মোবাইল পরিষেবার হাল ফেরাতে অবশেষে নড়েচড়ে বসল বিএসএনএল। বহু বছর পরে কলকাতা সার্কল এলাকায় ১৪৬টি নতুন টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে। যেগুলি টু-জি এবং থ্রি-জি প্রযুক্তির পরিষেবাও দিতে পারবে। যার কাজ শেষ হলে ক্যালকাটা সার্কলে বিএসএনএল ফের বেসরকারি মোবাইল সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে বলে আশা সংস্থার কর্তাদের।
ক্যালকাটা টেলিফোন্স সূত্রের খবর, কলকাতা সার্কলে ‘সেলওয়ান’ মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ২২ লক্ষ। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৯ লক্ষের মতো গ্রাহক নিয়মিত মোবাইল ব্যবহার করেন। বাকি ১৩ লক্ষের অধিকাংশই পরিষেবার মান খারাপ বলে টকটাইম রিচার্জই করেন না।
সমস্যা মেটাতে শুধু টাওয়ার বসানোই নয়, সার্কলের ১০টি অঞ্চলে মোবাইল পরিষেবার পরিকাঠামোয় প্রয়োজনীয় স্যুইচিং বক্স-সহ অন্যান্য কিছু পুরনো যন্ত্রপাতিও বদলে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে ওই সমস্ত অঞ্চলের দুই-আড়াই লক্ষ সেলওয়ান গ্রাহকের মোবাইল পরিষেবার মান আরও কিছুটা উন্নত হবে বলে সংস্থার কর্তাদের দাবি। আপাতত হাওড়া ছাড়াও বিধাননগর, যাদবপুর, মধ্য কলকাতা, রাজারহাট-সহ বিশেষ কিছু অঞ্চলে এই কাজ শুরু হয়েছে। একটি চিনা সংস্থা এই সংস্কারের কাজ করছে বলে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।
ক্যালকাটা টেলিফোন্স সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার (সিজিএম) গৌতম চক্রবর্তী জানান, বহু বছর পরে নতুন টাওয়ার বসানোর কাজে হাত দেওয়া হবে। কোথায় কোথায় টাওয়ার বসবে, তার সমীক্ষার কাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই (২০১৩-’১৪) ১৪৬-১৫০টি টাওয়ার বসানোর কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা হবে বলে তিনি জানান।
সংস্থার সেলওয়ান পরিষেবার জেনারেল ম্যানেজার বি এন ধর জানাচ্ছেন, নতুন টাওয়ার বসে গেলে বর্তমান গ্রাহকেরা উন্নত পরিষেবা তো পাবেনই, সঙ্গে নতুন আরও দু’লক্ষ মোবাইল সংযোগ দেওয়া যাবে।
সার্কল-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ভাল পরিষেবা দিতে গেলে গ্রাহক-সংখ্যার নিরিখে যে ভাবে পরিকাঠামো সম্প্রসারণের প্রয়োজন, তা তাঁরা করতে পারছেন না। কারণ, গত দেড়-দু’বছর ধরে কলকাতা সার্কলের জন্য নতুন কোনও টাওয়ার বা অন্য যন্ত্রপাতি বিএসএনএল-এর সদর দফতর বরাদ্দ করেনি। যার জন্য সংস্থার সঙ্গে ভুগছেন গ্রাহকেরাও।
পরিষেবার মান খারাপ বলে ক্যালকাটা টেলিফোন্সের ল্যান্ডলাইনের সংখ্যা কমতে কমতে এসে ঠেকেছে ন’লক্ষের ঘরে। ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যাও কমে দাঁড়িয়েছে দু’লক্ষের কাছাকাছি। এক দিকে কোটি-কোটি টাকা লোকসানের বোঝা (সূত্রের খবর, ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে ক্যালকাটা টেলিফোন্সের লোকসান হয়েছে ৩৬৭ কোটি), অন্য দিকে পরিষেবা অসন্তোষের জন্য ফি-বছর বহু গ্রাহক ক্যালকাটা টেলিফোন্সের সঙ্গে সর্ম্পক ত্যাগ করছেন। এই পরিস্থিতিটাই ফের ঘোরানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।
গৌতমবাবু জানিয়েছেন, ল্যান্ডলাইন পরিষেবার ক্ষেত্রে ‘নেক্স্ট জেনারেশন নেটওয়ার্ক’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। এই ব্যবস্থায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলি তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক অনেক আধুনিক প্রযুক্তির পরিষেবার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা যাবে। ফলে সার্কল জুড়ে প্রি-পেড ল্যান্ডলাইন পরিষেবা-সহ গ্রাহকদের আরও নানা ধরনের পরিষেবা দেওয়া যাবে বলে তিনি জানাচ্ছেন।
এই মুহূর্তে ক্যালকাটা টেলিফোন্স এলাকায় সেলওয়ান মোবাইলের ১২০০টি টাওয়ার রয়েছে। কিন্তু ওই টাওয়ারগুলির মাধ্যমে সার্কলের ২০-২২ লক্ষ গ্রাহককে সমান মানের পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। আবার টাওয়ারগুলির ব্যাটারি ব্যাক-আপও খারাপ। এক বার লোডশেডিং হলে ফের টাওয়ারগুলি সচল হতে অনেকটা সময় লেগে যায়। সার্কলের ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত পরিষেবা দিতে গেলে নতুন ৪০০-৫০০ টাওয়ার বসানো প্রয়োজন। তবে নতুন যে কয়েকটি বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে, তাতেও কিছুটা লাভ হবে বলেই তাঁরা মনে করছেন। |