রবীন্দ্রভারতী
ছাত্রী-নিগ্রহে ছাত্রনেতা ধরা দিলেন থানায়
লকাতা হাইকোর্ট আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল ২১ অগস্ট। তার আট দিন পরে, বৃহস্পতিবার সকালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী-নিগ্রহের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র নেতা বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা এবং তাঁর দুই সঙ্গী সিমিওন সোরেন ও তন্ময় আদিত্য দাস সিঁথি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। ২৯ জুলাই ছাত্রী-নিগ্রহের ঠিক এক মাসের মাথায় তাঁদের গ্রেফতার করল পুলিশ।
ধৃত তিন অভিযুক্তকে দুপুরে শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয়। বিচারক তিন জনকেই ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
রবীন্দ্রভারতীরই একটি ঘরে এমএ ক্লাসের এক ছাত্রীর উপরে অত্যাচারের ঘটনাটি ঘটে ২৯ জুলাই বিকেলে। পুলিশের কাছে অভিযোগে ওই ছাত্রী জানান, মেসে ফেরার জন্য তিনি রবীন্দ্রভারতীর মূল ফটকের সামনের বাসস্টপে দাঁড়িয়ে ছিলেন। টিএমসিপি নেতা বিশ্বজিৎ এবং তাঁরা সঙ্গীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাঁর চুলের মুঠি ধরেন বিশ্বজিৎ। অন্যেরা তাঁকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩ নম্বর ঘরে জোর করে ঢুকিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। সেখানে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে অত্যাচার চালান ওই টিএমসিপি নেতা এবং তাঁর সঙ্গীরা। তাঁরা সকলে রবীন্দ্রভারতীরই পড়ুয়া।
নিগৃহীতার অভিযোগ, মারধর ও শ্লীলতাহানির চলার সময় এক ছাত্রীও সেই ঘরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা তাঁর জামাকাপড় ধরে টানাহ্যাঁচড়া করেন। তিনি প্রতিবাদ করায় এক জন তাঁর গলা চেপে ধরেন। অন্য এক জন চেপে ধরেন তাঁর মুখ। তার পরে তাঁকে যথেচ্ছ কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারা হয়। পেটানো হয় লোহার রড দিয়েও। এমএ পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রীর অভিযোগ, হামলাকারীরা তাঁর সোনার গয়না এবং ১৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। বিশ্বজিৎ-সহ ছ’জন ছাত্র এবং এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে সে-রাতেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন লাঞ্ছিতা ছাত্রী। তার পরে শুরু হয় শাসানি। ছাত্রীটি এমনই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, পরীক্ষা না-দিয়ে মেস ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। ওই ঘটনার পাঁচ দিন পরে শ্রীজীব শীল, কানু মণ্ডল ও শঙ্খ তালুকদার নামে অভিযুক্ত তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত তাঁদের জেল-হাজতে পাঠায়। ১২ অগস্ট ওই তিন অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পান। কিন্তু মূল অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে পুলিশ তখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। অভিযোগ ওঠে, শাসক দলের ছাত্রনেতা বলেই পুলিশ বিশ্বজিৎকে ধরছে না।
বিশ্বজিৎ ও সিমিওন শেষ পর্যন্ত ২১ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান। বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি কাঞ্চন চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। দুই বিচারপতি জানান, কেস ডায়েরি পড়ে তাঁদের মনে হয়েছে, ওই ছাত্রীর অভিযোগ নিয়ে সবিস্তার তদন্ত করা দরকার। সেই জন্যই ওই দুই অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা সম্ভব নয়। সিঁথি থানার পুলিশ আদালতে জানায়, তাঁর গলার সোনার হার, সোনার দুল এবং ১৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ছাত্রীটি যে-অভিযোগ করেছেন, তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। তা হলে নিগৃহীতা ছাত্রীটি কি মিথ্যা অভিযোগ করেছেন? লালবাজারের কর্তারা এ দিন এই প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি।
মূল অভিযুক্ত ধরা পড়ার পরে কী বলছেন নিগৃহীতা ছাত্রী? এ দিন ওই ছাত্রী বলেন, “ওদের হাতে মার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমার এখনও এমএ ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। আমি চাই, ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। উপাচার্যকে অনুরোধ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হোক ওই ছাত্রছাত্রীদের।”
কী বলছেন উপাচার্য? উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, “আদালত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সংগঠনের নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরে টিএমসিপি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? ওই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, “আদালত আগে দোষী সাব্যস্ত করুক। ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সেটা পরে বিবেচনা করা হবে।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.