|
|
|
|
মমতার হুমকি, দার্জিলিঙে পোস্টার, ফের চাপে গুরুঙ্গ |
কিশোর সাহা ও রেজা প্রধান • দার্জিলিং |
ফের ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণে জানিয়েছেন, আগামী ২ সেপ্টেম্বর তিনি পাহাড়ে যাচ্ছেন। মহাকরণে দাঁড়িয়েই এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মোর্চা নেতৃত্বকে লক্ষ করে বলেন, “বনধ প্রত্যাহার করুন। কোর্টের নির্দেশ অমান্য করবেন না। মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে দিন।” ৩ সেপ্টেম্বর তিনি লেপচাদের অনুষ্ঠানে কালিম্পঙে থাকবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গেই এ দিন মোর্চা সভাপতির গুরুঙ্গের খাসতালুক দার্জিলিং ও কালিম্পঙে সরাসরি বিমল গুরুঙ্গকে আক্রমণ করেই দু’টো পোস্টার পড়েছে। ‘জনতা’র নাম করে নেপালিতে হাতে লেখা ওই পোস্টারে প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘কেন বিমল গুরুঙ্গ নিজের ছেলেদের বাইরে পাঠিয়ে পাহাড়ের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন?’ প্রশ্ন তোলা হয়েছে, নানা এলাকায় জিটিএ সদস্যরা গ্রেফতারের পরে গুরুঙ্গ মুখ খোলেননি অথচ বিনয় তামাঙ্গকে পুলিশ ধরতেই কেন অনির্দিষ্টকালের বনধ ডাকা হল?
এ দিন থেকেই মোর্চার অস্বস্তি বাড়িয়ে কালিম্পঙে থানার অদূরে ত্রিকোণ পার্কের সামনে লেপচা সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর দাবিতে ধর্না শুরু হয়েছে। লেপচা সংগঠনের অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রীকে সংবধর্না জানানোর অনুষ্ঠান থেকে বিরত রাখার জন্যে যে ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে, তাতে অশান্তির আশঙ্কা বাড়ছে। সে জন্য লেপচা সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে কালিম্পঙের অনেক সাধারণ মানুষও ধর্নায় সামিল হওয়ায় খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে মোর্চা। যা মোর্চা নেতাদের একাংশের বক্তব্যে অনেকের কাছেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অভিযোগ করেন, তেলঙ্গানার নাম নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দাজির্লিংয়ে অশান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “উন্নয়নের কাজ না-করে দার্জিলিংয়ে গোলমাল সৃষ্টির রাজনৈতিক ইন্ধন জোগানো হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “লোকসভা ভোটের আগে সব সময়ই পাহাড়ের একটা আসনের জন্য কংগ্রেস-বিজেপি রাজনীতি করে।” মুখ্যমন্ত্রীর মতে, গত ২০-২৫ বছরে কোনও উন্নয়ন হয়নি পাহাড়ে। কিন্তু এখন ভোটের মাধ্যমে পাহাড়ের স্থানীয় প্রশাসন জিটিএ গঠন করা হলেও ইচ্ছা করে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “জিটিএ-কে শতকরা ৯৮ ভাগ কাজ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। জমি, ১০০ দিনের কাজ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রাম ও নগরোন্নয়ন সব-কিছুর অধিকার জিটিএ পেয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে এটা ঠিক নয়।” মমতার কথায়, “পাহাড়বাসীকে আমি ভালবাসি। মানুষকে চলাফেরায় বাধা দেওয়া বা রোগীর গাড়ির পথ আটকানোর প্রবণতা ঠিক নয়।”
পাহাড়ে জিটিএ প্রশাসনকে কী কী অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা মনে করিয়ে মমতা বলেন, “গোর্খাল্যান্ড নামটা অবধি ওঁদের দেওয়া হয়েছে। শুধু রাজ্যটাই যা ভাগ হয়নি। সেটা কী করে হবে? পাহাড় বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমি বেঁচে থাকতে বাংলা কিছুতেই ভাগ হতে দেব না।” পাহাড়কে আলাদা করার দাবিতে আন্দোলন বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন জিটিএ-র নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও প্রশাসনের কাজে ফিরতে অনুরোধ করেন। মমতার কথায়, “আমার হাতে জিটিএ-র মনোনীত প্রতিনিধিরা ছিলেন। আমায় তাদের দিয়েই জিটিএ চালাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি বলেই সেটা করিনি।”
