এক পুলিশ অফিসারকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগে এক প্রাক্তন সেনা জওয়ানকে মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত করল মালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (তৃতীয় কোর্ট) বিভাস পট্টনায়ক। পাশাপাশি, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও মারধরের অভিযোগে প্রাক্তন সেনা জওয়ানের স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। আগামী ২৯ অগস্ট সাজা ঘোষণা করবে আদালত।
আদালত সূত্রের খবর, বিচারক দোষী সাব্যস্ত ঘোষণার পরেই আদালতের ভিতরেই কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই প্রাক্তন সেনা জওয়ান, তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূ। ওই জওয়ান বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, “হুজুর আমার আয়ের উপর গোটা সংসার চলে। আমি নির্দোষ। আমাকে ছেড়ে দিন।” আদালতের নির্দেশের একই ভাবে কান্নায় ভেঙে পড়েন খুন হওয়া পুলিশ অফিসার সনৎ ঘোষের স্ত্রী মিতা ঘোষ। তিনি বলেন, “গত চার বছর ধরে এই দিনটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অভিযুক্ত প্রত্যেকের কঠোর সাজা হওয়া দরকার। আমরা আদালতের চূড়ান্ত নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছি।” তবে অভিযুক্তদের আইনজীবী নীলাঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, আগামী ২৯ অগষ্ট রায় শোনার পর আমরা কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানাব। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি অপহরণের মামলায় রতুয়া থানার চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন সেনা জওয়ান আনসারুল শেখের দুই ছেলে রাসেল শেখ ও ইব্রাহিম শেখ দীর্ধদিন ধরে ফেরার ছিলেন। ২০১০ সালের ২৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ রতুয়া থানায় কর্তব্যরত সহকারি সাব ইন্সপেক্টর সনৎ ঘোষ ৬ জন কনস্টেবলকে নিয়ে ওই প্রাক্তন সেনা জওয়ানের বাড়িতে অভিযুক্তদের ধরতে হানা দিয়েছিল। বাড়ির বাইরে সশস্ত্র পুলিশ কর্মীদের দাঁড় করিয়ে সনৎবাবু বাড়ির ভিতরে ঢোকেন। অভিযোগ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান ও তার স্ত্রী মাহামুদা বিবি, দুই ছেলে রাসেল শেখ, ইব্রাহিম শেখ, পুত্রবধূ খাতেজা বিবি তাঁকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। এরপর অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান হাঁসুয়া দিয়ে পুলিশ অফিসার সনৎবাবুক্যে কুপিয়ে খুন করে সপরিবারে পালিয়ে যান। ঘটনাটি চাউর হতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওই বাড়িটিতে লুঠপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। খুনের ঘটনার চারদিনের মধ্যে পুলিশ অভিযুক্ত আনসারুল শেখ, রাসেল শেখ, ইব্রাহিম শেখ, আনসারুল শেখের স্ত্রী মাহামুদা বিবি ও রাসেল শেখের স্ত্রী খাতেজা বিবিকে গ্রেফতার করে। ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। ইব্রাহিম শেখ নাবালক হওয়ায় তার মামলা পুলিশ জুভেনাইল আদালতে পাঠিয়ে দেয়। সেনা জওয়ান আনসারুল শেখ ও তার ছেলে রাসেল শেখকে আদালত জামিন দেয়নি। বাকিরা অবশ্য জামিন পান। সাড়ে চার বছর ধরে মামলা চলার পর এদিন আদালত প্রাক্তন সেনা জওয়ান আনসারুল শেখকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। পাশাপাশি প্রাক্তন সেনা জওয়ানের স্ত্রী মাহাবুবা বিবি, ছেলে রাসেল শেখ, পুত্রবধূ খাতেজা বিবিকে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। সরকারি আইনজীবী ইকবাল আলম আফজা বলেন, “মামলায় ২৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন।” |