প্রশ্ন: জীবন কি হঠাৎ বদলে গেছে?
সিন্ধু: (লাজুক হাসি) জীবন অনেকটাই বদলে গেছে এই ক’মাসে।
প্র: এয়ারপোর্ট-টেয়ারপোর্টে লোকে চিনে ফেলছে?
সিন্ধু: হ্যাঁ, চিনে ফেলছে। একসঙ্গে ছবি তুলছে। অটোগ্রাফও নিচ্ছে।
প্র: কাল জুলিয়েন শেঙ্কের সঙ্গে খেলার সময় শুরুতে খুব নার্ভাস দেখাচ্ছিল। পিছিয়েও পড়েছিলেন। কী ভাবে জিতলেন?
সিন্ধু: আমি ভেতরে ভেতরে নার্ভাস ছিলাম না। দু’বার অলরেডি ওকে এর আগে আমি খেলেছি। হয়তো জিতিনি। কিন্তু জানতাম কী করলে জেতা যাবে।
প্র: আচ্ছা, আপনার হাইট কত?
সিন্ধু: পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি।
প্র: আপনি কি জানেন ব্যাডমিন্টন দুনিয়ায় অনেকেই বলছে যে, আপনার কোর্ট কভারেজ অতুলনীয়। যেন মনে হয় কোর্টের সর্বত্র আপনি জুড়ে আছেন। এটা একটা অপটিক্যাল ইলিউশন।
সিন্ধু: হ্যাঁ, আমাকে অনেকে বলেছে। হাইটটা কোর্ট কভারেজের ক্ষেত্রে আমার একটা অ্যাডভান্টেজ।
প্র: কালকের ম্যাচটা নিশ্চয়ই আপনার জীবনের সর্বোত্তম জয়?
সিন্ধু: আমি মনে করি না। কালকের ম্যাচটা জীবনের অন্যতম সেরা জয়। এর আগে মুম্বই মাস্টার্সে আমি জিতেছি। এই ম্যাচটা মনে থাকবে, কিন্তু আলাদা করে সেরা হিসেবে মনে থাকবে না।
প্র: র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা এ রকম প্রতিদ্বন্দ্বী যখন খেলে, তখন কি মনোবিদের পরামর্শ নিতে হয়?
সিন্ধু: মনোবিদের পরামর্শ নিই। কিন্তু তার সঙ্গে গোপী স্যর। উনি ম্যাচটা বুঝিয়ে দেন।
প্র: আপনার বাবা-মা দু’জনেই জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ। কী আছে গোপী স্যরের মধ্যে যা বাবা-মা আপনাকে বোঝাতে পারে না?
সিন্ধু: গোপী স্যর প্রথমত নিজে গ্রেট প্লেয়ার ছিলেন। ওঁর কোচিংয়ের ধরনটা খুব ভাল। উনি বোঝান কী করে ধৈর্য ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে কী ভাবে পরিশ্রম করতে হবে। উনি আবার আমার বাবারও খুব ভাল বন্ধু। ওঁর মধ্যে কতগুলো ব্যাপার আছে যেটা একেবারে আলাদা।
প্র: সাইনা আর আপনি যখন খেলেন তখন গোপী স্যরের কি সমস্যা হয়?
সিন্ধু: সমস্যা হয় না। তখন উনি ভাল ব্যাডমিন্টনের কদর করতে বসে যান। যে ভাল খেলবে, উনি তখন তার সমর্থক।
প্র: গোপী স্যরের কাছে আপনার প্র্যাক্টিসের রুটিনটা একটু বলুন।
সিন্ধু: সকালে ফার্স্ট সেশন ভোর সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটা। তার পর সাতটা থেকে সাড়ে আটটা। এগারোটা থেকে একটা। আবার সন্ধেবেলা একটা সেশন। |
প্র: সারা দিনই তো তা হলে ব্যাডমিন্টনের পিছনে চলে যায়?
সিন্ধু: সে তো দিনে অন্তত দশ ঘণ্টা দিতেই হবে আপনার ভালবাসার পিছনে।
প্র: অবসর সময় কী করেন? সিনেটা-টিনেমা দেখেন?
সিন্ধু: অবসর বলতে শুধু রবিবার। ওটা আমাদের অফ ডে। ঋত্বিক রোশনকে আমার খুব পছন্দ। সুযোগ পেলে ওর সিনেমা দেখি।
প্র: নিয়মিত কাগজ পড়েন? টিভি দেখেন?
সিন্ধু: টিভি সব সময় দেখা হয় না। কাগজ পড়ি।
প্র: কাগজে যে আপনার আর সাইনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি হয়, দেখেন?
সিন্ধু: দেখি।
প্র: কী মনে হয় যখন এ সব লেখালেখি পড়েন?
সিন্ধু: কাগজে সত্যি কত কিছু লেখে। কত রকম থিওরি দেয়। আমি শুধু ভাবি নিজের খেলাটা খেলতে হবে। আমার বেস্টটা দিতে হবে। লেখালেখিগুলোকে মাথা থেকে সরিয়ে রাখি।
প্র: চূড়ান্ত উচ্চাশা কী? সাইনাকে হারিয়ে এক নম্বর হওয়া?
সিন্ধু: না, বিশ্বের এক নম্বর হওয়া। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আর দেশের হয়ে অলিম্পিক সোনা জেতা।
প্র: আঠারো বছর বয়সে আপনি ভারতের এক স্পোর্টস সেনসেশন। অন্য আর একটা খেলায় ষোলো বছর বয়সে কেউ সাড়া জাগিয়ে দিয়েছিল জানেন?
সিন্ধু: হ্যাঁ জানি। সচিন তেন্ডুলকর তো?
প্র: সচিনের কাহিনি দেখে কি উৎসাহ পান?
সিন্ধু: নিশ্চয়ই পাই। ওঁর সঙ্গে আমার দেখাও হয়েছে।
প্র: কোথায় দেখা হল?
সিন্ধু: উনি হায়দরাবাদে এশিয়ান ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর আমার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন। আর পুরস্কার দেওয়ার পর বলেছিলেন, আমি তোমার নাম খুব শুনছি। আশা করব পরের বার যখন দেখা হবে তুমি আরও ভাল করবে। কথাটা আমার দারুণ ইন্সপায়ারিং লেগেছিল।
প্র: তা হলে কি সচিন আপনার রোল মডেল?
সিন্ধু: না। সচিন রোল মডেল নন। সে ভাবে কেউ নেই। আদর্শ যদি কেউ থেকে থাকেন, তা হলে গোপী স্যর।
প্র: প্রকাশ পাড়ুকোনের সঙ্গে কখনও দেখা হয়েছে?
সিন্ধু: হয়েছে। উনি প্রত্যেকটা বড় ম্যাচের পরেই আমাকে উৎসাহ দেন। কিন্তু সেই একটা কথাই বলছি, গোপী স্যরের সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রিটা আলাদা। |