সংখ্যার জোরে গত কাল লোকসভায় খাদ্য সুরক্ষা বিল শুধু পাশ করিয়েই নেয়নি সরকার, বিরোধীদের আনা একের পর এক সংশোধন প্রস্তাবকেও ধরাশায়ী করে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি আশ্বস্ত নয় কংগ্রেস। বরং উদ্বেগ, রাজ্যসভায় কি এতটাই মসৃণ হবে খাদ্য বিলের গতিপথ? নাকি অতীতে লোকপাল বিল পর্বের মতোই নাস্তানাবুদ হতে হবে সরকারকে? পরশু রাজ্যসভায় খাদ্য বিল নিয়ে আলোচনার আগে এখন থেকেই তাই দৌত্যে নেমে পড়েছেন কংগ্রেসের নেতারা।
গত কাল বিলটিতে বাধা দেওয়া বিরোধীদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ, ভোটের মুখে গরিবের খাদ্য সুরক্ষায় বাধা দিলে বিপদ অনিবার্য। তাই কৌশলে প্রায় তিনশো সংশোধন প্রস্তাব পেশ করেছিল বিজেপি, বাম, তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। সেইগুলির কোনওটিই অবশ্য টেঁকেনি। কারণ, লোকসভায় সরকারের পক্ষে সংখ্যার অভাব নেই।
কিন্তু রাজ্যসভায় সরকার সংখ্যালঘু। ফলে সেখানে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে গেলেই মুশকিল। যদিও খাদ্য সুরক্ষা বিলের বিরুদ্ধে কারও ভোট দেওয়ার আশঙ্কা কার্যত নেই, কিন্তু সরকারের উদ্বেগ, লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও একগুচ্ছ সংশোধন প্রস্তাব এনে সেগুলিতে ভোটাভুটি চাইতে পারে বিজেপি বা অন্য বিরোধী দলগুলি। তার কোনও একটিতে বিরোধীরা জিতে গেলে লোকসভায় খাদ্য বিল পাশ করানোর প্রয়াসটাই কার্যত জলে যাবে। কারণ, তখন রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যাওয়া সংশোধন প্রস্তাব নতুন করে লোকসভায় পাশ করাতে হবে সরকারকে। ঠিক যেমন লোকপাল বিলের ক্ষেত্রে হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে বিরোধীদের কার্যসিদ্ধি হয়ে যাবে। বিলের বিরোধিতা করার দায় তাদের ঘাড়ে চাপবে না, আবার বিল পাশের প্রক্রিয়াও ঘেঁটে দেওয়া সম্ভব হবে।
এই অবস্থায় সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যসভায় বহুজন সমাজ পার্টির সমর্থন মিলবে। কিন্তু বিজেপি বা অন্য বিরোধী দলের আনা সংশোধন প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে পারে সমাজবাদী পার্টি। তাই মুলায়ম সিংহকে বোঝানোর চেষ্টায় কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা। তবে সপা কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি। গত কাল লোকসভায় মুলায়ম যে ভাবে কংগ্রেস তথা সনিয়া গাঁধীর সমালোচনা করেন, তার পর তাঁদের পাশে পাওয়া নিয়ে আশাও দেখছে না কংগ্রেস।
কাজেই তোড়জোড় চলছে বিকল্প ব্যবস্থারও। সূত্রের বক্তব্য, জেডিইউ যাতে রাজ্যসভায় খাদ্য বিল পক্ষে দাঁড়ায়, তার জন্য নীতীশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। বামেদেরও বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে। যদিও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্ল আজ দাবি করেন, যথেষ্ট সংখ্যক সাংসদের সমর্থন মিলবে বলেই সরকার আশাবাদী। বসপা এবং জেডিইউ-কে পাশে পাওয়া যাবে বলে শুক্লর মত। প্রাক্তন জোটসঙ্গী ডিএমকে-র সমর্থন মেলারও সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া, ছোট দল এবং মনোনীত ও নির্দল সমস্ত সদস্যের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টাও জারি রয়েছে সরকারের তরফে।
|