যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে সোমদেব দেববর্মনের লাগল আট ঘণ্টা! না, তা সত্ত্বেও ম্যারাথন প্রথম রাউন্ডটা টেনিসের গ্র্যান্ড স্ল্যামে কোনও রেকর্ড নয়। কারণ নিজের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৩০ ধাপ উঁচুতে থাকা স্লোভাকিয়ার লুকাস লাক্কো-র বিরুদ্ধে পেশাদার ট্যুরে প্রথম সাক্ষাতে বিশ্বের ১১৪ নম্বর ভারতীয় টেনিস প্লেয়ার পাঁচ সেটে ৪-৬, ৬-১, ৬-২, ৪-৬, ৬-৪ যে ম্যাচটা জেতেন সেটার মেয়াদ ছিল তিন ঘণ্টা এগারো মিনিট। মাঝে সোমদেব ২-১ সেটে এগিয়ে থাকার সময় বৃষ্টিতে চার ঘণ্টারও বেশি ম্যাচটা বন্ধ ছিল ফ্লাশিং মেডোর তেরো নম্বর কোর্টে। সেই ২০০৯-এ জীবনের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে দ্বিতীয় রাউন্ডে হারার পর ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের এক নম্বর সিঙ্গলস তারকা এ বারই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেন। মাঝের তিন বছর প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে গিয়েছিলেন। গ্র্যান্ড স্ল্যামে এখনও পর্যন্ত তৃতীয় রাউন্ডের মুখ না দেখা আঠাশ বছরের সোমদেব এ বারও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁর সামনে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ২০ নম্বর ইতালির আন্দ্রেয়া সেপ্পি। যদিও এ বার ফ্লাশিং মেডোয় কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তিনটে ম্যাচ জেতার পর মূলপর্বেও নিজের প্রথম ম্যাচে সোমদেব উঁচুদরের টেনিসের নিদর্শন রেখেছেন। লুকাসের বিরুদ্ধে নেটের সামনে তিরানব্বই শতাংশ সফল তিনি। আনফোর্সড এরর-ও বিপক্ষের চেয়ে অর্ধেক কম ছিল তাঁর (৩৬-৭৩)। উইনার মারায় খানিকটা পিছিয়ে (৪৭-৩০) থাকলেও বিগ পয়েন্টে বেশি জেতেন সোমদেবই।
“অবিশ্বাস্য কঠিন ম্যাচটায় যে রকম খেলেছি তাতে আমি দারুণ খুশি,” জিতে উঠে বলেন সোমদেব। সঙ্গে যোগ করেছেন, “কোর্টে যত কম সময় থাকা যায় ততই ভাল। তবে জীবনে যেটা ঘটছে তার ফায়দা তুলতে পারাটাও লাভের। গত সপ্তাহে এখানেই তিনটে কোয়ালিফাইং ম্যাচ জেতায় ফ্লাশিং মেডোর কোর্টের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে আমার ভাল ধারণা গড়ে উঠেছে। দারুণ ম্যাচ কন্ডিশনে আছি। যার সুবিধে আশা করি দ্বিতীয় রাউন্ডেও নিতে পারব।” |
তবে ম্যাচ চলাকালীন বৃষ্টিতে লকাররুমে অতক্ষণ কাটাতে হওয়ায় বিরক্ত সোমদেব। “আবহাওয়াটা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে জানি। তা সত্ত্বেও ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যের। ম্যাচের মধ্যিখানে লকাররুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মেরে, তাস খেলে কাটাতে মোটেই ভাল লাগে না। ও সব এমনি সময় ভাল। আমি তো দু’বার লাঞ্চই খেয়ে ফেললাম বসে থাকতে থাকতে!” গতবারের চ্যাম্পিয়ন অ্যান্ডি মারে তো বৃষ্টির ধাক্কায় এ বারের যুক্তরাষ্ট্র-অভিযান শুরুই করতে বাধ্য হন গতকাল রাত দশটায়। ৭৭ বছর অপেক্ষার পর প্রথম ব্রিটিশ পুরুষ হিসেবে মাসকয়েক আগে ঐতিহাসিক উইম্বলডনজয়ী মারে নিউইয়র্কে প্রথম রাউন্ডে তেত্রিশ বছরের অভিজ্ঞ ফরাসি মাইকেল লদ্রাকে সহজে ৬-২, ৬-৪, ৬-৩ হারিয়েও তাই খুশি নন। বলেছেন, “কোনও টুর্নামেন্ট শুরু করার পক্ষে রাত দশটা-টা বোধহয় খুব একটা সঠিক সময় নয়! প্রথম রাউন্ড সব সময়ই যে কোনও প্লেয়ারের কাছে খুব নার্ভাস ম্যাচ। যখন-তখন অঘটন ঘটে যেতে পারে।” আবার এ বারের উইম্বলডনের ইতিহাসে দীর্ঘতম সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলা দেল পোত্রো যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে প্রথম রাউন্ডেই সওয়া চার ঘণ্টার ম্যারাথন ম্যাচ খেললেন। গার্সিয়া লোপেজকে ৬-৩, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৪, ৭-৬ (৯-৭) হারাতে গিয়ে। সেটা অবশ্য বৃষ্টির জন্য নয়। বরং আর্জেন্তিনা ও স্পেনের প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বারবার উত্তপ্ত কথা চালাচালির কারণে। গার্সিয়ার একাধিক বার ম্যাচ থামিয়ে কোর্টের ভেতর ডাক্তার ডাকিয়ে শুশ্রূষা নেওয়া প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ দেল পোত্রো ম্যাচ শেষে বলে দেন, “আমি ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম, ভাই একটা ম্যাচে ঠিক কত বার কোর্টে ডাক্তার দেখানো যায় বলবে কি? আমি এত বছর টেনিস খেলেও ঠিক জানি না!”
আর তৃতীয় দিনের অঘটন বলতে বর্ষীয়ান ভেনাস উইলিয়ামসের সিঙ্গলস থেকে দ্বিতীয় ম্যাচেই বিদায়, সানিয়া মির্জার ডাবলস পার্টনারের কাছে হেরে। তেত্রিশ বছরের ভেনাসকে ৬-৩, ২-৬, ৭-৬ (৭-৫) হারিয়ে সানিয়া-সঙ্গী চিনের জেং জি-র মন্তব্য, “অবিশ্বাস্য!”
|