গল্পের গরু নাকি গাছে ওঠে! মহাকরণের ইঁদুর উঠল সাড়ে ছ’ফুট উঁচুতে থাকা মেন সুইচে। সেখানেই চিতপটাং!
এবং মহাকরণ অন্ধকার। কাহিনি বৃহস্পতিবারের। বেলা সওয়া ১২টায় মহাকরণের চার নম্বর ব্লকের দোতলায় অর্থ বরাদ্দ দফতর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ঝপাং করে নিভে গেল আলো, থেমে গেল পাখা। কর্মীরা ভাবলেন বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে তত ক্ষণে ঘামতে শুরু করেছেন অনেকেই। খবর পেয়ে বিদ্যুৎ-বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে তড়িঘড়ি চলে এলেন পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারেরা।
অর্থ দফতরের বিদ্যুতের লাইন খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেও কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না। কেন বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিন্ন হল, পাশের ভূমি ও ভূমি সংস্কারের ঘর পরীক্ষা করেও জানা গেল না তার কারণ। |
বিদ্যুৎ কেড়েছে ইঁদুর। মোমবাতির আলোয় কাজ মহাকরণে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবাশিস রায়। |
শেষে আনা হল মই। উদ্দেশ্য, অর্থ দফতরের বিদ্যুৎ-সংযোগের মেন সুইচ পরীক্ষা করে দেখা। মই বেয়ে উঠে মেন সুইচের ঢাকনা সরাতেই গায়ের রোম খাড়া হওয়ার জোগাড় ইঞ্জিনিয়ারের। সেখানে মরে কাঠ হয়ে পড়ে রয়েছে একটা ধেড়ে ইঁদুর! এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ সে-ই।
পূর্ত দফতরের কর্তারা জানান, ধেড়ে ইঁদুর দুপুরে কোনও ভাবে সাড়ে ছ’ফুট উঁচুতে থাকা মেন সুইচ বক্সে ঢুকে পড়েছিল। তাতেই শর্ট সার্কিট হয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। ফের বিদ্যুৎ-সংযোগের ব্যবস্থা করতে বেলা পৌনে ১টা হয়ে যায়।
মহাকরণে পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, কয়েক বছর আগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ চলার সময় হঠাৎই বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ ছিল খেলা। রাজ্য সরকার সেই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তে দেখা যায়, ইঁদুরে বিদ্যুতের কেব্ল কেটে দিয়েছে সল্টলেক সাবস্টেশনে। তাতেই বিপত্তি।
এ দিন মহাকরণে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। মহাকরণে ইঁদুরের উৎপাত অবশ্য নতুন নয়। ইঁদুরে ফাইল কাটেনি, বিদ্যুতের তার কাটেনি, প্লাস্টিকের পাপোষ চেখে দেখেনি এমন কোন দফতর নেই বললেই চলে। নেংটি, ধেড়ে ইঁদুরের উৎপাতে নাকাল হয়েছেন মহাকরণের অনেক কর্মী। ইঁদুর তাড়াতে মহাকরণে বিড়ালও পোষা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু বিড়াল-বাহিনীও বেবাক ফেল!
মহাকরণে পালাবাদল হয়েছে দু’বছর হল। কিন্তু ইঁদুরের পালা কি চলবেই? পূর্ত দফতরের এক অফিসার জানান, মহাকরণ সংস্কারের সময় সবার আগে ইঁদুর নিধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
|