তিনি— আইবিএলে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন প্লেয়ারের দল মুম্বই মাস্টার্সের মালিক!
তিনি— সুনীল গাওস্কর! ভারতীয় খেলাধুলোয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের ইতিহাসে আইপিএলে
কেকেআরের
শাহরুখ খানের পরেই সম্ভবত সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক। তবু মুম্বইয়ের ব্যাডমিন্টন দল গড়ার
ব্যাপারে গাওস্করের নিজের এতটুকু কোনও মতামত ছিল না! শুধুমাত্র আইবিএল নিলামে ভারতীয় ক্রিকেটের
চিরশ্রেষ্ঠ ওপেনারের একটাই পরামর্শ ছিল— “বিশ্বের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন তারকা লি চং-কে কেনার
পিছনে
আমাদের ছোটা উচিত।” দেশের প্রথম অভিনব ব্যাডমিন্টন লিগ সেমিফাইনালে
পৌঁছনোর
চব্বিশ ঘণ্টা
আগে
আইবিএল নিয়ে গোটা দেশের মিডিয়ার মধ্যে প্রথম আনন্দবাজারে
মুখ খুলে নিলামে
নিজের দলের গেমপ্ল্যান ফাঁস করলেন গাওস্কর। |
“মুম্বই মাস্টার্সের দল গড়া নিয়ে আমার কোনও মতামত ছিল না,” বলে এ দিন ফোনে গাওস্কর যোগ করলেন, “তবে সত্যি বলতে কী, আইবিএলের নিলামের সময় আমার একটা ছোট্ট অবদান ছিল আমাদের দল গড়ার ব্যাপারে। টিম ম্যানেজমেন্টকে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম— লি চং-এর জন্য শেষ পর্যন্ত যেও।” সে দিন নিজের দলকে এই পরামর্শ দেওয়ার পিছনে এ দিন সানি-র ব্যাখ্যা, “লি চং হল ওয়ার্ল্ড ক্লাস প্লেয়ার। ওকে পেলে আমরা শুধু পুরুষ সিঙ্গলসেই ব্যবহার করতে পারব তা-ই নয়। প্রয়োজনে ডাবলস আর মিক্সড ডাবলসেও নামাতে পারব। যার মানে মুম্বই মাস্টার্সের হয়ে একটা টাইয়ে পাঁচটার মধ্যে তিনটে ম্যাচেই কোর্টে বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার থাকল।” প্রায় অর্ধ শতাব্দীর কাছাকাছি সুনীল গাওস্কর বলতে কোটি কোটি ক্রিকেট রসিক জানেন, তর্কাতীত ভাবে ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যানকে। আর ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ধুরন্ধর অধিনায়ককে। কিন্তু গাওস্কর নিজে আর একটা তথ্য জানাচ্ছেন। সেটা কী? গাওস্করই বলে দিলেন, “বেশির ভাগ মানুষের হয়তো অবাক লাগতে পারে! কিন্তু আমি সবাইকে জানাতে চাই যে, ব্যাডমিন্টন আমার ফার্স্ট লাভ!” সঙ্গে আরও বললেন, “ক্রিকেটজীবনে আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া ম্যাচ খেলা থেকে যখনই একটুআধটু বিশ্রামের সুযোগ পেতাম, তখনই ব্যাডমিন্টন খেলতাম। সোজা কথা, ক্রিকেটের অফ সিজনে নিজেকে শারীরিক আর মানসিক দু’দিক থেকেই ফিট রাখতে ব্যাডমিন্টন কোর্টে কাটাতাম।” |
আইবিএলের সলতে পাকানোর সময় শোনা গিয়েছিল, মুম্বই মাস্টার্স দল কিনতে পারেন সচিন তেন্ডুলকর। শেষ পর্যন্ত সেটা রটনাই থেকে যায়। মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম মালিক হন ভারতীয় ক্রিকেটের আসল লিটল মাস্টার। “আমি বরাবর প্রচুর ব্যাডমিন্টন ম্যাচ দেখি। আর এই খেলাটা আমার জীবনের সঙ্গেও সব সময় সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে। আমার খুব ভাল বন্ধু এবং মুম্বই মাস্টার্সের সহ-মালিক চামুন্ডেশ্বরনাথ যখন প্রস্তাবটা দিল তখনই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। এটা আমার কাছে একটা সুযোগ বলে আমি মনে করি। চামুন্ডিকে বলেছিলাম, ‘এটা নিয়ে আমার ভাবার মোটেই বেশি দরকার নেই। চলো, কাজটা করা যাক।’ তার পর আমরা স্রেফ সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলি।”