এ দিন সকালে দার্জিলিঙের চকবাজার ও কালিম্পঙের ডম্বর চকে ওই পোস্টার দেখা যায়। সেই খবর চাউর হতেই দলে দলে লোকজন তা দেখতে ভিড় করেন। দার্জিলিঙে পোস্টারটি ছিঁড়ে ফেলা হয়। কালিম্পঙের পোস্টার অবশ্য বেলা পর্যন্ত ছিল। পরে কেউ তা খুলে নেয়। সকালে ছোটদের নিয়ে মোর্চার পূর্ব নির্ধারিত মিছিল শুরু হলেও তা অন্যান্য দিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।
এর পরেই মোর্চার সহকারি সম্পাদক জ্যোতি কুমার রাই অভিযোগ করেন, “এ সব পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দলগুলির কাজ। তারা পাহাড়ে সমস্যা তৈরি করতে এ সব মনগড়া প্রশ্ন তুলে পোস্টার সাঁটাচ্ছে। আমাদের দলের সভাপতির ছেলেরা বিদেশে থাকে না। তাঁরা নানা পেশায় যুক্ত থাকার সুবাদে পাহাড়ের বাইরে রয়েছেন।” তাঁর সংযোজন, “যে ছেলেমেয়েরা মিছিলে আসছে, তারা আমাদের নিজের ছেলেময়ের মতো। কাউকে জোর করে আনার প্রশ্ন নেই।” পাশাপাশি, বিনয় তামাঙ্গকে গ্রেফতারের পরে বন্ধ ডাকা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেই ব্যাপারে মোর্চার সহকারি সম্পাদকের যুক্তি, “বিনয় তামাঙ্গকে গ্রেফতারের পরে বন্ধ ডাকা হয়েছে এমন নয়। আসলে সংখ্যাটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাওয়ায় বন্ধ ডাকতে বাধ্য হয়েছি।” সেই সঙ্গে লেপচাদের ধর্না প্রসঙ্গে মোর্চার সহকারি সম্পাদকের কটাক্ষ, “পাহাড়ে শান্তি আছে। যেখান থেকে সিআরপি পাঠিয়ে, পুলিশ দিয়ে অশান্তি হচ্ছে, সেই মহাকরণের সামনে ওঁরা ধর্নায় বসুন।”
যে পোস্টার পড়েছে তা পাহাড়ের মানুষের মনোভাবের প্রতিফলন নয় বলে দাবি করলেও বন্ধ শিথিল করার বিষয়টি কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেননি মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চার সহকারি সম্পাদক বলেন, “স্কুল-কলেজ অফিস খোলা রেখে আন্দোলন হবে নাকি কিছুদিনের জন্য বন্ধ শিথিল হবে এ সব নিয়ে সর্বদল বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখানে পরের কর্মসূচি ঠিক হবে।”
প্রসঙ্গত, আজ, শুক্রবার মোর্চার উদ্যোগে সর্বদল বৈঠক হবে দার্জিলিঙে। সেখানে সদ্যগঠিত গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির প্রতিনিধিরা থাকবেন। গত বুধবার পরের আন্দোলন কেমন হওয়া
উচিত তা নিয়ে যে ১২৭টি লিখিত প্রস্তাব পড়েছে তা আলোচনা
করে পদক্ষেপ কর হবে বলে মোর্চা নেতারা জানিয়েছেন।
এ দিকে, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, “রাজ্য ও মোর্চা উভয়পক্ষকে জেদাজেদির রাস্তা ছেড়ে আলোচনায় জোর দিতে হবে। পাহাড়ে যাতে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।” পাশাপাশি, ধৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবিও করেছেন তিনি।
রাজ্যের তরফে আজ, শুক্রবার থেকে পাহাড়ের আরও বেশি জায়গায় চাল-ডাল-আনাজ বিলির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। নানা রুটে সরকারি বাসের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথাও জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ছোট গাড়িও চালানো হবে পুলিশ পাহারায়।
|
পুরনো খবর: আন্দোলন কোন পথে, মোর্চার প্রশ্ন সব শাখাকে |
|
|
|
|
|