টুকলির অভিযোগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইটাহারের ডক্টর মেঘনাদ সাহা কলেজ। সেই ঘটনার তদন্তে এসে বৃহস্পতিবার ফের হাতেনাতে টুকলি করতে দেখে ছ’জন পড়ুয়ার পরীক্ষাই বাতিল করে দিতে হল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের।
মঙ্গলবার টোকাটুকির দায়ে এই কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর খাতা কেড়ে নেওয়ায় অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়, বাংলার শিক্ষক সুদেবকুমার রায়, রসায়নের শিক্ষিকা সেঁজুতি দে ও শিক্ষাকর্মী জাফর সাদেক প্রহৃত হন। অভিযোগ ওঠে ওই ছাত্রী-সহ তাঁর স্বামী জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য গৌতম পাল, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা বাবুসোনা মোহান্ত সহ তাঁদের সাত-আট জন অনুগামীর বিরুদ্ধে। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। জামিন অযোগ্য ধারায় সেই ঘটনার মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এ দিন কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, “ইটাহারের কলেজের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে আমরা কলেজে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা বরদাস্ত করব না। রাজ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে বলেছি, দরকার হলে সেখানে প্রতিনিধিদের পাঠান।” |
বৃহস্পতিবার কলেজে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল। বেলা ১১টা থেকে দ্বিতীয় বর্ষের পাসকোর্সের পড়ুয়াদের ঐচ্ছিক বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা শুরুর কথা। কলেজের কোনও শিক্ষক ও শিক্ষিকাই পরিদর্শকের দায়িত্ব নিতে চাননি বলে কিছু ক্ষণ দেরি করে পরীক্ষা শুরু হয়। নিগ্রহের প্রতিবাদে কালো ব্যাজ পরে শিক্ষকরা বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে তাঁরা পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ও খাতা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এর আধ ঘণ্টা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সনাতন দাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল কলেজে পৌঁছন। তাঁরাই পরীক্ষা নেওয়ার কাজ শুরু করেন। সেই সময়ই সনাতনবাবু ছয় পরীক্ষার্থীকে টুকলি করার অভিযোগে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে সনাতনবাবুর তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কিও হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ প্রসঙ্গে সনাতনবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই কলেজে গণটোকাটুকি চলছে। শিক্ষকেরা আতঙ্কে।” সনাতনবাবুর সঙ্গে যারা তর্কাতর্কি করল, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্য তিনি অভিযোগ করেননি। তাঁর বক্তব্য, “সন্তানতুল্য কিছু পরীক্ষার্থী টুকলি করতে গিয়ে ধরা পড়ায় আমার সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে ফেলেছে। তাদের ভবিষ্যতের স্বার্থে কোথাও অভিযোগ করতে চাই না।”
এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে দুপুর ২টো থেকে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের সমাজবিদ্যার দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার দাবিতে সেই পরীক্ষাও নিতে অস্বীকার করেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কার্যকরী সভাপতি ইন্দ্রনীল আচার্য তখন কলেজে গিয়ে হাতজোড় করে অধ্যক্ষা স্বপ্নাদেবী ও টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক আলাউদ্দিন শেখ সহ সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাকে পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করেন। ইন্দ্রনীলবাবুকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে ভুল বুঝে পরীক্ষা না নিয়ে পড়ুয়াদের ক্ষতি করবেন না। কলেজে যা ঘটেছে, তার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।” এর পরই টিচার্স কাউন্সিলের বৈঠক বসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে ওই কলেজের শিক্ষকেরা স্বপ্নাদেবীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাঁদের নিগ্রহে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থার দাবি জানান। পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের রোজই উপস্থিত থাকার দাবিও জানান। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে দ্বিতীয়ার্ধের পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়।
যে ছাত্রীর টুকলি আটকানো নিয়ে গণ্ডগোলের সূচনা, তিনি এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে পরীক্ষা দিতে কলেজে যান। তাঁর দাবি, “আমি নকল করিনি। সিপিআই নেত্রী স্বপ্নাদেবী ও শিক্ষিকা সেঁজুতিদেবী রাজনৈতিক চক্রান্ত করে শিক্ষক সুদেববাবু ও শিক্ষাকর্মী জাফর সাহেবকে দিয়ে আমার শ্লীলতাহানি করিয়েছেন।” এ দিন পুরুলিয়ার বরাবাজারের বিক্রম টুডু মেমোরিয়াল কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে এক যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। তবে সেই নেতা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর মন্তব্য, “রায়গঞ্জে বেল, মাজদিয়ায় জেল সেই তখন থেকেই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।”
|