আস্থা হারিয়েছে বিশ্ব, বুঝতে দেরি করছে সরকার: রতন টাটা
ড়তে পড়তে সত্তরের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে টাকা। বুধবার ডলারের তুলনায় ২৫৬ পয়সা কমেছে টাকার দাম। গত ২০ বছরে টাকার দাম কখনও এত নীচে নামেনি। অভূতপূর্ব এই পতনের ধাক্কায় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না শিল্পমহল। তাদের মনে ফের আশঙ্কা, তা হলে পরিস্থিতি কি ১৯৯১ সালের মতোই দাঁড়াবে? এমন একটা সময়ে মনমোহন সিংহের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা। বললেন, এই অবস্থার ফলে বিশ্বের বাজারে আস্থা খুইয়েছে ভারত, অথচ সরকারই তা বুঝতে দেরি করছে।
এ দিন যে হারে টাকার দাম পড়েছে, তাতে আরও বেড়েছে আতঙ্ক। এ দিন টাকা এক সময় নেমে গিয়েছিল ৬৮ টাকা ৮৫ পয়সায়। পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপে তা সামান্য বেড়ে তা দাঁড়ায় ৬৮ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ মনে করছে, টাকার এই অবিরাম পতন আটকাতেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেই কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে ক্রমে বাড়তে থাকবে বাণিজ্য ঘাটতি। কারণ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দাম এক টাকা বাড়লে জ্বালানি তেলবাবদ ভর্তুকি খাতে খরচ বাড়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা। তার উপরে যোগ হতে চলেছে খাদ্য সুরক্ষার মতো সামাজিক প্রকল্পের জন্য বাড়তি এক লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি দায়। সব মিলিয়ে রাজকোষের অবস্থা আরও করুণ হবে। আর তাতে টাকার হাল হবে আরও সঙ্গিন।
রতন টাটা মনে করছেন, অর্থনীতির এই অবস্থায় জন্য দায়ী নেতৃত্ব দেওয়ার লোকের অভাব। প্রকারান্তরে সেই দায় মনমোহনের উপরেই বর্তায়। শিল্প ও বাণিজ্যের হাল ফেরাতে এক সময় রতন টাটাকে নিজের হাতে গড়া একটি কমিটিতে নিয়ে এসেছিলেন মনমোহন। সেই টাটাই এ বার জানালেন, সামনে থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, এমন এক জন নেতার অভাব বোধ করছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহের বিপরীতমুখী নীতির খেসারতও দিতে হচ্ছে অর্থনীতিকে। টাটার মতে, নেতাকে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অথচ তা হচ্ছে না। এই অবস্থায় দেশ যে বিশ্বের দরবারে আস্থা হারাচ্ছে, সেটাও বুঝে উঠতে দেরি করছে সরকার। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, এমন কাউকে এখন দরকার বলে মনে করেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন কর্ণধার।
রতন টাটার এই মন্তব্য অস্বস্তি বাড়িয়েছে সরকারের। সরকারের মধ্যেও অনেকে জানেন, দেশের আর্থিক হাল নিয়ে টাটা যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটা শিল্পমহলের একটা বড় অংশেরই মনের কথা। এর আগে ইনফোসিসের নারায়ণমূর্তিও আর্থিক হাল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশের থেকে বিদেশকেই বিনিয়োগের পক্ষে ভাল জায়গা বলে মনে করছেন অনেকে। বিড়লা গোষ্ঠীর আদিত্য বিড়লাও সে কথা জানিয়েছেন।
এই অসুখ সারাতে গত কালই চিদম্বরম একগুচ্ছ দাওয়াই দিয়েছেন। সংস্কার কর্মসূচিকেও চাঙ্গা করে তুলতে চাইছে সরকার। তাই সংসদের এই অধিবেশনেই পেনশন, জমি বিলের মতো সংস্কারমুখী বিলগুলিকে পাশ করাতে চাইছে তারা। অধিবেশনের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু নিত্যদিন টাকার দাম যে ভাবে পড়ছে, আমদানি বাড়ছে, রফতানি মুখ থুবড়ে পড়ছে, উৎপাদন কমছে, রাজকোষের ঘাটতি পাহাড়প্রমাণ হচ্ছে, তাতে অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে।
