বেপরোয়া বাস কাড়ল নয় প্রাণ
ড়ের গতিতে লরিকে পাশ কাটাচ্ছিল বাস। উল্টো দিকে পানাগড় রেল ওভারব্রিজ থেকে নেমে আসছিল আর একটি ছোট লরি।
তাতেও হয়তো বাঁচানো যেত। কিন্তু সামনেই বড় গর্ত। কাটাতে গিয়ে পাশের লেন টপকে ডান দিকের পোস্টে গিয়ে ধাক্কা মারল বাস। ছাদ থেকে ছিটকে পড়ল কতগুলো শরীর। ভিতরে ওলোটপালট। খানিক গড়িয়ে রাস্তার পাশে আগাছার জঙ্গলে বাস উল্টে গেল।
রাত পর্যন্ত মৃত ৯, আহত জনা ষাটেক। বাসের চালক অবশ্য অক্ষত এবং বেপাত্তা। বাসটি আটক করে বুদবুদ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে মঙ্গলকোটের নতুনহাট থেকে দুর্গাপুরের বেনাচিতি যাচ্ছিল বাসটি। যাত্রীদের অনেকেই সব্জি বিক্রেতা। প্রতি দিনের মতোই তাঁরা যাচ্ছিলেন বেনাচিতি বাজারে। সকাল ৭টা ৪০ নাগাদ ২ নম্বর জাতীয় সড়কে বুদবুদ থানার ধরলা গ্রামের পাশে পেপসি গেটের সামনে দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই তিন জন মারা যান।
ঘটনাস্থলে মৃতদের দেহ বুদবুদ থানায়।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান এক জন। দুর্ঘটনার পরে ঘন্টাখানেক জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানজট হয়। এলাকার মানুষের সাহায্যে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই যে তিন জনের মৃত্যু হয় তাঁরা হলেন গুসকরার শান্তিপুরের দুলাল মণ্ডল (৩৫), আউশগ্রামের দিগনগরের মনোরঞ্জন দাস (৫০) ও ফরিদপুরের উৎপল মণ্ডল (৩২)। এঁদের এক জন সম্ভবত বাসের খালাসি। শেষ দু’জনের দেহ সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পড়ে ছিল। মঙ্গলকোটের চানকের সুপ্রিয় রায় (৬৫), দুর্গাপুরের বেনাচিতির নেতাজিনগর ৩ নম্বর কলোনির হরিপদ দাস (৪৫), আউশগ্রামের পঞ্চমৌলির মিহির বরু (৩৫), রামপদ মণ্ডল (৪৫) ও নারায়ণ ঘরুই (৪৫) বর্ধমান যাওয়ার পথে মারা যান। কলকাতার পথে নিয়ে যেতে মৃত্যু হয় অন্ডালের কাজোড়ার বাপি ধীবরের (৩৭)।
বর্ধমান মেডিক্যালে আহতেরা ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, আজ, বুধবার বর্ধমান মেডিক্যালের মর্গে ন’টি দেহের ময়নাতদন্ত হবে। ধরলা গ্রামের বাসিন্দারাই প্রথমে আহতদের উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। আট মহিলা-সহ ৩৩ জন বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি আছেন। পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পঁচিশ জনেরও বেশি আহত যাত্রীকে মানকর গ্রামীণ হাসপাতাল ও পুরষা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সকালে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কংক্রিটের পোস্ট তুবড়ে গিয়েছে। গোড়া সরে গিয়েছে ফুটখানেক। ছড়িয়ে রয়েছে চপ্পল-জুতো, টিফিন কৌটার ভাত। হাতব্যাগের মধ্যে ভাঙা ছাতা। রাস্তার পাশেই চায়ের দোকানের খাটিয়ায় বসে ছিলেন মঙ্গলকোটের শেখ মানিক। কোমরে চোট, চোখের পাশে রক্ত ঝড়ছে। তাঁর কথায়, “বাস জোরে চলছিল। হঠাৎই যেন নাগরদোলা হয়ে গেল! ছিটকে পড়লাম।” বাসের ছাদে ছিলেন মানকরের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা, দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি কারখানার কর্মী কৃষ্ণ বাউরি। রোজই আগের বাসে যান। বাড়িতে রান্নার দেরি হওয়ায় এই বাস ধরেছিলেন। মানকর গ্রামীণ হাসপাতালে শুয়ে তিনি বলেন, “ভিড় থাকায় বাধ্য হয়েই ছাদে উঠেছিলাম। হঠাৎ দেখি, বাস উল্টে যাচ্ছে। কিছু না ভেবেই ঝাঁপ দিই। তার পরে আর কিছু মনে নেই।” বর্ধমান মেডিক্যালে শুয়ে গুসকরার শেখ মনিরুল বলেন, “ওই বাসের বেশির ভাগ যাত্রীই বেনাচিতি বাজারে সব্জি নিয়ে যান। তাঁরাই আহত হয়েছেন বেশি।” আউশগ্রামের বাসিন্দা শেখ রবি ব্যবসার কাজে দুর্গাপুরে যাচ্ছিলেন। তাঁর মনে পড়ে, “পাশের যাত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ধাক্কা এল। মনে হল, যেন উড়ছি! মুহূর্তে সামনের গেটে গিয়ে আছড়ে পড়লাম। আর মনে নেই।” আউশগ্রামের পাগলি বাগদি বলেন, “রোজ আমরা ওই বাসেই সব্জি নিয়ে বেনাচিতি যাই। বাসের অবস্থা এতই ঝরঝরে যে রোজই মনে হত, একটা না একটা দুর্ঘটনা ঘটবে।” ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, বুদবুদের দেবদাস রায় সারা দিনই আহতদের নিয়ে মানকর-বর্ধমান করে বেড়িয়েছেন। তিনিও বলেন, “একে তো বাসের অবস্থা ঝরঝরে, তার উপরে জোরে যাচ্ছিল। বিপদ ঘটারই ছিল।” বাসের মালিককে অবশ্য রাত পর্যন্ত ধরা হয়নি।

ছবিগুলি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম ও উদিত সিংহ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.