প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল মিটতে চলেছে দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু তৈরি হয়ে গেলেও এখনও আলোর মুখ দেখল না কালনার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির হিমঘর। উদ্বোধনের পর থেকে তালাবন্ধই রয়েছে এটি।
অথচ, আট মাস আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানে এসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে এই হিমঘরটির উদ্বোধন করেছিলেন। উদ্বোধনের সময় সরকারি আধিকারিকেরা হিমঘরের বাতানকূল যন্ত্র, সব্জি বাছাই কেন্দ্র-সহ পরিকাঠামো পরীক্ষা করে দেখেন। কিন্তু তার পরেও আজও চালু হয়নি ওই হিমঘর।
কালনার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিটি অবস্থিত কালনা শহর ঘেঁসা জিউধারা এলাকায়। এই বাজার চত্বরের মধ্যে বহু বছর ধরেই বসছে পাইকারী বাজার। শুধু বর্ধমানই নয়, নদিয়া, হুগলি থেকে বহু চাষিই এই বাজারে সব্জি বিক্রি করতে আসেন। রয়েছেন আড়তদার ও ফড়ের দল। কিন্তু বাজারের মধ্যে কোনও হিমঘর না থাকায় বেশিরভাগ কৃষিপণ্যই নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। তাই দীর্ঘদিন ধরেই এই বাজার চত্বরে হিমঘর তৈরির দাবি উঠছিল। |
প্রশাসন সূত্রে খবর, বছর তিনেক আগে হিমঘর তৈরির বিষয়ে উদ্যোগী হয় রাজ্য বিপণন পর্ষদ। বরাদ্দ করা হয় ৯৭ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৭৮ টাকা। হিমঘর তৈরির বরাদ পায় কলকাতার একটি ঠিকেদারি সংস্থা। প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয় কিছুদিনের মধ্যে। কিন্তু হিমঘরের জন্য আলাদা ট্রান্সফর্মার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হিমঘরটি চালু না হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু থাকায় মোটা অঙ্কের বিল আসায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছে।
তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও হিমঘর চালু না হওয়ায় বেজায় ক্ষুদ্ধ চাষিরা। সব্জি চাষি রতন ঘোষ বলেন, “হিমঘরের কাজ শুরু হওয়ার পরে ভেবেছিলাম খুব তাড়াতাড়িই ব্যবহার করতে পারব। কিন্তু সেটা হল না। আমাদের সমস্যা রয়েই গিয়েছে।” হাওড়া থেকে আসা ফড়ে স্বপন তালুকদার বলেন, “লরি নিয়ে সব্জি কিনতে আসি। হিমঘরটি চালু হলে বিভিন্ন বাজার ঘুরে সব্জি মজুত করা যেত। তারপর সেই সব্জি লরি করে অন্য বড় বাজারে বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন প্রকল্পটি আদৌও চালু হবে কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ।”
কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির চেয়ারম্যান তথা মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “সব্জি হিমঘরটি কীভাবে চালু হবে সে ব্যাপারে রাজ্য বিপণন পর্ষদ থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি।” তাঁর আশ্বাস, “কালনার মত রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় হিমঘর তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। সবগুলো একসঙ্গেই সবগুলো চালু হওয়ার কথা।” রাজ্যের মন্ত্রী ও বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে যাওয়ার পরেও কেন ওই হিমঘর চালু হয়নি, সেই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব।”
|