মেয়েরা একা বেরিও না, হেমার মন্তব্য উস্কে দিল বিতর্ক
র্দায় তিনি তুমুল ডাকাবুকো বাসন্তী। যিনি খোদ গব্বরের সামনেও অকুতোভয়। কিংবা গীতা, যমজ বোন সীতার উপর হওয়া যাবতীয় অত্যাচারের প্রতিশোধ নেওয়াটা যাঁর বাঁ হাতের খেলা। এমন দুটো চরিত্র ওতপ্রোত জড়িয়ে গিয়েছে তাঁর পথচলায়। অথচ আগাগোড়া স্বাধীন জীবনযাপনে বিশ্বাসী, মেধাবী, রুচিশীল অভিনেত্রী তথা প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনীই এখন মনে করেন মেয়েদের একা একা বেরোনো উচিত নয়। দুই কন্যার মা হেমার এ হেন মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এক জন মা হিসেবে, সচেতন মহিলা হিসেবে তাঁর এই বক্তব্যকে স্বাভাবিক উদ্বেগ বা আশঙ্কার নিরিখে দেখেও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সমাজ বদলের দাবি না করে মেয়েদের পায়ে হেমা ‘বেড়ি’ পরাতে চাইছেন কেন?
বুধবার পুণেতে একটি অনুষ্ঠানে হেমার পরামর্শ, “মেয়েদের কোথাও একা যাওয়া উচিত নয়।” তাঁর কথায়, “সবকিছু হাল্কা ভাবে নিয়ে মেয়েরা যখন যেখানে খুশি চলে যেও না। তাতে যা কিছু ঘটতে পারে। তোমায় কেউ আটকেও রাখতে পারে।” এর পরেই তাঁর হাল্কা মন্তব্য, “কৃষ্ণ সর্বদা দ্রৌপদীকে রক্ষা করতেন। মনে রাখতে হবে এখন কিন্তু রক্ষা করার মতো ঈশ্বর নেই।”
মন্তব্যটি নিয়ে জলঘোলা করে লাভ নেই।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
(অভিনেতা)
ওঁর মতো এক জন মহিলা
সমাজটাকে ৫০ বছর
পিছিয়ে দিতে চান কেন?
শতাব্দী রায়
(সাংসদ-অভিনেত্রী)
মেয়েদের নিরাপদে
একা বেরোনো নিশ্চিত
করা বেশি জরুরি।
শাশ্বতী ঘোষ
(নারী আন্দোলনের কর্মী)
বেশ করবে মেয়েরা
একা বেরোবে।

সুচিত্রা ভট্টাচার্য
(লেখক)
হেমার এমন বক্তব্য শুনে পুরুষ
হিসেবে আমিও লজ্জিত।

রূপঙ্কর
(গায়ক)
ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে সর্বত্রই এখন পা বাড়িয়েছেন মেয়েরা। তা হলে কেন একা একা সর্বত্র না যাওয়ার এমন নিদান? এ কি চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া? নাকি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সমাজের মানসিকতার প্রতি এক জন মায়ের পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে ফেলা? সমাজের বিশিষ্টেরা প্রায় সকলেই হেমার আশঙ্কার জায়গাটুকু উপলব্ধি করতে পারছেন। তবে তাঁর পরামর্শের সঙ্গে একমত হননি অনেকেই।
অভিনেত্রী ও তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, “যেখানে আজ মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে, সেখানে কেন তারা একা যেখানে খুশি যেতে পারবে না? দিল্লি বা মুম্বইয়ের সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনায় তো মেয়ে দু’টি একা ছিল না। তা হলে তাদের সঙ্গে এমন ঘটল? মেয়েদের একা বেরোতে বারণ না করে বরং যারা অমানবিক বা পাশবিক, তাদের মানুষ করে তোলা হোক।”
নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলছেন, “মেয়েদের উপরে পরপর এই আক্রমণগুলোয় একটা প্রবণতা দেখছি। ফাঁকফোঁকর খুঁজে সবাই মেয়েটির উপরেই সব দায় চাপিয়ে দিতে চাইছেন। আক্রমণকারীর যেন কোনও দায়িত্ব নেই। মেয়েদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করার যেন দায় নেই সরকারেরও। আর একা না বেরোলে কি সমস্যায় পড়তে হবে না? দিল্লি, মুম্বই, লাতেহার, ধানতলা কোথাও আক্রান্তেরা একা ছিল না!”
লেখক সুচিত্রা ভট্টাচার্যও হেমার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তাঁর কথায়, “সমস্যাটা আসলে পুরুষশাসিত সমাজের দৃষ্টিকোণের। মেয়েদের মানুষ বলে গণ্য করার সচেতনতাটা থাকলেই আর এই ধরনের পরামর্শের দরকার পড়বে না। যে অপরাধগুলোর প্রেক্ষিতে এমন পরামর্শ, সেগুলোর শাস্তিও বড্ড কম।”
গায়ক রূপঙ্করের বক্তব্য, “মেয়েরা যদি নিজেদের ইচ্ছেমতো, নিরাপদে, ঘুরতে না পারে, তা সরকারের লজ্জা, গোটা দেশের লজ্জা। হেমা মালিনীর মতো শিক্ষিত, স্বাধীনচেতা, রুচিশীল মহিলার কাছে তাই এটা আশা করিনি।”
অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আবার ভিন্নমত। তিনি বলেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে ওই মন্তব্য খুব ভুল নয়। গভীর উদ্বেগ থেকেই হেমাজি এমনটা বলেছেন। আমাদের মা-মাসিরা বললে কি আমরা এ ভাবে সমালোচনা করতাম?”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.