ছিল দুধের ডিপো। হবে কিয়স্ক।
পাড়ায় পাড়ায় ফুটপাথের উপরে এক চিলতে জায়গা নিয়ে হরিণঘাটার দুধের ডিপোগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জরাজীর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। সরকারি ডেয়ারিগুলির বেহাল দশার সঙ্গে দুধের ডিপোগুলির হালও ক্রমশ ঢিলে হয়েছে। ক্রেতা নেই, দুধের সরবরাহও নেই। তিন বা চার দশক আগে দুধের ব্যবসায় সরকারি হরিণঘাটা বা বেলগাছিয়া সেন্ট্রাল ডেয়ারির একচেটিয়া কারবারের সিংহভাগ দখল করে নিয়েছে মাদার ডেয়ারি, মেট্রো ডেয়ারি ও আমুলের মতো সংস্থা।
দুধের ব্যবসার লড়াই থেকে সরে এখন ডিপোর চেহারা বদলে তৈরি হবে ঝাঁ-চকচকে নীল-সাদা কিয়স্ক। ডিপোর মতো সকালের ঘণ্টা দুই-তিনেক সময় নয়, কিয়স্ক খোলা থাকবে সকাল ছ’টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। সেখানে পাওয়া যাবে সরকারি ডেয়ারি, মাদার ডেয়ারি ও প্রাণিজ সম্পদ নিগমের উৎপাদিত সব ধরনের পণ্য। থাকবে দুধ, ঘি, আইসক্রিম, পনির, দই, মুরগি, কোয়েলের মাংস। পণ্য ঠান্ডা ও গরম রাখার ব্যবস্থাও থাকবে। সব সরকারি পণ্য হলেও কিয়স্ক চালাবে বেসরকারি সংস্থা।
কোন কোন ডিপোকে কিয়স্ক তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হবে, তা ঠিক করতে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তারাই ধাপে ধাপে সমীক্ষা করে বিভিন্ন ডিপোকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করবে।
রাজ্যের দুগ্ধ কমিশনার দিবাকর মুখোপাধ্যায় জানান, পুরনো আমলের দুধের ডিপোগুলির মধ্যে সবচেয়ে জরাজীর্ণগুলিকে প্রথম ধাপে কিয়স্ক তৈরির জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খাস কলকাতার ১৬টি ডিপোকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কিয়স্ক চালাবে যে বেসরকারি সংস্থা তাদেরই পুরসভার কর, বিদ্যুতের বিল মেটাতে হবে। সরকারকে তাদের কোনও লভ্যাংশ দিতে হবে না।
তবে, সরকারি ডেয়ারি, মাদার ডেয়ারি ও প্রাণিজ সম্পদ বিকাশ নিগমের উৎপাদিত পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কিয়স্ক থেকে বিক্রি করা যাবে না। তিনি বলেন, “যে ডিপোগুলিতে এখনও মহিলা ও সহায়কেরা কাজ করেন, তাঁদের কিয়স্কে কাজ দিতে হবে।”
প্রশাসনের মতে, এখন দুধের ডিপোগুলি থেকে সরকারের কার্যত কোনও আয় হয় না। চারশোর মতো সরকারি দুধের ডিপোর সিংহভাগই প্রায় অচল। এর ফলে প্রতিদিন বাজারে মাদার ডেয়ারি ও মেট্রো ডেয়ারি মিলিয়ে যেখানে গড়ে ৬ লক্ষ লিটার দুধের জোগান দেয়, সেখানে হরিণঘাটা ও বেলগাছিয়ার সরকারি ডেয়ারি থেকে দুধের জোগান কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার লিটারে! এই প্রেক্ষিতেই পরিবর্তনের ভাবনা। সাবেক নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি দুধ ছাড়া অন্যান্য উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করার মতো কোনও পরিকাঠামো নেই রাজ্যের। অথচ, নতুন নতুন দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি করতে হরিণঘাটা ডেয়ারির আধুনিকীকরণ চলছে। সরকারি কর্তাদের দাবি, কিয়স্কের মতো একটি ‘আউটলেট’ থেকে দুধ ছাড়াও বিভিন্ন, দুগ্ধজাত ও প্রাণিজ সম্পদজাত পণ্য বিক্রির পথ খুলবে। বিক্রি বাড়লে বাজারে প্রতিযোগিতায় ফেরা যাবে।
যে ১৬টি কিয়স্ককে প্রথম দফায় চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, ম্যাডক্স স্কোয়ার, একডালিয়ার মতো কলকাতার জমজমাট কিছু জায়গা। কর্তাদের ধারণা, প্রথম পর্যায়ে কিয়স্ক-ভাবনা সফল হলে অন্য ডিপোগুলি হাতে নেওয়ার ব্যাপারেও বেসরকারি সংস্থা উৎসাহী হবে। সরকারি দুধের দিকে আবার সাধারণ মানুষ মুখ ফেরাবেন। |