নেই ব্লাড ব্যাঙ্ক। ব্লাড স্টোরেজ সেন্টারও বন্ধ টানা তিন বছর ধরে। একমাত্র এক্স-রে মেশিনটিও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে বছর খানেক ধরে। ডোমের অভাবে থমকে ময়না-তদন্ত। এই দীর্ঘ ‘নেই’ এর মধ্যেও চালু ছিল ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। কিন্তু গত পনেরো দিন ধরে সেখানেও হচ্ছে না কোনও অপারেশন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নিয়ম অনুযায়ী ২৭ জন নার্স থাকার কথা। কিন্তু রয়েছে ১৯ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন ১৯ জনের পরিবর্তে ৮ জন। তাই বন্ধ অপারেশন থিয়েটার। কর্তৃপক্ষ যতই কর্মী সংখ্যার অভাবের কথা বলুন না কেন সাধারণ মানুষ কিন্তু ওটি বন্ধের পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা নার্সিং হোমের মালিকদের মধ্যে অশুভ আাঁতাতের কথাও বলছেন রোগীরা।
ডোমকলের জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সম্পাদক আমারুল হক বলেন, “চিকিৎসক ও নার্সিং হোমের মালিকরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে ওটি বন্ধ রেখেছে। রোগীদের বাধ্য হয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে নার্সিংহোম থেকে অপারেশন করাতে বাধ্য হচ্ছেন।” দিন কয়েক আগে ডোমকলের কুপিলা গ্রামের মর্জিনা বিবি অ্যাপেনডিক্সের সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক সটান জানিয়ে দেন অপারেশন করতে হবে। মর্জিনা বিবি পড়ে যান অথৈ জলে। বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করার জন্য মোটা টাকা জোগাড় করার চিন্তায় পড়ে যান নিম্নবিত্ত ঘরের ওই আটপৌড়ে মহিলা। অবশেষে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অপারেশন করাতে হয় তাঁকে। মর্জিনা বিবি বলেন, “হাসপাতালের গেটেই দাঁড়িয়ে থাকেন নার্সিংহোমের লোকজন। হাসপাতাল থেকে বার হতেই তাঁদের খপ্পরে পরলাম। বাধ্য হয়ে অনেক টাকা খরচ করে অপারেশন করতে হল।” ভুক্তভোগী এক রোগীর আত্মীয়ের ক্ষোভ, ‘‘হাসপাতালে কিছুই নেই। টিমটিম করে কেবল ওটি চালু ছিল। সেটিও এখন বন্ধ। রোগীদের যে কারণে ছোটখাটো অপারেশনের জন্য দ্বারস্থ হতে হচ্ছে নার্সিংহোমে। সেখানে গলাকাটা বিল মেটাতে হচ্ছে গরীর রোগীদের।” বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যেই চেপে রেখেছেন। ওটি তালা ঝোলানোর খবর পৌঁছয়নি খোদ রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা ডোমকলের মহকুমা শাসক প্রশান্ত অধিকারীর কানে। অপারেশন না হওয়ার খবর শুনে আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গিমায় প্রশান্তবাবু বলেন, “আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। এতদিন ওটি বন্ধ থাকলে মানুষের ক্ষোভ স্বাভাবিক। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
রাজ্যের বেশিরভাগ হাসপাতালে চিকিৎসক কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। তাই বলে রোগী-স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দিতে হবে? কোন সদুত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল সুপার অরিন্দম পাল। আমতা আমতা করে তাঁর জবাব, “অনেক দিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু চলতি মাসের ১৩ তারিখে কয়েকজন নার্স আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে আর ওটি চালানো সম্ভব হয়নি।” সুস্থ হয়ে নার্সরা তো কাজে যোগ দিয়েছেন। তবু কেন চালু হল না ওটি? সুপারের দায়সারা উত্তর, “বেশ কয়েকদিন অব্যবহৃত থাকায় ওটি ঘরে নোংরা জমেছে। ঝাড়পোঁছ করে চালু হবে অপারেশন।” কিন্তু কবে? ততদিনে সীমান্তের হদ্দ গ্রামের গরিব রোগীদের ভোগান্তিই ভবিতব্য। |