গাওস্কর-চামুন্ডেশ্বরনাথের সঙ্গে মুম্বই মাস্টার্সের আর একজন সেলিব্রিটি মালিকও আছেন— অভিনেতা নাগার্জুন। তবে গাওস্করের কথায়, “দল গড়ায় অবশ্য আমার অবদান ওইটুকুই— বিশ্বের এক নম্বরকে নিতে বলা। বাকি সব কিছু চামুন্ডি আর ওর শাগরেদদের ঘাড়ে। তবে আমার মনে হয় ওরা বেশ ব্যালান্সড একটা দলই গড়েছে।” রাউন্ড রবিন লিগে নিজের দলের পারফরম্যান্সেও যথেষ্ট খুশি গাওস্কর (টিম সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছে)। “আমি তৃপ্ত। সামনের শনিবার আমরা যদি নিজেদের শহরে ফাইনাল না-ও খেলি, তা হলেও কঠিন লিগ থেকে সেমিফাইনালে উঠতে পারাটাও যথেষ্ট ভাল রেজাল্ট। তবে আমাদের আরও ভাল করার চেষ্টা চালু থাকবে। পরের বছরের ভাবনাও করতে হবে।”
ক্রিকেট হকির পর এ বার ব্যাডমিন্টন। ভারতীয় খেলাধুলোর উন্নতির জন্য কি অন্য ইভেন্টেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আবশ্যক? গাওস্করের বিনয়ী জবাব, “এ ব্যাপারে আমি কিছু মন্তব্য করলে সেটা গোটা ভারতীয় খেলাধুলো নিয়ে আমার যে সামান্যতম জ্ঞান সেটাকে অতিক্রম করা হয়ে যাবে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত কাজে দিয়েছে। ব্যাডমিন্টনের ক্ষেত্রেও গোটা দেশে দারুণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো এই দুটো খেলাটাতেই যেটা দরকার ছিল সেটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মেটাচ্ছে।”
|
জিতেই হুঙ্কার সাইনার
সংবাদসংস্থা • হায়দরাবাদ |
টুর্নামেন্টে অপরাজিতই ছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার তাই জু ইং-কে হারিয়ে যে ভাবে শূন্যে দু’বার হাত ছুড়লেন তাতেই বোঝা যাচ্ছিল নিজের শহরে জয়ের পর কতটা তৃপ্ত সাইনা নেহওয়াল। ২১-১৭, ১৪-২১, ১১-৮। স্কোর দেখে বোঝার উপায় নেই ম্যাচের আগে কতটা চাপে ছিলেন ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ‘কুইন’। গাচ্চিবোলি স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় ক্রমাগত গ্যালারি থেকে ‘সাইনা সাইনা’ চিৎকারেও বোঝা যাচ্ছিল তাঁর জয় দেখতে দর্শকরা কতটা উদগ্রীব। সেই চাপেই কি তাইওয়ানের ১৯ বছর বয়সি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গেম হেরে বসলেন। ম্যাচের পর কিন্তু সাইনার গলায় সেরকম কোনও ইঙ্গিত পাওয়া গেল না। উল্টে বললেন, “দারুণ লাগছে জেতার পর। সবাইকে ধন্যবাদ। লাভলি ক্রাউড। দর্শকদের জন্যই ম্যাচটা জিততে পেরেছি। আবার কাল সেমিফাইনালে দেখা হবে।” এক দিন পরেই আবার সেমিফাইনালে নামার চাপ নিতে সমস্যা হবে না? “এত তাড়াতাড়ি আবার কোর্টে নামাটা খুব কঠিন। তবে আশা করছি দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে সমস্যা হবে না। সেরা ফর্মই দেখাতে পারব,” সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষকে এভাবে একপ্রকার হুঙ্কারই দিয়ে রাখলেন সাইনা। শেষ লিগ ম্যাচে বঙ্গা বিটসকে সেমিফাইনালের সামান্য আশা রাখতে হলেও টাইটা ৫-০ জিততে হত হায়দরাবাদ হটশটসের কাছে। সদ্য অবসর নেওয়া তৌফিক হিদায়েত এখনও পর্যন্ত কোনও মাচে নামেননি। পারুপাল্লি কাশ্যপের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে নামতে পারেন এমন একটা জল্পনা ছিল। কিন্তু থাইল্যান্ডের তানোগসাককে নামায় হায়দরাবাদ। ২১-২০, ২১-১৮-এ তিনি পারুপাল্লি কাশ্যপকে হারিয়ে বঙ্গা বিটসের আশায় শুরুতেই জল ঢেলে দেন। এ বছরের অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালিস্ট তানোগসাককে এখনও পর্যন্ত আইবিএলে কেউ হারাতে পারেনি। ঘণ্টায় প্রায় ২৪৫ কিমি এর স্ম্যাশ মারা কাশ্যপও সেই দুর্ধর্ষ ফর্মের সামনে উড়ে যান দু’বার এগিয়ে গিয়েও।
|
বুধবার শেষ চারের যুদ্ধে সাইনার হায়দরাবাদ। স্টার স্পোর্টস টু (৮-০০) |
|