প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তায় জায়গায় জায়গায় পিচ উঠে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে খানা-খন্দ। সে জন্যই দুর্গাপুরের গোপালমাঠ থেকে পানাগড় রেল ওভারব্রিজ পর্যন্ত জাতীয় সড়কে বিপাকে পড়ছে যানবাহন। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
মঙ্গলবার সকালে বুদবুদের ধরলা গ্রামের কাছে এই রাস্তায় একটি গর্তকে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়েই মঙ্গলকোটের নতুনহাট থেকে দুর্গাপুরগামী বাসটি পোস্টে ধাক্কা মারে বলে পুলিশ ও এলাকাবাসীর অনুমান। প্রাণ যায় নয় জনের। ঘটনার পরেই স্বর্ণ চতুষ্টয় জাতীয় সড়ক প্রকল্পের অন্তর্গত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার অবিলম্বে সংস্কার দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দুর্গাপুরের মেনগেট, ওল্ড কোর্ট, ডিভিসি মোড়, এমএএমসি ব্রিজ, মুচিপাড়া, রাজবাঁধ, পানাগড়সর্বত্রই খানাখন্দে ভরা এই রাস্তা। দ্রুত গতির যান সামনে হঠাৎ গর্ত দেখে গতি কমাতে গেলেই বাধছে বিপত্তি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় থেকে রেল ওভারব্রিজ পেরিয়ে যেখানে রাস্তা ফের চার লেনের হয়েছে, সেই জায়গা। |
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেনের করা হয় ২০০১ সালে। পানাগড় থেকে ডানকুনি এবং পানাগড় থেকে বরাকর পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয় নির্দিষ্ট সময়েই। কিন্তু পানাগড়ে এসে সে কাজ থমকে যায়। রাস্তা সম্প্রসারণ করতে গেলে দোকান-বাজার, বাড়ি ভাঙা পড়বে। ফলে জাতীয় সড়কের দার্জিলিং মোড় থেকে পানাগড় বাজার পেরিয়ে ও পাশে রেল ওভারব্রিজ, সওয়া তিন কিলোমিটার এই অংশে চার লেনের কাজ হয়নি। পানাগড়ের দার্জিলিং মোড়ে এসে যোগ হয়েছে পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়কও। ফলে এই অংশে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। রাস্তার হালও খারাপ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গর্ত ভরাটের পাকাপাকি কোনও উদ্যোগ বেশ কিছুদিন হয়নি। বর্ষায় অবস্থা আরও সঙ্গীণ হয়েছে। মাঝে মাঝে তাপ্পি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে কিন্তু তা দায়সারা ভাবে। ফলে, দিন কয়েকের মধ্যেই তা উঠে যায়। আবার গর্ত ফিরে আসে রাস্তায়। দ্রুত গতিতে যেতে যেতে হঠাৎ সামনে গর্ত দেখে ব্রেক কষেন গাড়ির চালকেরা। সেই সময়ে পিছনের গাড়ির চালক সতর্ক না থাকলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। এমন রাস্তায় গাড়ির যন্ত্রাংশেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ চালকদের।
মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় বাস চালকের বেপরোয়া চালানোর পাশাপাশি প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, সামনের একটি গর্ত পাশ কাটাতে গিয়েই বাসটি পোস্টে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “চালক যে বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু রাস্তার মাঝে গর্ত না থাকলে হয়তো এই পরিস্থিতি হতো না।” তাঁর দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বাসটি বাঁ দিকের একটি বড় লরিকে পাশ কাটিয়ে ডান দিক ধরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন সামনের দিক থেকে একটি ছোট লরি রেল ওভারব্রিজ থেকে নেমে আসছিল। তাকেও কাটাতে যায় বাসটি। কিন্তু সামনে একটি গর্ত থাকায় বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। ধরলা গ্রামের বাসিন্দা তথা বিজেপি ব্লক সভাপতি সুদর্শন আকুড়ে বলেন, “রাস্তার গর্ত এড়াতে গিয়ে ট্রাফিক নীতি ভাঙছেন চালকেরা। ফলে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।”
এনএইচএআই সূত্রে জানানো হয়েছে, জাতীয় সড়কে খানাখন্দ হলেই তা ভরাট করে দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার বর্ষা বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সংস্থার দুর্গাপুরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর কৃষ্ণ মুরারী বলেন, “তাপ্পি দেওয়ার কাজ চলে নিরন্তর। কিন্তু বৃষ্টির তোড়ে সব উঠে যাচ্ছে।” পুজোর পরে ভাল ভাবে সংস্কারের কাজ হবে বলে তাঁর আশ্বাস। |