|
|
|
|
পুলিশের বৈঠক |
কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করলে ফের মাওবাদী হামলার আশঙ্কা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হলে জঙ্গলমহলে ফের অশান্তির আগুন ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছে রাজ্য পুলিশ। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে জঙ্গলমহলের তিন জেলার পুলিশ সুপার, দফতরের অন্য আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক বৈঠকে সেই আশঙ্কার কথাই উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন পুলিশ কর্তারা। আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, “কী আলোচনা হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তা মোকাবিলায় পুলিশি কৌশল কী হবে তা নিয়েই এ দিন আলোচনা হয়েছে।”
জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি শান্ত এই যুক্তিতে আধাসেনা প্রত্যাহার করতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রথম দফায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে এক ব্যাটেলিয়ন (এক হাজার সিআরপি জওয়ান) তুলে নিতে চেয়ে ইতিমধ্যে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব নির্মলজিত্ সিংহ কালসি। তবে এই সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রকে পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন বলে সরকার সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হলে কী কী সমস্যা হতে পারে, সেই রিপোর্ট তৈরি করতেই এ দিন বৈঠক করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “বাহিনী রাখা বা প্রত্যাহার নিয়ে তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে সমস্যার কথা পর্যালোচনা করে সরকারকে জানাতে পারি।” |
|
মেদিনীপুরে বৈঠক শেষে পুলিশ কর্তারা।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন দু’দফায় বৈঠক হয়। প্রথম বৈঠকটি হয়, মেদিনীপুর শহরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে। সেখানে আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) অজয় নন্দা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূমের পুলিশ সুপারররা ছাড়াও কয়েকজন ডিএসপি (অপারেশন) উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দু’ঘন্টা ধরে বৈঠক চলে। দ্বিতীয় বৈঠকটি হয় পুলিশ লাইনের ভেতরে ‘সেফ হাউসে’। সেখানে পুলিশের এই আধিকারিকদের পাশাপাশি ছিলেন সিআরপির ডিআইজি ও বিভিন্ন ব্যাটেলিয়ানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডান্টরা। রাজ্য পুলিশ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী, দু’পক্ষই আশঙ্কা প্রকাশ করে যে বাহিনী প্রত্যাহার হলে মাওবাদী সক্রিয়তা বাড়বে।
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে মাওবাদী সক্রিয়তা থিতিয়েছে। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মাওবাদী নেতা কিষেনজির মৃত্যুর পরে গত দু’বছরে আর কোনও নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। উল্টে একাধিক মাওবাদী নেতা-নেত্রী আত্মসমর্পণ করেছেন। জঙ্গলমহলে এই শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, একাধিক জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প থাকায় পুলিশের জনসংযোগ বেড়েছে। অনেক গ্রামেই মানুষ সাহস করে মাওবাদী সংক্রান্ত খবর পুলিশকে দিচ্ছে। এই পরিবেশে মাওবাদীরাও নতুন করে সংগঠন বাড়াতে পারছে না। তবে তারা একেবারে বসে রয়েছে এমনও নয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার সীমানা লাগোয়া এলাকায় এখনও মাওবাদীদের আনাগোনা রয়েছে। এ দিনের বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, এই এলাকায় বর্তমানে যে সব মাওবাদী নেতার আনাগোনা রয়েছে, তারা অনেকেই নতুন মুখ। এদের ছবি পুলিশের কাছে নেই। ফলে, সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া বিভিন্ন গ্রামে এখনও কিছু মানুষ মাওবাদীদের সমর্থন করেন।
পুলিশ কর্তাদের অভিমত, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প উঠে গেলে বাসিন্দাদের মনে চূড়ান্ত ভীতির সৃষ্টি হবে। ফলে মাওবাদী সংক্রান্ত তথ্য পুলিশের কাছে আসা কমে যাবো। তাতে মাওবাদীদের সাহস বাড়বে। এক পদস্থ পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, এ দিনের বৈঠকে এই আশঙ্কার কথাই আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানানো হবে। |
পুরনো খবর: বাহিনী তুলছে দিল্লি, প্রবল আপত্তি রাজ্যের |
|
|
|
|
|