বাজার থেকে তেল সংস্থার সরাসরি ডলার কেনা নিয়ন্ত্রণ করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাওয়াইয়ে ফল মিলল হাতে হাতে। বুধবার ডলারে টাকা রেকর্ড তলানি ছুঁলেও সেখান থেকে বৃহস্পতিবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তা বাড়ল ২২৫ পয়সা।
গত ১৫ বছরে (১৯৯৮-এর জানুয়ারির পর থেকে) একদিনে এত বেশি বাড়েনি টাকা। দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৬.৫৫ টাকা। বুধবারের দর ছিল ৬৮.৮০। টাকার এই নজরকাড়া উত্থানই শেয়ার বাজারের প্রতি লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনে। এক ধাক্কায় সেনসেক্স বেড়ে যায় প্রায় ৪০৫ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে তা পৌঁছয় ১৮,৪০১.০৪ অঙ্কে। বাজারের প্রতি আস্থা ফেরায় পড়েছে সোনাও।
তবে বৃহস্পতিবার টাকা ও শেয়ার বাজারে কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এ দিন রাজ্যসভায় তাঁর মন্তব্যে কবুল করেছেন, “সন্দেহ নেই, দেশ কঠিন আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর পিছনে দেশের অভ্যন্তরীণ কারণ রয়েছে। যদিও সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদিও ছায়া ফেলছে।” বিরোধী দলের সদস্যরা অভিযোগ জানান, টাকার পতন দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এর জবাবে মনমোহন বলেন, আগামী কাল তিনি সংসদে এ ব্যাপারে বিবৃতি দেবেন।
প্রসঙ্গত, তিন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার ডলারের বিপুল চাহিদা যাতে খোলা বাজারে টাকা-ডলার বিনিময় হারে প্রভাব ফেলতে না পারে, তার জন্য বুধবারই ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তেল সংস্থাগুলির জন্য তারা এনেছে বিশেষ মুদ্রা বিনিময় হার। বিশেষ ব্যাঙ্ক থেকে তারা ওই হারে ডলার কিনবে। |
মাসে তেল সংস্থাগুলির ৭৫ লক্ষ টন অশোধিত তেল আমদানি করতে খরচ হচ্ছে ৮৫০ কোটি ডলার। তার পরেই স্থান সোনা আমদানির। যার উপর রাশ টানতে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি, ব্যাঙ্কগুলির আমদানির উপর বিধিনিষেধ ইতিমধ্যেই এনেছে কেন্দ্র। ভারতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে চলতি খাতে ঘাটতি ৯০০০ কোটি ডলার (৫,৯৮,৯৫০ কোটি টাকা) ছুঁতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে আমদানি খাতে ডলার খরচ নিয়ন্ত্রণ করে টাকার দামকে স্থিতিশীল করতে চায় কেন্দ্র।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিদায়ী গভর্নর ডি সুব্বারাও চলতি অর্থবর্ষে ডলারে টাকার ২৩% পতনের জন্য অবশ্য কেন্দ্রকেই দুষেছেন। ৪ সেপ্টেম্বর অবসর গ্রহণের আগে শেষ প্রকাশ্য বক্তৃতায় এ দিন তিনি বলেন, “কেন্দ্রের রাজস্ব নীতির দুর্বলতাই সমস্যা ডেকে এনেছে। যদিও মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ আর্থিক ত্রাণ বজায় রাখবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তাই টাকার এতটা পতনের অব্যবহিত কারণ।” উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আমেরিকার আর্থিক বৃদ্ধি (২.৫%) প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। যা ত্রাণ প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়া নিয়ে নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে।
হুঁশিয়ারি মুডিজ-এর। খাদ্য নিরাপত্তা বিল অথর্নীতির অবস্থা আরও সঙ্গীন করবে বলে হুঁশিয়ারি দিল মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ। ভারতের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতার ক্ষেত্রে এই বিলের প্রভাব নেতিবাচক। তাদের মতে এর ফলে খবচ বাড়বে এবং আরও দুর্বল হবে অর্থনীতি।
জনসাধারণের কাছ থেকে সোনা। সরাসরি সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে সোনা কেনার দিকে এগোচ্ছে কেন্দ্র। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বর্ণনীতি বিভাগের একটি সূত্র বলেছে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক এ ব্যাপারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিলে গৃহস্থের কাছে পড়ে থাকা সোনার গয়না, বার ও মুদ্রা নগদে কিনতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক।
তোপ মমতার। ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়তে থাকায় কেন্দ্রের দিকে তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মহাকরণে রাজ্যের শিল্পনীতি ঘোষণার প্রাক্কালে তিনি বলেন, “মন্দা চলছে। ডলারের দাম বেড়েছে। এটা উদ্বেগজনক। রান্নাঘরেও তার প্রভাব পড়ছে।” এ জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “আমি জানি না, কেন্দ্র চুপচাপ কেন। তাতে আমরা সবাই শঙ্কিত।” গত সেপ্টেম্বরে তৃণমূল ইউপিএ ছাড়ার পর থেকেই দেশের দুর্দশা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। |