সব্জি চাষে কালনা জেলার অন্যতম কৃষি এলাকা। কিন্তু সব্জি সংরক্ষণের জন্য হিমঘর না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, প্রতিবছরই অনেক সব্জি জলের দরে বিক্রি করে দিতে হয়। তবে মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসখানেকের মধ্যেই জিউধারা এলাকায় একটি হিমঘর চালু হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
কালনার পাঁচটি ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সব্জি চাষ হয় পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকে। এখানকার কয়েক হাজার চাষি কালেখাঁতলা, পারুলিয়া ইত্যাদি পাইকারি বাজারে সব্জি বিক্রি করেন। কালেখাঁতলা বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ ট্রাকবোঝাই সব্জি কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী বাজারগুলিতে যায়। এছাড়াও কালনা শহরের আরএমসি বাজার, ধাত্রীগ্রাম, চকবাজারেও বহু চাষি এসে সব্জি বিক্রি করে যান। চাষিদের দাবি, এই পাইকারি বাজারে বিক্রি হওয়া পণ্য ফড়েরা কিনে নিয়ে গিয়ে রাজ্যের নানা খোলা বাজারে বিক্রি করে। |
এলাকার চাষিরা জানান, সব্জি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই জমি থেকে তোলার কিছুদিনের মধ্যেই তা বিক্রি করে দিতে হয়। তাঁদের দাবি, বর্ষার শুরুতে সব্জি ফলন বেড়ে যায়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই চাষের খরচও ওঠে না। আবার বেশি বৃষ্টিতে সব্জি জমিতে পচে যায়, রোগ সংক্রমণও বাড়ে। ফলে উৎপাদন কমে যায়। স্বাভাবিকভাবেই খোলা বাজারে সব্জির দাম তখন বেড়ে যায়। চাষিদের দাবি, মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় হিমঘর থাকলে চাষি ও সাধারণ মানুষ উভয়েই উপকৃত হবেন। কালেখাঁতলা এলাকার চাষি উপেন বিশ্বাস বলেন, “হিমঘর থাকলে অতিরিক্ত সব্জি সংরক্ষণ করে রাখা যাবে” আর এক চাষি রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “বৃষ্টিতে স্থানীয় সব্জি পচে গেলে অন্য এলাকার উপরে নির্ভর করতে হয় ক্রেতাদের। দামও বেড়ে যায় তখন। হিমঘর থাকলে বাজারগুলিতে ঠিকভাবে মজুত করা পণ্য পৌঁছে দামও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।” একই সুর কৃষি দফতরের কর্তাদেরও গলায়। এই দফতরের এক আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, “মহকুমায় সব্জি হিমঘর করতে গেলে তা পাইকারি বাজার লাগোয়া এলাকায় করতে হবে। তাতে বাজারে এসে দাম না পেলে চাষিরা দ্রুত পণ্য হিমঘরে পৌঁছে দিতে পারবে।” তাঁর দাবি, শুধু হিমঘর নয়, মাঠ থেকে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পণ্য পৌঁছে দিতে বিশেষ গাড়িরও প্রয়োজন রয়েছে।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনার জিউধারা এলাকার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিতে একটি সব্জি হিমঘর তৈরির কাজ চলছে। মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “বিদ্যুতের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি মাস খানেকের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যাবে।” মহকুমার অন্যান্য এলাকায় হিমঘর তৈরির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এলাকার মানুষের উৎসাহ ও জমির সংস্থান মিললেই এ ব্যাপারে পরিকল্পনা পাঠানো হবে।” |