ভোটের জঙ্গলমহল
পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান না দেখে বিস্ময়
বে আড়মোড়া ভেঙে বুথমুখো হতে শুরু করেছে জঙ্গলমহল। বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের খেড়িয়ারাতা বুথে পৌঁছে বৃদ্ধ মনোহর মাহাতো অবাক। বলে ফেললেন, “গেল বার ভোটে (২০১১) তো চারদিক জওয়ানে-জওয়ানে ছয়লাপ ছিল। এ বার দেখছি কিছুই নেই। শুধু বন্দুক আর লাঠি হাতে পুলিশ।” যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এত চাপানউতোর, মামলা-মোকদ্দমা, ভোটের দিন বদল, বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম দফায় জঙ্গলমহলে তাদের দেখাই গেল না।
কথা ছিল, নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হবে এলাকা। সদা-সক্রিয় কেন্দ্রীয় বাহিনী জঙ্গল-রাস্তায় টহল দেবে, আকাশপথে নজরদারি চালাবে কপ্টার। এ দিন লালগড়-বেলপাহাড়ি, বাঘমুণ্ডি-বলরামপুরের মতো পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের একদা মাওবাদী-উপদ্রুত এলাকাতেও কখনও সখনও দেখা মিলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর। তা-ও বুথে নয়, জঙ্গল-রাস্তায় তল্লাশিতে। বাঁশপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোর, আমলাশোলের মতো স্পর্শকাতর এলাকার বুথেও ছিল রাজ্য পুলিশের দু’জন বন্দুকধারী, আর দু’জন লাঠিধারী কর্মী। আর নজরদারির কপ্টার চোখে পড়েনি। যদিও পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, এক বার কপ্টার উড়েছে।
নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ‘অকেজো’ করে রাখা নিয়ে সরব বিরোধীরা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর অভিযোগ, “পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ঘুরেছে মোটরবাইক-বাহিনী।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার এবং পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপও বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।” সবংয়ে ভোট দিতে গিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, “পক্ষপাত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অকেজো করে রেখেছে শাসকদল।” একই কথা আব্দুল মান্নানেরও।
ভরসা সেই লাঠিধারী পুলিশই। আমলাশোলের বুথে, বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকা-না থাকায় নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি জোর দিচ্ছেন মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের উপরে। জনাইয়ে সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে জঙ্গলমহলে শুধু কান্না আর রক্ত দেখা যেত। ৩৫ বছর পরে মানুষ সেখানে ভাল ভাবে ভোট দিল।”
জঙ্গলমহলে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকার কথা মানতে নারাজ নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “আমাদের কাছে এ অভিযোগ কেউ করেনি।” কমিশনের ব্যাখ্যা, মাওবাদী-উপদ্রুত এলাকায় বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রই উত্তেজনাপ্রবণ ও অনেক ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রে একটিই বুথ। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ অনুযায়ী অতি উত্তেজনাপ্রবণ বুথে চার জন সশস্ত্র রক্ষী ও উত্তেজনাপ্রবণ বুথে দু’জন রক্ষী দিতে হবে। অথচ কেন্দ্রীয় বিধি অনুযায়ী মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় এক সেকশন (সাত রক্ষী)-এর কম বাহিনী মোতায়েন করা যায় না। ফলে, অনেক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো যায়নি। তাপসবাবুর দাবি, “ওই জওয়ানদের পুলিশ সেক্টরে রাখা হয়েছে। তাঁরা টহলও দিয়েছেন।”
পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকেরাও বাহিনীর অনুপস্থিতির অভিযোগ মানতে চাননি। পশ্চিম মেদিনীপুরে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দীপক ঘোষের দাবি, “যেখানে গিয়েছি, দেখেছি বাহিনী টহল দিচ্ছে।” তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পর্যবেক্ষকদের পাহারায় অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন আগেই জানিয়েছিল, জঙ্গলমহলের তিন জেলায় (পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া) মোট ১০ হাজার ৩৮টি বুথের মধ্যে ৭,৩৪২টিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না। ভোট হবে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে। তার পরেও শুধু ভোটের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরে আসে ৮৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। মাওবাদী মোকাবিলায় আগে থেকেই মোতায়েন ছিল ৩৪ কোম্পানি। কিন্তু বাহিনীর জওয়ানদের দেখাই যায়নি। ঝাড়গ্রাম, শালবনি, গোয়ালতোড় ও মেদিনীপুর সদরের উত্তেজনাপ্রবণ বুথগুলিতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী চোখে পড়েনি। এক সময়ে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল পুরুলিয়ার বলরামপুর। সেখানকার ঘাটবেড়ায় বুথ সামলেছেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশকর্মীরা। একই ছবি বলরামপুরের কুমারডিতেও।
তুলনায় অবস্থা ভাল ছিল বাঁকুড়ায়। সেখানে দিনভরই জঙ্গলপথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল চলেছে। বিশেষ করে বাঁকুড়ার মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা রানিবাঁধ, বারিকুল, সারেঙ্গা, রাইপুরের কিছু বুথেও বাহিনীকে দেখা গিয়েছে।
শেষবেলায় এই ছবি একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে। লালগড়ের বীড়কাঁড়, নারচ্যা বুথে দেখা যায় সিআরপি জওয়ানদের। ভোটারদের মধ্যে তখন গুঞ্জন, “সারাটা দিন এরা ছিল কোথায়!”

(সহ প্রতিবেদন: কিংশুক গুপ্ত, কিংশুক আইচ, প্রশান্ত পাল ও দেবব্রত দাস)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.