টলমল পায়ে বলের পিছনে ছুটতে গিয়ে খোলা কুয়োয় পড়ে যায় বছর দেড়েকের শিশুটি। ভাইকে বাঁচাতে জলে ঝাপ দেয় তিন বছরের দিদিও। ঘণ্টা দেড়েক পরে দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাড়ি ফেরানো যায়নি কাউকেই।
মঙ্গলবার দুর্গাপুরের নাগার্জুন ৪ নম্বর বস্তিতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর ইস্পাতের ডিসপোজাল বিভাগের ঠিকা কর্মী প্রেম পাসোয়ান এ দিন কাজে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী নির্মলা, দুই ছেলে জিতু ও অঙ্কুর এবং মেয়ে উর্মিলা। বিকেলে পাশের জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে গিয়েছিলেন নির্মলাদেবী। বাড়িতে ঘুমোচ্ছিল বড় ছেলে জিতু। আর বাড়ির বাইরে খেলায় ব্যস্ত ছিল উর্মিলা ও অঙ্কুর। খেলতে খেলতেই তারা পাশের মৃগেন দাসের বাড়িতে চলে যায়। সেখানে উঠোনের পাশে একটি খোলা কুয়ো ছিল। |
খেলতে খেলতে কুয়োয় গড়িয়ে পড়ে যায় বলটি। বলের পিছনে হাঁটতে হাঁটতে কুয়োর কাছ চলে যায় অঙ্কুরও। মুহূর্তের মধ্যেই টাল সামলাতে না পেরে কুয়োয় পড়ে যায় সে। ততক্ষণে ভাইকে ধরতে ছুটে এসেছে দিদি উর্মিলাও। ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে সেও পড়ে যায় কুয়োয়। তলিয়ে যায় দু’জনেই। বাড়ি ফিরে ছেলে-মেয়েকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার জুড়ে দেন নির্মলাদেবী। চিৎকার শুনে আশপাশ থেকেও সবাই ছুটে আসেন। খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে কুয়োয় দু’জনের দেহ ভেসে ওঠে। তাদের উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, দু’জনেই মৃত। |
দুই শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে বস্তিতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জলের চাহিদা মেটাতে এই ধরণের কুয়োগুলি খোঁড়া হয়। স্নান, কাপড় কাচা, বাসন মাজা ও আরও প্রাত্যহিক কাজ সারা হয় এই জলে। অনেকে অবশ্য কুয়োর পাড় বাঁধিয়ে নেন বা কাজ সারা হলে কুয়োর মুখে কিছু চাপা দিয়ে দেন। সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে। আবার কিছু কুয়ো খোলাই থেকে যায়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে এমনই এক কুয়োয় পড়ে মারা গিয়েছিল পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঝর্ণাপল্লির সাড়ে তিন বছরের রনি রায় ও তার বোন রুমার। তারাও খেলতে খেলতেই কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল। নাগার্জুন ৪ নম্বর বস্তির বাসিন্দারা জানান, এ বার থেকে পাড়ার সমস্ত এই ধরণের কুয়োর মুখ যাতে কাজ শেষে বন্ধ করা হয় সেদিতে খেয়াল রাখবেন তাঁরা। |