দেড় মাস পরে স্কুলে এলেন তিনি। সারা দিন নিজের কাজ করলেন। ক্লাসও নিলেন।
খাতড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন হাজরা স্কুলেরই তিন সহ-শিক্ষকের বিরুদ্ধে হেনস্থা করার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। মঙ্গলবার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ওই স্কুল যাতে ঠিকমতো চলে, তার জন্য জেলা স্কুল পরিদর্শককে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর প্রধান শিক্ষক যাতে বৃহস্পতিবার স্কুলে যোগ দিয়ে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে ওসি-কে। যদিও এ দিন চিত্তরঞ্জনবাবু যখন স্কুলে ঢোকেন তখন পুলিশ তাঁর সঙ্গে ছিল না। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “আদালতের নির্দেশ এখনও পাইনি। তবে শুধু ওই প্রধান শিক্ষক নয়, যে কেউ নিরাপত্তা চাইলে আমরা অবশ্যই তাঁকে নিরাপত্তা দিই।”
গত ১৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে স্কুল ছেড়েছিলেন চিত্তরঞ্জনবাবু। তারপর তিনি কলকাতা হাইকোর্টে শাসক দলের সমর্থক, স্কুলেরই তিন সহ-শিক্ষক সুবীর মণ্ডল, পার্থসারথি গড়াই ও গুণধর ঘোষের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেন। ওই তিন শিক্ষক তাঁকে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতী আখ্যা দিয়ে পরিচালন সমিতির কাছে শাস্তির দাবি করেছেন বলেও জানিয়েছিলেন। তাঁদের জন্যই তিনি স্কুলে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন চিত্তরঞ্জনবাবু। ওই ঘটনার সিআইডি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়। তার পরেই হাইকোর্ট চিত্তরঞ্জনবাবু যাতে নির্বিঘ্নে স্কুলে যেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়। |
এ দিন চিত্তরঞ্জনবাবু সকাল সওয়া দশটা নাগাদ নিজের অফিসে ঢোকার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন সহকারী প্রধানশিক্ষক পীযূষ রায়-সহ শিক্ষকদের একাংশ। এ দিন চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও স্কুলের পরিবেশ ঠিক না থাকায় আমি ছুটি নিয়েছিলাম। আমি চাই সবাই নিজের নিজের কাজ করি। আর একটা বছর পরেই আমি অবসর নেব। কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধে যেতে চাই না।” পীযূষবাবু অবশ্য বলেন, “স্কুলের পরিবেশ ঠিকই রয়েছে। প্রধানশিক্ষকের অনুপস্থিতিতে আমরা কিছুটা উদ্বেগে ছিলাম। এখন চাপমুক্ত হলাম।” ওই তিন শিক্ষকের সঙ্গে অবশ্য এ দিন চিত্তরঞ্জনবাবুর কথা হয়নি। পার্থসারথিবাবুর অভিযোগ, “হাজিরা খাতায় সই করতে গিয়ে প্রধানশিক্ষক কেমন আছে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি জবাব দেননি।” পার্থসারথিবাবু ও গুণময়বাবু দাবি করেন, “আমরা নিয়মিত ঠিক সময়ে স্কুলে আসি, ক্লাস নিই। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের সপ্তাহে ১২টি ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি চারটি ক্লাস নেন না। আমরা পরিচালন সমিতিতে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর অনেক অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করেছি। সেই আক্রোশেই তিনি আমাদের তিন জনের নামে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।”
তৃণমূল পরিচালিত এই স্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদক শুভেন্দু দত্ত দাবি করেন, “চিকিৎসার জন্য প্রধানশিক্ষক ২৭ অগস্ট পর্যন্ত ছুটি নিয়েছিলেন। শিক্ষকদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও তাঁকে হেনস্থা করার অভিযোগ ঠিক নয়।”
|