মেগা সাইজের চিংড়ি খাওয়ার জন্য বহরমপুরবাসীদের এখন কলকাতা ছুটতে হবে না। ফিস ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়েছে বহরমপুরে। এর সুবাদে চারশো থেকে পাঁচশো ওজনের নয়-১২ ইঞ্চি লবস্টার পাতে পড়ছে খোদ বহরমপুরেই। বহরমপুর শিল্পতালুকে গড়ে ওঠা এক নামী হোটেলে চিংড়ি আর অন্যান্য মাছকে ঘিরে রীতিমতো উৎসব পড়ে গিয়েছে। এক পিস লবস্টার ৮০০ টাকায়, দু’পিস ১৫০০ টাকা।
গত ২০ অগস্ট থেকে চলছে ফিস ফেস্টিভ্যাল। চলবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। রাত সাড়ে এগারোটাতেও হালকা হচ্ছে না অতিথিদের ভিড়। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কর্মী সস্ত্রীক মিঠুকুমার দাস এসেছিলেন লবস্টার খেতে। তাঁর কথায়, “বহরমপুরের বাজারে লবস্টার পাওয়া যায় না, লবস্টার রান্নার রেসিপিও অজানা। শহরে বসে লবস্টার খেতে পারার মজাই আলাদা।” তাঁর স্ত্রী মেখলা দাস বলেন, “কলকাতায় লবস্টার খেয়েছিলাম। তাপ চাইতে এই লবস্টারের স্বাদ কিছু কম নয়।”
হোটেল মালিকদের অন্যতম অশেষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের জেলায় পর্যটক প্রচুর আসে, কিন্তু তেমন কোনও উৎসব হয় না। ওই অভাব দূর করতেই এই মাছ-উৎসব।” একটি জাতীয় স্তরের হিমায়িত মাছ বিপনন সংস্থা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সিলড্ প্যাকে কাঁচা উপকরণ সরবরাহ করেছে, জানান তিনি। |
বহরমপুরের ওই উৎসবে মিলছে চিংড়ি, ভেটকি, স্কুইড, লবস্টার-সহ রান্না করা বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের স্বাদ। অনেকগুলি পদই বহরমপুরে এই প্রথম। চিফ শেফ অনুপকুমার দাস ইংল্যান্ড থেকে দেশে না ফিরলে অবশ্য উৎসব এমন জমত না। নদিয়ার রানাঘাটের হবিবপুরের যুবক অনুপ তারাতলার হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করার পরে ইংল্যান্ড চলে যান। সেখানে কুইন এলিজাবেথ ও কুইন ভিক্টোরিয়া নামে দুটি ক্রুজ-এ শেফ ছিলেন। বছর দুয়েক আগে পরিবারের টানে দেশে ফিরে এসে যোগ দেন বহরমপুর শিল্পতালুকের ভেতরে গড়ে ওঠা ওই হোটেলে। অনুপকে সামনে রেখেই হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের রান্নাঘর গুছিয়েছেন। হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার প্রলয় তেওয়ারি বলেন, “উৎসব শুরুর আগে আমরা ভেবেছিলাম এত টাকা দামের লবস্টার হয়তো বিক্রি হবে না। গত কয়েক দিনে অনুপের রান্নার গুণে আমাদের স্টকে মজুত ৮০০ টাকা দামের সব লবস্টার শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন করে নিয়ে আসতে হয়েছে।”
ফিস ফেস্টিভালে ‘স্টার্টার’ হিসেবে রয়েছে প্রন ককটেল, প্রন স্প্রিং রোল, ব্রেডেড গোল্ডেন ফ্রায়েড শ্রিম্পস্, প্রন টর্পেডো, প্রন স্টিক, প্রন পাপস, ইংলিশ ফিস অ্যান্ড চিপস, ফিস ফিটার (মেক্সিকান স্টাইল), ফিস গুজন। রয়েছে রকমারি মাছের তন্দুরি আর কাবাব। ভারতীয় রান্নাও বাদ নেই, সেখানে আছে ভাপা চিংড়ি, কড়াই প্রন, চিংড়ির মালাইকারি, প্রন টিক্কা সমুন্দরি মশালা, প্রন বিরিয়ানি, প্রন পোলাও।
শেফ অনুপ একটা রেসিপিও দিতে রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, “তন্দুরি রক লবস্টার রান্না করতে একটা বড় সাইজের লবস্টার লাগবে। দই, গরম মশলা, কাশ্মিরি লঙ্কা গুঁড়ো, লেবুর রস দিয়ে ঘন্টা দুয়েক ভিজিয়ে করে রাখতে হবে লবস্টার। পরে তন্দুরের মধ্যে হালকা আঁচে সেঁকে নিতে হবে। বাটার-রাইস দিয়ে খেতে হবে। থাকবে স্যালাড এবং পুদিনা-ধনে পাতা-দই-কাঁচা লঙ্কা-লেবুর রস দিয়ে তৈরি চাটনি।”
প্রাচীন শহর বহরমপুর, নাগরিক জীবনে চালচলনও সাবেকি বলেই মনে হয়। কিন্তু শহরের মানুষের রুচিতে বদল ঘটেছে, যা এই ফিস ফেস্টিভ্যাল না হলে তেমন করে জানা যেত না। হয়তো অনেক দিন ধরেই বদলের চোরাস্রোত বইছিল। সেই ধারায় তরুণ-তরুণী, এমনকী প্রৌঢ়রাও প্রচলিত খাবারের বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। |