বার্ড ফ্লু আতঙ্ক ভারতীয় শিবিরে
ব হাউটন, বার্ড ফ্লু আর প্র্যাক্টিসের মাঠ সমস্যা— নেপালে সাফ কাপ খেলতে এসে ত্র্যহস্পর্শে জেরবার উইম কোভারম্যান্স!
বব হাউটন না, কোভারম্যান্সজাতীয় দল নিয়ে কে বেশি সফল? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। কোভারম্যান্সের দল শেষ তিনটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ম্যাচে হারের পর যা আরও জোরালো হয়েছে। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো হাউটনের ঘনিষ্ঠ কিছু ফুটবলার আবার তুলছেন নানা প্রশ্ন।
কোভারম্যান্স: বড় চ্যালেঞ্জের
সামনে ভারতীয় কোচ।
সম্ভবত সে জন্যই হাই প্রোফাইল প্রাক্তন সাহেব কোচের ‘ভূত’ এখানে আসার আগে থেকেই তাড়া করতে শুরু করেছে ডাচ কোচকে। সুনীল ছেত্রী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়ে সাফ কাপ জিততে পারলে, এক দৌড়ে দু’টো হাউটন-হার্ডল পেরোতে পারবেন ডাচ কোচ।
এক) দেশের বাইরে কোনও ট্রফি জেতেননি হাউটন। ভাইচুংদের নিয়ে তাঁর যা সাফল্য সব দেশে। নেপালে এ বার সাফ জিততে পারলে সেটা হবে উইমের গর্বের পালক।
দুই) দু’বার নেহরু কাপ জিতেছেন, এ এফ সি চ্যালেঞ্জার্স জিতেছেন হাউটন। কিন্তু জেতেননি সাফ কাপ। ২০০৮-এ সাফে ফাইনালে উঠেও শ্রীলঙ্কায় ব্যর্থ হয়েছিলেন ব্রিটিশ কোচ। এ বার ট্রফি জিতলে তাই হাউটনকে পিছনে ফেলে দিতে পারবেন কোভারম্যান্স।
সে জন্যই কাঠমাণ্ডুতে এসে ট্রফিকে পাখির চোখ দেখছেন ডাচ কোচ। হাউটনের সঙ্গে তাঁর তুলনা নিয়ে অবশ্য কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইছেন না তিনি। মেল বা এস এম এস পাঠালে লিখে দিচ্ছেন, ‘নো কমেন্টস’। এ বার তিনি এতটাই সিরিয়াস যে ওয়ান টু ওয়ান সাক্ষাৎকারের সব অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছেন। অথচ নেহরু কাপের আগেও যা অকাতরে এবং আগ্রহভরে দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু এ বার চ্যাম্পিয়ন হবে কে? অনুশীলনের পর এই প্রশ্নে দেখিয়েছেন, ভারতীয় ফুটবলারদের বুকের লোগোকে। “ওটার দিকে দেখুন। প্রতিটি ম্যাচই কঠিন। প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল,” বলে দিয়েছেন নেহরু কাপ জয়ী ভারতীয় কোচ।
কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে তাঁর সমস্যা শুধু আফগানিস্তান, মলদ্বীপ বা পাকিস্তান নয়--বাধা মাঠের বাইরের নানা ঘটনাও।
যেমন বার্ড ফ্লু। কাঠমাণ্ডুতে এই মূহূর্তে মুরগির মাংস বা ডিম বিক্রি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ভারতীয় পযর্টকদের রসনা-তৃপ্তির জন্য যে লুকিয়ে-চুরিয়ে হোটেলগুলো মাংস বিক্রি করছে না, তা নয়। কিন্তু ভারতীয় টিম হোটেলে সন্দীপ নন্দী-সুব্রত পাল, লেনিদের জন্য ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞামুরগির মাংস বা ডিম খাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। যা মনে করাচ্ছে কয়েক বছর আগের কলকাতার স্মৃতিকে। মুরগির মড়ক লাগার পর ময়দানেও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল বিখ্যাত ‘চিকেন-স্টু’। সব ক্লাবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল চিকেনের প্রবেশ। তৈরি করেও কর্তা-কোচেদের আপত্তিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল স্টু। এমনকী ডিমও। খোঁজ নিয়ে জানা গেলএখানে গত কয়েক দিনে মারা গিয়েছে পঁচিশ হাজারেরও বেশি মুরগি। পাহাড় ঘেরা নেপাল পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সরকার চাইছে না মুরগি খেয়ে কেউ সমস্যায় পড়ুক। বদনাম হোক নেপালের। সে জন্য পুলিশের ধরপাকড় চলছে। আর সেটা শোনার পর কোভারম্যান্সের দলের রান্নাঘরে ‘চিকেন’ বন্ধ। আতঙ্কিত এক ফুটবলার বললেন, “অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সামনে আই লিগ। ও সব খেয়ে বিদেশ-বিভূইয়ে মরি আর কি!”
