এক সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর তাঁর আস্থা ছিল না। গত লোকসভা ভোটেও সঙ্গীদের সঙ্গে তিনি ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। মাওবাদীদের সেই অযোধ্যা স্কোয়াডের প্রাক্তন এরিয়া কমান্ডার নন্দ কুমার ওরফে আনন্দ কুমার এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিলেন। একা নন, জনগনের কমিটির আন্দোলনের কিছু মুখও ভোট দিলেন। তাঁদের অনেকে আবার শাসক দলের হয়ে ভোটের কাজে দিনভর ব্যস্তও থাকলেন। তবে জনগণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতোকে জেল থেকে মুক্তি না দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁর পরিবারের সদস্যেরা বুথমুখো হলেন না।
একদা মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল বলে পরিচিত পুরুলিয়ার বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া এলাকার কুমারডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে গ্রামবাসীদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিলেন নন্দ কুমার। জামিনে মুক্ত থাকা নন্দ বলেন, “শেষ ভোট দিয়েছিলাম ২০০৬ সালে, বিধানসভার ভোট।” পরের বছর তিনি মাওবাদীদের সঙ্গে যোগ দেন। পুলিশের তথ্য, নন্দর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ১৬টি নাশকতার মামলা রয়েছে। ধরার জন্য তাঁর ছবি দিয়েও পুলিশ পোস্টারও সেঁটেছিল। ২০১০-এর অগস্টে বাঘমুণ্ডির চড়িদা গ্রামে খোঁজ পেয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। জেল থেকে ছাড়া পান গত বছর পুজোর আগে। এখন ইটের ব্যবসা করছেন। আর ছোটদের খেলাধুলা শেখাচ্ছেন। বুথ থেকে বেরিয়ে বলেন, “মাওবাদীদের সঙ্গে থাকার সময় ২০০৯-এ লোকসভা ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলাম। তাও কিছু লোক ভোট দিয়েছিল। আমরা নজর রেখেছিলাম। কিন্তু এখন মন পাল্টে গিয়েছে।”
তবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী নেতা-নেত্রী রাজারাম সোরেন ওরফে সাগেন সাঁওতাল, জাগরী বাস্কে, দুর্যোধন রাজোয়াড়, করন কৈবর্ত, মৌ পাহাড়িয়া, আকরি সহিসরা অবশ্য ভোট দিতে পারলেন না। তাঁদের বেশির ভাগ স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওঁদের কারও ভোটার কার্ড নেই। তাই এ দিন তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। ওঁরা টিভি দেখে দিন কাটিয়েছেন। |
লালগড় ব্লকের ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শালবনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে তৃণমূলের হয়ে তদারকি করছিলেন জনগণের কমিটির এক সময়কার প্রধান মুখপাত্র অসিত মাহাতো। বললেন, “পরিস্থিতি পাল্টেছে। তৃণমূলের নেতৃত্বে উন্নয়নের যজ্ঞ চলছে। ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফের তা প্রমাণ করল।” জনগণের কমিটির এক সময়ের নেতা শ্যামল মাহাতো (যুব তৃণমূলের লালগড় অঞ্চল সভাপতি) ও মনোজ মাহাতো (গত বিধানসভা ভোটে ছত্রধরের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন, এখন তৃণমূল নেতা) বলেন, “ভোট দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। জনগণের কমিটির হয়ে কাজ করার সময়ও আমরা ভোট দেওয়ার কথাই বলতাম।”
লালগড় ব্লকের কাঁটাপাহাড়ি (সিজুয়া) গ্রাম পঞ্চায়েতের নাড়ুজ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিলেন একদা জনগণের কমিটির সভাপতি নিহত লালমোহন টুডুর স্ত্রী লক্ষ্মীমণি টুডু ও তাঁর মেয়ে ললিতা টুডু। লক্ষ্মীমণি বলেন, “চাষবাসের জমিটুকুই সম্বল। সরকারি কোনও সাহায্য পাই না। সংসার চালানোই দায়!”
ছত্রধর মাহাতোর মা বেদনবালা মাহাতো ফুঁসে উঠলেন। বললেন, “কেন ভোট দেব? মমতা ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল সব বন্দিদের মুক্তি দেবে। কই আমার ছেলেকে তো মুক্তি দিল না!” ছত্রধরের বাবার অভিযোগ, “আগের সরকার আর এই সরকারের কোনও পার্থক্য নেই।” |