আলাদা রাজ্যের দাবির ব্যাপারে কেন্দ্র সাড়া না-দিলে ‘অন্য প্রস্তাব’ দিতে চান বিমল গুরুঙ্গ!
ক’দিন আগেই পরোক্ষে রাজ্যকে আলোচনার বার্তা দিয়েছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান। কিন্তু সেই ইঙ্গিত উড়িয়ে পাহাড়ের আন্দোলনের প্রতি আরও কড়া অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রেফতার করা হয়েছে মোর্চার একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে। অন্য দিকে দিল্লির কাছ থেকেও গোর্খাল্যান্ডের দাবি সম্পর্কে কোনও সাড়া পাননি গুরুঙ্গ। কোণঠাসা মোর্চা প্রধান এ বার তাই পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে খানিকটা সরে এসে বিকল্প পথের সন্ধান শুরু করলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের মনোভাব বুঝতে এ দিনই দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিকে ফের দিল্লি পাঠিয়েছেন তিনি। |
মঙ্গলবার দার্জিলিঙের মোটরস্ট্যান্ড থেকে ছোটদের মিছিল চলার সময়ে মোর্চা সভাপতি বলেন, “আমরা রাজ্যের সঙ্গে কোনও কথা বলব না। কেন্দ্রকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে। কেন্দ্র কত দিন চুপ করে বসে থাকতে পারবে? আরও কিছু দিন অপেক্ষা করব। কেন্দ্রের তরফে একান্তই যদি আলাদা রাজ্যের দাবির ব্যাপারে কোনও সাড়া না মেলে, তবে অন্য প্রস্তাব দেব।”
কী প্রস্তাব তাঁরা দিতে চান কেন্দ্রকে? গুরুঙ্গের জবাব, “গোর্খাল্যান্ড দিতে যদি সমস্যা থাকে, তা হলে আমরা এমন কিছু চাইব, যা পশ্চিমবঙ্গের অংশ হবে না।” আজ, বুধবার মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। যেখানে মোর্চার সব শাখা সংগঠনের প্রতিনিধিরাও থাকার কথা। যেখানে আগামী দিনের কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি হবে।
মোর্চার অন্দরের খবর, দার্জিলিংকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সমমর্যাদা দেওয়া অথবা জিটিএ-এর মতো কোনও ব্যবস্থাকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা এই দুই বিকল্প মাথায় রয়েছে গুরুঙ্গের। এই দুয়ের মধ্যে কোনও একটি পথ নেওয়া সম্ভব কিনা, তা বুঝতেই দিল্লি গিয়েছেন রোশন। এ দিন অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। তাঁর কথায়, “দিল্লিতে কোথায়, কী ব্যাপারে কথা বলব তা বলতে পারব না। যথাসময়ে সভাপতি যা বলার বলবেন।” |
রাজ্য সরকার অবশ্য আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, কোনও দাবিই মানা সম্ভব নয় বলে আগাগোড়াই স্পষ্ট ভাবে মোর্চাকে জানিয়ে দিয়েছে। তবে পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক করা হলে যে মোর্চাকে আলোচনা ডাকা হবে সে কথা আবারও জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনও বলিনি আলোচনা করব না। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এলে তবেই আলোচনা সম্ভব।” মোর্চা রাজ্যকে এনিয়ে কেন্দ্রকে পাশে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর ব্যাপারে ব্যাপারে কেন্দ্রেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।”
এ দিকে, মঙ্গলবারই ফের একটি বেসরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মোর্চার এক দল কর্মীর বিরুদ্ধে। কালিম্পঙের তিন মাইল এলাকায় ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ মোর্চা কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গুরুঙ্গ অবশ্য বলেন, “আমাদের কেউ ওই ধরনের কাজে যুক্ত নয়। এটা রাজ্য সরকারের ষড়যন্ত্র।”
গুরুঙ্গের অভিযোগ, পাহাড়ে অশান্তি রয়েছে এটা বোঝাতে ও জনসমক্ষে মোর্চাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, “যে হেতু পুলিশ শুধু মোর্চার নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে, তাই আন্দোলন আগামী দিনে আরও তীব্র করা হবে। ছাত্র-যুব, ছোটদের শুধু নয়, নারী মোর্চার নেতা-কর্মীদেরও আরও বেশি করে আন্দোলনে সামিল হতে হবে।”
এ দিন সকাল থেকে পাহাড়ের তিন মহকুমায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মিছিল করে, স্লোগান দেয়। যা নিয়ে পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতারা অনেকেই ক্ষুব্ধ। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেছেন, “আমরাও গোর্খাল্যান্ড চাই। তা বলে বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় নামাব না।
এতে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়।” কিন্তু, গুরুঙ্গের যুক্তি, “ছোটরা পাহাড়ের ভবিষ্যৎ। গোর্খাল্যান্ড হলে ওরাই লাভবান হবে। তা ছাড়া ,আমরা কাউকে জোর করে মিছিল আনিনি।” |