জঙ্গলমহল বাহিনী তুলছে দিল্লি, প্রবল আপত্তি রাজ্যের
ঙ্গলমহলের পরিস্থিতি শান্ত এই যুক্তি দেখিয়ে সেখান থেকে আধাসেনা প্রত্যাহার করতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রথম দফায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে এক ব্যাটেলিয়ন (এক হাজার সিআরপি জওয়ান) তুলে নিতে চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব নির্মলজিৎ সিংহ কালসি। লালগড় অপারেশন শুরু হওয়ার চার বছর পরে এই প্রথম বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। নর্থ ব্লকের এই সিদ্ধান্তে কিন্তু তীব্র আপত্তি জানিয়েছে মহাকরণ। সরকারি সূত্রে খবর, কেন্দ্রকে পাল্টা চিঠি দিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন। তবে এই আপত্তি দেখিয়েও বাহিনী-প্রত্যাহার কি আদৌ ঠেকানো যাবে প্রশ্ন রয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের মধ্যেই। এবং এর ফলে নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত শুরু হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব সম্প্রতি রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, গত দু’বছর ধরে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি শান্তই রয়েছে। খুনোখুনি বন্ধ। কয়েকশো মাওবাদী নেতা-কর্মী এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন বা আত্মসমর্পণ করেছেন। অন্য দিকে, ছত্তীসগঢ় এবং ওড়িশায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে ওই সব এলাকায় পাঠাতে হবে।
রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশ এর মধ্যে রাজনীতি দেখছে। লোকসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের ভার পুরোপুরি রাজ্য পুলিশের হাতে ছেড়ে দিতেই কেন্দ্রের এই পরিকল্পনা বলে মনে করছেন তাঁরা। যদিও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মনে করেন, “ওই এলাকা আপাতত শান্ত বলেই হয়তো দিল্লি বাহিনী প্রত্যাহার করতে চাইছে। এটা কেন্দ্র-রাজ্যের ব্যাপার। রাজ্য সরকারের এখনই কথা বলা উচিত।” কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইঞা বলেন, “কেন্দ্র-রাজ্য উভয় পক্ষই যদি মনে করে রাজ্য পুলিশই জঙ্গলমহলের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম, তা হলে সিআরপি তুলে নেওয়া যেতেই পারে।” মানসের কটাক্ষ, “এই যৌথ বাহিনী আসা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছিল। এখন ভিন্ন সুর কেন?” রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “কোনও অবস্থাতেই জঙ্গলমহল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার মানা হবে না।” রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তাও বলেন, “অত্যন্ত আপত্তিকর সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রের এই একতরফা বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মানবে না রাজ্য। নতুন করে জঙ্গলমহলে অশান্তি তৈরি হয়, এমন কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না।” তবে স্বরাষ্ট্র দফতরেরই একাংশের বক্তব্য, যদিও সাধারণত এমন কাজ করে না তারা, তবু চাইলে রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে বাহিনী তুলে নিতে পারে দিল্লি।
রাজ্য সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ কী? স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, পাহাড়ে টানা অশান্তি চলছে। সেখানে আধাসেনা নামাতে হয়েছে। এমন সময় দিল্লি থেকে এসেছে এই চিঠি। যেখানে বলা হয়েছে, জঙ্গলমহলে যে ৩৯ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন রয়েছে, তার থেকে এক ব্যাটেলিয়ন বা ১০ কোম্পানি তুলে নেওয়া হবে। তা হলে তো জঙ্গলমহলও নিয়েও আশঙ্কার জায়গা তৈরি হবে। কারণ, গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ফের জঙ্গলমহলে সক্রিয় হওয়ার ছক কষছে মাওবাদীরা। যদি সেই ভোটের ৭-৮ মাস আগে থেকেই সিআরপি তুলে নেওয়া শুরু হয়, তা হলে ফের মাওবাদীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ২০০৯ সালে ‘লালগড় অপারেশন’ শুরুর সময় যে পরিস্থিতি ছিল, তার পুনরাবৃত্তি হওয়ারও যথেষ্ট আশঙ্কা।
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, জঙ্গলমহলে যে ৩৯ কোম্পানি বাহিনী রয়েছে, তার মধ্যে পাঁচ কোম্পানি নাগা বাহিনী। মূলত পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে রাখা হয়েছিল তাদের। এ ছাড়া বিশেষ অপারেশনের জন্য কোবরার তিনটি দলও এখন জঙ্গলমহলে রয়েছে। এই ৩৯ কোম্পানি থেকে ১০ কোম্পানি তুলে নিলে জঙ্গলমহলেও নতুন করে অশান্তি শুরু হতে পারে বলে মহাকরণের আশঙ্কা। বিশেষ করে পাহাড়ে যখন গোলমাল চলছে, তখনই জঙ্গলমহলকে আর অশান্ত দেখতে চাইছে না রাজ্য সরকার।
কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নিলে গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে কেন?
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা ফের সক্রিয় হতে শুরু করেছে। মাওবাদী নেতা বিকাশ তাঁর দলবল নিয়ে মাঝে-মধ্যেই লালগড় এলাকায় আসছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় ঘোরাফেরা করছে রঞ্জিত পাল ও তাঁর স্কোয়াড। সব মিলিয়ে ১০-১২টি স্কোয়াডের ৭০-৭৫ জন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আনাগোনা করছে বলে নজরে এসেছে গোয়েন্দাদের। যদিও তারা জঙ্গমহলে এখনও ঘাঁটি গাড়তে পারেনি। ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশা সীমানায় এসে তারা ফিরে যাচ্ছে। ওই পুলিশ কর্তার ব্যাখ্যা, “জঙ্গলমহল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার শুরু হলে প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকে মাওবাদীরা ফের এ রাজ্যে ঢুকতে শুরু করবে। আবার দল পাকিয়ে গোলমাল শুরু করবে। তাই কোনও ভাবেই সিআরপি প্রত্যাহারে রাজি হবে না রাজ্য।” কিন্তু রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও বাহিনী প্রত্যাহার করা হলে দিল্লির সঙ্গে ফের সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করেন ওই কর্তা। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর শালবনিতে জিন্দালদের কারখানা উদ্বোধন করে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গাড়ি যে রাস্তায় ফিরেছিল, সেই পথে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। অভিযোগ, ওই হামলার পর পুলিশি তল্লাশিতে ছিতামণি মুর্মু নামে এক বৃদ্ধার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ কয়েক জন স্কুলপড়ুয়াকে গ্রেফতার করে। তার প্রতিবাদে ওই বছরের ৮ নভেম্বর থেকে জঙ্গলমহল জুড়ে আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তৈরি হয় পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি। তাদের অবরোধের জেরে লালগড় এলাকা কার্যত মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। এর মধ্যেই ২০০৯ এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা নির্বাচন হয়। তার পরেই সেই বছরের ১৮ জুন থেকে শুরু হয় ‘অপারেশন লালগড়’। রাজ্যের আবেদনে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে সহায়তা করে দিল্লি। সেই থেকেই জঙ্গলমহল কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। আগে কখনও কেন্দ্র বাহিনী তুলে নেওয়ার কথা বলেনি। এ বার বলল।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.