হাউটন আর বার্ড ফ্লুর সঙ্গে জুটেছে নতুন আর এক উপদ্রব। অনুশীলনের মাঠ নিয়ে ঝামেলা। যাতে বিরক্ত কোভারম্যান্স।
বৃহস্পতিবার সকালে টিম ইন্ডিয়াকে নিয়ে অনুশীলন করাতে গিয়ে নেপালি পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে পড়তে হয়েছিল ডাচ কোচকে। মাঠে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কোভারম্যান্সকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখন পুলিশের অফিস চলছে। মাঠে নামা যাবে না।
কাঠমাণ্ডুতে প্রচণ্ড মাঠ সমস্যা। নেপাল ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য তিনটে মাঠ বরাদ্দ হয়েছিল। তিনটির মধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের মাঠটিই পছন্দ হয়েছিল সুনীল-নবিদের কোচের। সেখানেই ঝামেলা হয় এ দিন। সাধারণত অনুশীলন শুরুর মিনিট কুড়ি আগে কোচিং স্টাফ নিয়ে মাঠে চলে আসেন কোভারম্যান্স। পিছনে আসে টিম-বাস। এ দিন সে রকমই চলে এসে মাঠে নামতে না পেরে দাঁড়িয়ে থাকেন জাতীয় কোচ এবং পুরো টিম। শেষ পর্যন্ত নেপাল ফুটবল কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশের মাঠে অনুশীলনের সুযোগ পান সুনীলরা। কিন্তু কেটে যায় তাল।
পাহাড়ঘেরা নেপালে এখন একদিনে গ্রীষ্ম-শীত-বর্ষাতিনটে ঋতুই মালুম হচ্ছে। নবি-মেহতাবরা অনুশীলন যখন শুরু করেন তখন মনোরম পরিবেশ। একটু শীত-শীত ভাব। উঁচু টিলাগুলো থেকে কুয়াশার চাদর ভেসে আসছে। মিনিট পনেরোর মধ্যে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আবার অনুশীলন শেষ হওয়ার পর তীব্র গরম। এতটাই যে এ সি-র ঘরে সেঁধিয়ে যেতে হয়েছে সব ফুটবলারকে। এ সবই কোভারম্যান্স গা-সওয়া করাতে চাইছেন টিম ইন্ডিয়াকে। লম্বা লড়াইয়ে যা করতে হয়। যেমন করিয়েছিলেন নেহরু কাপে। টিম কী হবে তার কোনও ইঙ্গিত এখনও দেননি জাতীয় কোচ। তবে তিনি যে গ্রুপ লিগের প্রথম ম্যাচ থেকেই আক্রমণাত্মক হবেন তা বোঝা গিয়েছে দলে চার ফরোয়ার্ড অন্তর্ভুক্তি দেখে।
কিন্তু সেই যুদ্ধ শুরু হতে তো আরও আটচল্লিশ ঘণ্টা। তার আগের সমস্যা কী ভাবে কোভারম্যান্স সামাল দেন, সেটাই দেখার।
সবাই ধরে নিয়েছে ভারতই এ বারের হট ফেভারিট। সেটা যে কত বড় চাপ সেটা ডাচ কোচ যে নেহরু কাপেই বুঝে গিয়েছেন।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.