচ, পরিবহণ দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র জানান, উচ্চ পর্যায়ের কমিটির এই প্রতিনিধিরা এ দিন মন্দিরের শেষ প্রান্তে বালি ব্রিজের নীচের জায়গাটি পরিদর্শন করেন। সিদ্ধান্ত হয়, গঙ্গার এই অংশের নাব্যতা বেশি হওয়ায় সেখানেই জেটি তৈরি করা যেতে পারে। পাশাপাশি, সেতু থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে লঞ্চ ধরা যাবে। এখানেই রয়েছে দক্ষিণেশ্বরের নহবতখানা। লঞ্চ থেকে নেমে ওই বাড়ির পাশ দিয়ে দর্শনার্থীরা গঙ্গার পাড় ধরে হেঁটে মিনিট দুয়েকের মধ্যে মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন বলেও জানান পরিবহণ মন্ত্রী। |
এই নহবতখানায় শ্রীরামকৃষ্ণ প্রতি দিন ভোরে আসতেন। মদনবাবু বলেন, “বাড়িটি আর একটু সংস্কার করে, হেরিটেজ ঘোষণা করে, পুরনো দিনের মতো ভোরে সানাই বাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গঙ্গার পাড়ে গ্যাসবাতি লাগানো হবে। তাতে দক্ষিণেশ্বরের পুরনো পরিবেশ আরও বেশি মাত্রায় ফিরে পাবেন দর্শনার্থীরা।”
কয়েক দিন আগেই বেলুড় মঠে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন জলপথে শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দ-র স্মৃতি বিজড়িত জায়গাকে এক সুতোয় বেঁধে দিতে হবে। সেই মতো ২৮ অগস্ট ‘এম ভি নটরাজ’ নামে একটি লঞ্চ চালু করেন রাজ্য পরিবহণ দফতর। লঞ্চটি ফেয়ারলি থেকে ছেড়ে হাওড়া, বাগবাজার, বরাহনগর, বেলুড় মঠ হয়ে আড়িয়াদহ পর্যন্ত চলছে। মদনবাবু বলেন, “জেটি না থাকায় এখনই লঞ্চটি দক্ষিণেশ্বরে ভিড়তে পারছে না। আপাতত নদী থেকে দক্ষিণেশ্বর দেখতে হচ্ছে। শীঘ্রই দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু হবে। আশা করি আগামী দু’মাসের মধ্যেই এখানে লঞ্চ পরিষেবা চালু হবে।” |
দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির ও দেবত্র এস্টেট-এর পক্ষে কুশল চৌধুরী জানান, ২০০৭-এ তৎকালীন রাজ্য সরকারের তরফে জেটি তৈরির প্রস্তাব আসে। বিষয়টি নিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ কলকাতা হাইকোর্টের মতামত জানতে চায়। এর পরে বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে ২০১২-এর ২ ফেব্রুয়ারি আদালত জানিয়ে দেয়, বালি ব্রিজের নিচে জেটি তৈরি করা যেতে পারে। এর জন্য রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ চুক্তি করতে পারে। কুশলবাবু এ দিন বলেন, “এখন ফের জেটি তৈরির প্রস্তাব এলে আমরা রাজ্য সরকারকে জানাই বিষয়টি অনুমোদিত হয়ে রয়েছে। জায়গাও চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। সেই মতো আজ পরিদর্শন করা হল।” তিনি জানান, নহবতখানার সংস্কার করে গঙ্গার পাড় দিয়ে মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা তৈরির বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের তরফে তাঁদের কাছে প্রস্তাব এলে বিষয়টি মন্দিরের অছি পরিষদের বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
|