প্রকল্পে স্থায়ী চাকরি না হলে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অনিচ্ছুক জমিদাতারা। প্রশাসনের ক্ষতিপূরণ নিতেও অস্বীকার করেছেন। এই অবস্থায় পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি তুললেন স্বেচ্ছায় জমি দেওয়া বাসিন্দারা।
এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে নির্মীয়মাণ ওই প্রকল্পের ‘ওয়াটার করিডর’ (বিদ্যুৎকেন্দ্রে জল আনার পাইপলাইন) নিয়ে উদ্ভুত সমস্যা দ্রুত মেটানোর আর্জিতে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দিলেন জমিদাতা ও এলাকাবাসীর বড় অংশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জমিহারা এবং ওই প্রকল্পে বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকা পাঁচশোরও বেশি লোকের সই সংবলিত দাবিপত্র তুলে দেওয়া হয় মহকুমাশাসকের হাতে। তাঁদের এই উদ্যোগে কিছুটা হলেও চাপে পড়লেন কাজে বাধা দেওয়ার গোঁ ধরে থাকা অনিচ্ছুক জমির মালিকেরা। ইচ্ছুক জমিদাতা রিন্টু সিংহ, হাকিম শেখ, সুভাষ বাউরি, অশোক গোপরা বলেন, “ডিভিসি-র এই প্রকল্পের ফলে রঘুনাথপুরে আর্থ সামাজিক চেহারা বদলে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা সকলেই চাইছি শিল্পায়নের স্বার্থে প্রশাসন কার্যকরী ব্যবস্থা নিক।”
‘ওয়াটার করিডর’ তৈরিতে অনিচ্ছুক জমি মালিকদের বিরোধিতায় ওই প্রকল্প ঘিরেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। ওই জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা নিতেও অস্বীকার করেছেন। পুলিশ মোতায়েন করে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অনিচ্ছুকদের জমিতে জোর করে কাজ করানো যাবে না, রাজ্য সরকারের এই মনোভাবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে দলমত নির্বিশেষ এলাকার প্রকল্পের অনিশ্চয়তা কাটানোর দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকারই বাসিন্দাদের একাংশ। জমিহারা তথা নিতুড়িয়া ব্লকের তৃণমূল নেতা নারায়ণ মুর্মুও বলেন, “এলাকার উন্নয়নের আশায় আমরা জমি দিয়েছিলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই আশা ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম। আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধান চাই।”
এ দিনই পুরুলিয়া শহরে সার্কিট হাউসে রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে ‘ওয়াটার করিডর’ সমস্যা নিয়ে বৈঠক করেন ডিভিসি-র মুখ্য বাস্তুকার (প্রজেক্ট হেড) দেবাশিস মিত্র। ছিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী। দেবাশিসবাবু পরে বলেন “একটি ইউনিট উৎপাদন করতে সক্ষম। কিন্তু জলের সমস্যা না মেটায় দৈনিক ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। এই বিষয়টিও মন্ত্রীকে জানিয়েছি।” শান্তিরামবাবুর কথায়, “ফের অনিচ্ছুক জমি মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
যদিও ঘটনা হল, এই প্রকল্পের প্রতি জমিহারাদের বড় অংশের ইতিবাচক মনোভাবের আঁচ পেয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতায় গিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বর কাছে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। তিনি বলেন, “দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে জানিয়েছি, সামান্য কারণে ডিভিসি-র প্রকল্প ঘিরে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই সমস্যা মেটানো সম্ভব। মুকুলবাবুও জানিয়েছেন ওই প্রকল্পের সমস্যা দ্রুত মেটানো হবে।” দল সূত্রের খবর, বুধবারই এক শীর্ষ তৃণমূল নেতা জেলাশাসককে ফোন করে এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
|