রতন টাটার মন্তব্য নিয়ে এ দিন মনমোহন সিংহ বা চিদম্বরম, কেউই মুখ খোলেননি। শুধু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ বলেছেন, “বিশ্ব জুড়ে যখন সঙ্কট চলছে, সেই সময় এ দেশের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।” বস্তুত, টাটা আজ আর্থিক সঙ্কট নিয়ে যা বলেছেন, সেটা সরকারের কাছে নতুন কিছু নয়।
একটি খবরের চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টাটা নেতৃত্বের সঙ্কটের কথা বলেন। সেই প্রসঙ্গেই এর পরে ওঠে নরেন্দ্র মোদীর কথা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাঁর রাজ্যে ন্যানো প্রকল্প সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন টাটা। সেই মোদীকেই যদি আগামী লোকসভা ভোটের পরে প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নিতে দেখা যায়, তা হলে কি নেতৃত্বের ঘাটতি মিটবে? তিনি কি গুজরাতের ‘এম’ (মোদী)-কে পঞ্জাবের ‘এম’ (মনমোহন)-এর বিকল্প হিসেবে দেখছেন? এক টিভি সাক্ষাৎকারে টাটা এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে নিজের রাজ্যে মোদী যা করেছেন, সে জন্য তাঁর তারিফ করতে ভোলেননি। বলেছেন, “গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী নিজের নেতৃত্ব প্রমাণ করেছেন এবং গুজরাতকে বিশিষ্ট জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। তবে দেশের ক্ষেত্রে তিনি কী করবেন, বলতে পারব না। ”
মনমোহনের সঙ্গে রতন টাটার সম্পর্ক কিন্তু বরাবরই মধুর। এ দিনও তাই টাটা বারবারই বলেছেন, মনমোহন সম্পর্কে এখনও তাঁর উঁচু ধারণা। মনমোহনই যে ’৯১ সালের সঙ্কট সামলেছিলেন, সে কথাও উল্লেখ করেন। দেশের মানুষকে তিনিই উঁচুতে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তবে পরিস্থিতি যে এখন অনেকটাই আলাদা, সে কথা বোঝাতে টাটার মন্তব্য, এখন সরকারকে রাজ্যগুলো এক দিকে টানছে, শরিকরা আর এক দিকে। আবার মন্ত্রীরা টানছেন অন্য দিকে। এই ভাবে মনমোহনের অসহায়তার কথা তুলে ধরে তাঁর বক্তব্য, বারবার এই সব শক্তির প্রভাবেই নীতি রূপায়ণ করতে পারছে না সরকার। অহেতুক দেরি হচ্ছে। সঙ্কটও তৈরি হচ্ছে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এই সুযোগে সরকারের কড়া সমালোচনা শুরু করেছে। বিজেপির বক্তব্য, টাটা-সহ শিল্পপতিরা তাদের সুরেই কথা বলছেন। টাকা যে ভাবে পড়ছে, তা নিয়ে আশঙ্কা জানাতে গিয়ে বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর এমন কটাক্ষও করেছেন যে, টাকার দাম এখন সনিয়ার বয়সের কাছাকাছি। এর পরে তা মনমোহনের বয়সে চলে যাবে! খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, ভোটের কথা মাথায় রেখে সরকার শেষ লগ্নে যে খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাচ্ছে, তার জন্য এই আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও বিপুল বোঝা বহন করতে হবে। কিরণ মজুমদার শাহের মতো শিল্পপতিও মনে করেন, ভোটের মুখে এ ধরনের প্রকল্প ঘোষণা মানে আরও ভর্তুকি বাড়ানো, যা অর্থনীতির বিরুদ্ধেই যাবে।
বিজেপির শীর্ষ নেতা ও রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বলেন, “মনমোহন সিংহ সরকার নীতিপঙ্গুত্বের শিকার।” তাঁদের জমানা শেষ হওয়ার কিছু দিন পর থেকে অর্থনীতির হাল খারাপ হয়েছে, এই কথা জানিয়ে জেটলির বক্তব্য, এর জন্য মনমোহনের নেতৃত্বের খামতি তো আছেই, তা ছাড়া দু’টি ক্ষমতার কেন্দ্র (সনিয়া ও মনমোহন) থাকাতেও সমস্যা বেড়েছে। জেটলি বলেন, “মনমোহন প্রধানমন্ত্রীর পদে তো বসে রয়েছেন, কিন্তু তাঁর হাতে ক্ষমতা নেই। আর যেখানে কোনও পদ নেই, সেই ১০ জনপথই আসল ক্ষমতাকেন্দ্র।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.