শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ চন্দ্রকোনায়
সুইসাইড নোটে নাম তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের, শুরু হল মামলা
ক স্কুল শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ভোরে চন্দ্রকোনা থানার জামগেড়িয়ায় বাড়ি সংলগ্ন একটি গাছ থেকে ভৈরবপুর রামগতি হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক প্রতাপ ঘোষের (৪৫) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃত শিক্ষকের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ‘হেনস্থা’য় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে প্রতাপবাবু আত্মঘাতী হয়েছেন। তাঁর বাড়ি থেকে ‘সুইসাইড নোট’ও উদ্ধার হয়েছে। মৃতের স্ত্রী-র অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্কুল সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতাপবাবু ওই স্কুলে ভূগোল পড়াতেন। সঙ্গে টিউশন করতেন। অভিযোগ, রাখি পূর্ণিমার দিন এক বাড়িতে টিউশনে গিয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন তিনি। বিষয়টি ওই ছাত্রীর বাবা থানায় না জানিয়ে স্কুলের পরিচালন কমিটিকে জানায়। যদিও ওই শিক্ষকের পরিবারের পাল্টা অভিযোগ, প্রতাপবাবু সিপিএম সমর্থক হওয়ায় স্থানীয় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা অপবাদ দেওয়ার জন্যই ওই ছাত্রীটির বাবাকে অভিযোগ জানাতে বলে। সেই মতো তৃণমূলের সমর্থক বলে পরিচিত ওই ছাত্রীর বাবা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, তারপর থেকেই স্থানীয় ভৈরবপুর গ্রামের তৃণমূলের একাধিক কর্মী-সমর্থক প্রতাপবাবুকে জরিমানা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
প্রতাপবাবুর স্ত্রী মঞ্জুদেবীর অভিযোগ, “বছরখানেক আগে তৃণমূলের লোকজন তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। টাকা না দিলে স্কুলে চাকরি করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফের আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁর মান-সম্মান নষ্ট করা হচ্ছিল। তা সহ্য করতে না পেরে ওকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, কিছু দিন ধরেই এলাকার কয়েক জন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক প্রতাপবাবুকে দু’লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার জন্য ফতোয়া দেয়। প্রতাপবাবুর বাবা অজিত ঘোষ বলেন, “টাকা না দিলে স্কুলের চাকরি চলে যাবে, এমনকী মাথা ন্যাড়া করে জুতোর মালা পড়ানো হবে বলে হুমকি দেয়। সোমবার রাতে স্থানীয় তৃণমূলের পার্টি অফিসে আলোচনার জন্য প্রতাপবাবুকে ডাকা হয়। তখন এলাকার কয়েকজন তাঁকে মারধরও করে।” রাতে বাড়িতে এসে স্ত্রীকে সব জানিয়ে শুয়ে পড়েন প্রতাপবাবু। ভোরের দিকে বাড়ি সংলগ্ন একটি গাছে তাঁকে গলায় দড়ি লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, সুইসাইড নোটে প্রতাপবাবু স্থানীয় ১২ জনকে মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। তাঁর স্ত্রী মঞ্জু ঘোষ আরও কয়েক জনের নাম লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন। চন্দ্রকোনা থানার ওসি আশিস জৈন বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
এ দিকে মঙ্গলবার প্রতাপবাবুর মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হতেই স্কুলে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। প্রিয় শিক্ষকের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক তুষার ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। নবম শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়, “প্রতাপবাবু খুব ভাল ছিলেন। উনি মারা গেলেন। তা-ও মিথ্যা বদনাম নিয়ে। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।” ছাত্ররা এ দিন ক্লাস বয়কট করে এবং মিথ্যে অভিযোগ করার জন্য ওই ছাত্রীকে তাড়াতে হবে বলে স্লোগান দেয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামালায়।
গোটা ঘটনার দায় তৃণমূলের উপরে চাপিয়েছে সিপিএম। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য গুরুপদ দত্ত বলেন, “দলীয় সমর্থক প্রতাপ ঘোষকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। তা সহ্য করতে না পেরে উনি আত্মহত্যা করলেন।” যদিও ঘটনায় দলের যুক্ত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি চিত্ত পাল। তবে এলাকারই একাধিক বসিন্দা মানছেন, “স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের মদতেই প্রতাপবাবুকে হেনস্থা করা হয়েছে। এখন শিক্ষার্থী থেকে সাধারণ মানুষকেউই মেনে না নেওয়ায় বেগতিক বুঝে পিছু হঠছে ওরা।” স্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদক সুমন চক্রবর্তী বলেন, “ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেল।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.