কথা চলছিল বহু দিন ধরেই। অবশেষে ছাড়পত্র দিল রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প ও পরিকাঠামো বিষয়ক সাব-কমিটি। ফলে সাবেক কলকাতা পুর-এলাকার (১-১০০ ওয়ার্ড) সরকারি বাসডিপোগুলির উদ্বৃত্ত জমি বাণিজ্যিক ব্যবহারের পথে আর কোনও বাধা রইল না। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, “উন্নয়ন ও কর্মচারীদের স্বার্থে পরিবহণের উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
মহাকরণের খবর, উদ্বৃত্ত জমির বেশি দাম পেতে লিজ-চুক্তির শর্ত অনেকটাই শিথিল করা হচ্ছে। যেমন, শহরাঞ্চলে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন অনুযায়ী সাড়ে সাত কাঠার বেশি ফাঁকা জমি রাখার অনুমতি দেবে রাজ্য সরকার। এর মধ্যেই সিটিসি-র চিহ্নিত ছ’টি ডিপোতে সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার সাব-কমিটি। বাকি ডিপোগুলিতেও এই অনুমতি দেবে সরকার। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শহরের চারটি নিগম সিটিসি, সিএসটিসি, ডব্লিউউবিএসটিসি এবং এসবিএসটিসি-র মোট ২৯টি ডিপোর প্রায় ৯০০ কাঠা উদ্বৃত্ত জমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। এর মধ্যে সিটিসি-র ছ’টি ডিপোর মোট ৩৭৮ কাঠা উদ্বৃত্ত জমি দু’সপ্তাহের মধ্যে নিলামের মাধ্যমে লিজ দেওয়া হবে। ওই ছ’টি ডিপো হল টালিগঞ্জ, কালীঘাট, বেলগাছিয়া, খিদিরপুর, শ্যামবাজার এবং গ্যালিফ স্ট্রিট। |
ঠিক হয়েছে, ৯৯ বছরের দীর্ঘমেয়াদি লিজ-চুক্তিতে উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী, জমির মালিক অন্য কাউকে আবার জমি হস্তান্তর (সাব-লিজ) করতে পারবেন। তার জন্য সরকারের কোনও রকম অনুমোদন লাগবে না। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “বিক্রির সময়ে বেশি দাম পেতেই লিজ-চুক্তির শর্ত শিথিল করা হচ্ছে।”
ডিপোর উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করে নিগমগুলির আর্থিক অবস্থা ফেরানোর ভাবনা শুরু হয়েছিল বাম আমলেই। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই কাজ এগোয়নি। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ছ’মাসের মধ্যে নিগমগুলিকে লাভজনক করে তোলা হবে। অবশেষে সেই কাজে হাত দিল সরকার। যদিও রাজ্য জুড়ে অনেক ডিপোর জমির মালিক কে, তা এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি সরকার। ওই সব ডিপোর মালিকানা চূড়ান্ত করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে নিগমগুলি।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, যে সমস্ত ডিপোর কাগজপত্র ঠিক রয়েছে, সেগুলির উদ্বৃত্ত জমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হবে। এর প্রথম ধাপ শুরু হতে চলেছে। তবে লিজের ক্ষেত্রে দু’রকম ‘মডেল’ তৈরি করেছে পরিবহণ দফতর। প্রথম মডেলে ডিপোর জন্য ব্যবহারের জমি ছেড়ে দিয়ে বাকি জমি বিক্রি করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় মডেলে জমি সরাসরি বিক্রি করা হবে না। তার বদলে ডিপোর উপরে বহুতল করে তা বিক্রি করা হবে। দু’নম্বর মডেলের ক্ষেত্রে এ দিনের বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চুক্তির যাবতীয় শর্ত চূড়ান্ত হয়নি। অর্থ, আইন, ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে খবর। তবে কোনও ক্ষেত্রেই ডিপোর সব জমি বিক্রি করে দেওয়া হবে না। ডিপো রেখেই জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
|