রতুয়া থানার পুলিশ অফিসার সনৎ ঘোষকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুন করার দায়ে বৃহস্পতিবার প্রাক্তন সেনা জওয়ান আনসারুল শেখকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা দিয়েছেন মালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (তৃতীয় কোর্ট) বিভাস পট্টনায়ক। পাশাপাশি, ঘটনার সময় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও মারধর করার অভিযোগে ওই প্রাক্তন সেনা জওয়ানের স্ত্রী মাহামুদা বিবি, পুত্র রাসেল শেখ ও পুত্রবধূ খাতেজা বিবিকে দুই বছর তিন মাসের সাজা দিয়েছেন বিচারক।
বিচারক যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা ঘোষণা করার পরই আদালতের ভিতরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রাক্তন সেনা জওয়ান-সহ অভিযুক্তরা। অন্যদিকে স্বামীর খুনের মামলায় রাজ ঘোষণা হতেই কান্না ভেঙে পড়েছেন হত সনৎবাবুর স্ত্রী মিতা দেবীও। তিনি বলেন, “এই রায়ে আমি খুশি নয়। ওর ফাঁসি হলে শান্তি পেতাম।” সাজাপ্রাপ্ত প্রাক্তন সেনা জওয়ানের আইনজীবি নীলাঞ্জন সরকার বলেছেন, “এ দিনের রায়ের বিরুদ্ধে এ বার আমরা কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানাব।” |
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানানো হয়েছে, এক অপহরণ মামলায় রতুয়া থানার চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন সেনা জওয়ান আনসারুল শেখের দুই ছেলে রাসেল শেখ ও ইব্রাহিম শেখ দীর্ধদিন ধরে ফেরার ছিলেন। ২০১০ সালের ২৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ রতুয়া থানার এএসআই সনৎবাবু ৬ জন কনস্টেবলকে নিয়ে ওই সেনা জওয়ানের ফেরার দুই ছেলেকে ধরতে তাদের বাড়িতে হানা দেন। বাড়ির বাইরে সশস্ত্র পুলিশ কর্মীদের দাঁড় করিয়ে এএসআই সনৎবাবু বাড়ির ভিতরে ঢুকলে সাজাপ্রাপ্তরা তাঁকে ঘরের আটকে দেয়। অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান হাঁসুয়া দিয়ে পুলিশ অফিসার সনৎবাবুকে কুপিয়ে খুন করে সপরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
পুলিশ অফিসারকে খুন করার ঘটনা জানাজানি হতেই বাসিন্দারা ওই বাড়িতে লুঠপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। খুনের ঘটনার চারদিনের মধ্যে আনসারুল শেখ ও তার ছেলে রাসেল শেখ, ইব্রাহিম শেখ, আনসারুল শেখের স্ত্রী মাহামুদা বিবি ও ছেলে রাসেল শেখের স্ত্রী খাতেজা বিবিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। ইব্রাহিম নাবালক হওয়ায় তার মামলা জুভেনাইল আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মামলা চলাকালীন একমাত্র প্রাক্তন সেনা জওয়ানের স্ত্রী ও তাঁর পুত্রবধূ জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।
সাড়ে তিন বছর ধরে মামলা চলার পর গত ২৭ অগস্ট বিচারক ওই খুনের অভিযোগে আনসারুল শেখকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তার স্ত্রী মাহাবুবা বিবি, ছেলে রাসেল শেখ, পুত্রবধূ খাতেজা বিবি পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। সরকারি আইনজীবী মহম্মদ ইকবাল আলম আফজা জানিয়েছেন, মামলায় ২৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন। আনসারুল শেখকে যাবজ্জীবন কারা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। বাকিদের ২ বছর তিন মাস কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
|