প্রবল বৃষ্টিতে জলবন্দিদের দুর্ভোগ চরমে
ক দিকে পাঁশকুড়ায় জল নামছে, অন্য দিকে বাড়ছে তমলুকে। কাঁসাইয়ের ভাঙা বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হলেও সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ব্লকের বিষ্ণুবাড়, পদুমপুর এলাকার বেশ কিছু গ্রামে নতুন করে জল ঢুকেছে। মঙ্গলবার সকালের বৃষ্টিতে জলবন্দিদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তার উপরে বাঁধ মেরামতির মতো বিষয় নিয়েও পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল বেধে যায়।
পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে কাঁসাই বাঁধের যে ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ সোমবার শুরু হয়েছিল, তা জোরকদমে চলছে মঙ্গলবারও। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে বাঁধ মেরামতের কাজ তদারকি করছিলেন এ দিন। তবে, সামগ্রিক ভাবে কাজের দেখভাল করছিলেন পাশের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান। তাতেই গোঁসা হয় স্থানীয় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমজেদ আলির। মঙ্গলবার সন্ধেয় বাঁধে যাওয়ার পথে আনিসুরের পথ আটকান আমজেদ আলির লোকজন। এই নিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল বাধলে পুলিশ আসে। অভিযোগ আমজেদের অনুগামীরা পুলিশের দিকেও তেড়ে যান।
বন্যা দুর্গতদের জন্য যাচ্ছে রান্না করা খাবার। তমলুকের রাজনগরে।
একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের সাংবাদিকও মার খেয়েছেন। পরে অবশ্য পুলিশই লাঠি চালিয়ে জমায়েত ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও রাতে বাঁধ মেরামতের কাজ দেখতে যান পাঁশকুড়ায়। সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার অরুণাভ ভট্টাচার্যের আশ্বাস, “বাঁধ মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে রাতের মধ্যে। কংসাবতী ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।”
যদিও স্থানীয় সূত্রে খবর, বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে মঙ্গলবারও জল ঢুকেছে। ওই জল তমলুকের দিকে এসে নতুন করে কিছু এলাকা ভাসিয়েছে। পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর-১, পুরুষোত্তমপুর, রাধাবল্লভচক ও রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামের জলস্তর কিছুটা নামলেও তমলুক ব্লকের অনন্তপুর ১, ২, শ্রীরামপুর ১, ২, বিষ্ণুবাড় ১, ২, পদুমপুর ১, ২ পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও সংলগ্ন শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ওশুতপুর, বল্লুক ২ পঞ্চায়েতের উত্তর ওশুতপুর গ্রামে জলস্তর বেড়েছে।
জল কমেনি পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়।
তমলুক-শ্রীরামপুর রাজ্য সড়কে মঙ্গলবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যার জলে ডুবে থাকা গ্রামগুলিতে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থা না থাকায় বহু বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে বাড়িতে আটকে রয়েছেন। যেমন, তমলুকের রাজনগর, ধনিচক, আশুদাপাইকবাড় প্রভৃতি এলাকায় মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি নৌকা আসেনি। পানীয় জল, খাবারের সঙ্কট তো হচ্ছেই, অসুস্থদের চিকিত্‌সাতেও সমস্যা হচ্ছে। অনন্তপুর-২ পঞ্চায়েতের ধনিচক গ্রামের বাসিন্দা বরুণ দিণ্ডা, সুরেন ভক্তা পরিবারের লোকজনদের নিয়ে গত রবিবার থেকে ধনিচক খালের পাকা সেতুর উপর ত্রিপলের ছাউনি করে আশ্রয় নিয়েছেন। বরুণ বলেন, ‘‘রবিবার থেকে এখানে আমরা এখানে রয়েছি। নৌকা নেই। শুনেছি এলাকায় একটি স্পিড বোট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই স্পিড বোট এখানে আসেনি। স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারছি না। এখানে মেডিক্যাল টিমও আসেনি।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ “জমা জলে পচা দুর্গন্ধ ছাড়চ্ছে এলাকায়। পানীয় জলের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পেটের রোগ-সহ নানারকম অসুখ হচ্ছে। চিকিত্‌সার জন্য অবিলম্বে ওষুধ পৌঁছনো প্রয়োজন। এই নিয়ে প্রশাসনিক ভাবে তত্‌পরতা দেখা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, সরকারি ১৭টি স্পিডবোট, কিছু দেশি নৌকা উদ্ধারকাজে নেমেছে। প্লাবিত বিভিন্ন এলাকায় মেডিক্যাল টিম রয়েছে।
দিঘায় নুলিয়াদের জন্য আনা পাঁচটা স্পিড বোটও পাঁশকুড়ার বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বৃষ্টি বাড়ায় ঘাটালে জীর্ণ বাঁধগুলি নিয়ে চিন্তায় আছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা এবং সেচ দফতরের লোকজন বালির বস্তা দিয়ে দাসপুরের কলমীজোড়-সহ সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ উঁচু করতে শুরু করেছেন। মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “জলাধার থেকে জল না ছাড়ালে আর ভয় নেই। বাঁধগুলি নিয়েই যা চিন্তা। আমরা সতর্ক রয়েছি।”
এদিকে এখনও ঘাটাল ও দাসপুর-১ ব্লকের শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন। ডুবে রয়েছে ঘাটাল শহরের ১২টি ওয়ার্ডও। এদিন দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় দাসপুরের ধর্মা দানিকোলা, চকবোয়ালিয়া, সামাট-সহ বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। মাথার উপরে ত্রিপলের ছাউনি বৃষ্টির জল আটকাতে পারছে না। স্থানীয় আকাশ কারক বলেন, “সারাদিন ধরে ভিজছি। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও ভিজে যাচ্ছে। জ্বরে পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রশাসনের কোনও হুঁশ নেই।” যদিও ঘাটালের মহকুমাশাসক আংশুমান অধিকারী বলেন, “নদী বাঁধে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের শুকনো খাবার এবং পর্যাপ্ত ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। আমরা ত্রাণ শিবিরেরও ব্যবস্থা করছি। যদি প্রয়োজন হয়-তা হলে সরিয়ে দেওয়া হবে।”

ছবি: পার্থপ্রতিম দাস


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.