জেলা থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে অধিকাংশ গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শয্যাযুক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কয়েকটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাত্র একটি-দু’টি সিলিন্ডার পড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু অধিকাংশ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থে অন্য অনেক কাজ করতে হয়। চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মচারীদের বেতনও দিতে হয়। এই পরিস্থিতিতে সমিতির অর্থে সিলিন্ডার ভরতে গেলে সমস্যা দেখা দেবে। সমস্যার কথা মানছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
কেন এই সমস্যা? দফতর সূত্রে খবর, জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের জন্য একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি থাকে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরের (সিএমএস)। এই সংস্থাই ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোরে (ডিআরএস) সিলিন্ডার সরবরাহ করে। পরে জেলা থেকে তা বিভিন্ন গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং শয্যাযুক্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফের নতুন করে চুক্তি করতে হবে। তাই এই সমস্যা। দফতর সূত্রে খবর, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফের চুক্তির তোড়জোড় চলছে। অর্থাত্ অক্টোবর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার বক্তব্য, “আপাতত রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকেই এমন নির্দেশ এসেছে।” তাঁর কথায়, “আগের সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তার ফলে এই পরিস্থিতি। নতুন করে ফের চুক্তি হলে এই সমস্যা থাকবে না।” জেলার এক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক বলছেন, “রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে কত টাকাই বা আসে? তার মধ্যে কত কাজ করতে হয়। আমার কেন্দ্রে একজন ঝাড়ুদার আছে। তাঁকে মাসে ৮০০ টাকা করে বেতন দিতে হয়। দু’টি ফ্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ১০০-১৫০ টাকা লাগে। জরুরি কিছু ওষুধপত্র কিনতে হয়। সংস্কার কাজ করতে হয়। এ বার সিলিন্ডারে অক্সিজেনও ভরতে হবে। দফতরের উচিত ছিল, বিকল্প কিছু চিন্তা করা।” সমস্যা মেনেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “এ ক্ষেত্রে করার কিছু নেই। রাজ্য থেকে নির্দেশ এসেছে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।”
জেলার হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো দেখভালের জন্য প্রতি বছর রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দ অর্থে যেমন জলের পাইপ লাইন মেরামত করা যায়, তেমন ওয়ার্ডের পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজ করা হয়। জরুরি ওষুধপত্রও কেনা যায়। এই খাতে প্রাপ্য অর্থ আবার সময় মতো বরাদ্দ হয় না বলে অভিযোগ। আগে হাসপাতালে কন্টিজেন্সি ফান্ড ছিল। জরুরি প্রয়োজনে এই তহবিলের টাকায় কাজ চালানো হত। এখন সেই তহবিল নেই। বদলে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখভালের জন্য প্রতি বছর রোগী কল্যাণ সমিতির খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। সামান্য কিছু মেরামত করার জন্যও এই অর্থের উপর নির্ভর করতে হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মহকুমা এবং ব্লক হাসপাতালগুলোর জন্য এই খাতে বছরে ১ লক্ষ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর জন্য বছরে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। জেলার এক গ্রামীণ হাসপাতালের আধিকারিক বলছেন, “রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থ হাসপাতালের কাছে কন্টিজেন্সি ফান্ডের মতো। প্রয়োজনে আলোচনার প্রেক্ষিতে সমিতির অর্থে স্যালাইনও কিনতে হয়। এই খাতে অর্থ না থাকলে সমস্যা হবেই।”
একাংশ গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আবার নানা সমস্যায় জর্জরিত। কোনও কেন্দ্র সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। কোথাও বা সংস্কারের অভাবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একাধিক ঘর ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে, জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার কাজ করতেই হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, “সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরতে হবে। হয়তো কিছু সমস্যা হবে। কিন্তু, কিছু করার নেই।” |