পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কে হবেনএই নিয়ে জামবনি ব্লক তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল চরমে উঠেছে। আজ, শুক্রবার পঞ্চায়েত সমিতির নতুন বোর্ড গঠন ও সভাপতি নির্বাচন ঘিরে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালের আশঙ্কায় কড়া পুলিশি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন।
জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ২০টি। সব ক’টি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সমীর ধল এ বার পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। সমীরবাবুকে জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করার দাবি তুলেছেন তাঁর অনুগামীরা। সমীরবাবু দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। অন্য দিকে, জামবনি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জগদীশ মাহাতো ও ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদারা চাইছেন, তাঁদের গোষ্ঠীর নির্বাচিত মহিলা প্রার্থী সুষমা বেরাকে সভাপতি করা হোক। জগদীশবাবুরা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার অনুগামী। জামবনি ব্লক তৃণমূল সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরেই এই নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল বিরোধ চলছে। সুষমাদেবীকে যাতে কোনও ভাবেই সভাপতি করা না-হয় সে জন্য আসরে নেমেছেন সমীরবাবুর অনুগামীরা। পক্ষান্তরে, সমীরবাবুর যাত্রাভঙ্গ করতে তৃণমূলের নির্বাচিত ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২ জনকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে জগদীশবাবু-দেবনাথবাবু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। জগদীশবাবুর অনুগামীদের পাল্টা অভিযোগ, ওই ১২ জনকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে দেবনাথবাবুকে একটি গোপন ডেরায় বেআইনি ভাবে আটক করে রাখেন সমীরবাবুর অনুগামীরা। গত তিন দিন ধরে দেবনাথবাবুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বুধবার জামবনি থানায় দেবনাথবাবুর ভাই লিখিত অভিযোগ করে জানান, তাঁর দাদাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তৃণমূলের জামবনি ব্লক সভাপতি জগদীশ মাহাতোরও অভিযোগ, “দলেরই কিছু লোকজন দেবনাথকে আটক করে রেখেছে। পুলিশ-প্রশাসন নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। জেলা নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছেন না।”
সমস্যা মেটানোর জন্য বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে ছিলেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব ও জেলা যুব সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতো। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত ২০ জন প্রার্থীকে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সমীরবাবু-সহ ৮ জন নির্বাচিত প্রার্থী বৈঠকে এলেও দলের জামবনি ব্লক সভাপতি জগদীশ মাহাতো-সহ বাকি ১২ জন নির্বাচিত প্রার্থী বৈঠকে আসেননি। ফলে, বৈঠক ভেস্তে যায়। বৈঠক চলাকালীন রাজবাড়ির সামনে দেবনাথবাবুর সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশে তাঁদের হটিয়ে দেয়। নির্বাচিত ১২ জন প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এ দিন বিকেলে জামবনিতে সমীরবাবু ও তাঁর সমর্থকেরা মিছিল করেন। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “দেবনাথকে কেউ বা কারা তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছে বলে শুনেছি।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “নির্বাচিত কয়েকজন প্রার্থীর খোঁজ মিলছে না। তাঁরা কে কোথায় আছেন, তা দলীয় তরফে ও প্রশাসনিক স্তরে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। সমস্যা মেটার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। তবে দেবনাথবাবুর নিখোঁজ থাকার খবর ঠিক নয়।” |