আমলা নয়। ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পে গুচ্ছ ভিত্তিক উন্নয়নের দায়িত্ব এ বার পেশাদার সংস্থার হাতে দিতে চাইছে রাজ্য।
সরকারি সূত্রের খবর, মোট ৪৮টি ক্লাস্টার বা শিল্পগুচ্ছ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টির ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা সম্ভব নয়। বাকি ৪০টি গুচ্ছ ভিত্তিক শিল্প উন্নয়নের জন্য পেশাদার সংস্থা নিয়োগ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের দাবি। পরিকল্পনা থেকে রূপায়ণ, গোটা প্রক্রিয়া দেখবে সংস্থাগুলি।
মৃৎশিল্প, জরির কাজ থেকে শুরু করে গয়না, পাট, তাঁত, চর্ম-সহ বিভিন্ন গুচ্ছ ভিত্তিক শিল্প চিহ্নিত করা হয়েছে আগেই। একই ধরনের শিল্পে নিযুক্ত কারখানাগুলিকে এক একটি গুচ্ছ হিসেবে ধরা হয়। নির্দিষ্ট শিল্পের চাহিদা মেটাতে পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক সুবিধা দেওয়াই এই গুচ্ছ তৈরির প্রাথমিক উদ্দেশ্য।
গুচ্ছ ভিত্তিক শিল্পের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প রিপোর্ট আগেও বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা তৈরি করে দিত। এ বার শুধুই রিপোর্ট তৈরি নয়। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের পরিকল্পনা, সমীক্ষা, বিপণন কৌশল ও দক্ষ কর্মী তৈরি করার যাবতীয় কাজ করবে ওই ধরনের সংস্থা। ছোট, মাঝারি এবং বস্ত্রশিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ জানান, পাঁচটি সংস্থা নিয়োগ করা হবে। সংস্থাগুলির পরিষেবা বাবদ ৫০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ করবে রাজ্য। গুচ্ছ ভিত্তিক শিল্পোন্নয়নের জন্য বিশেষ সেল তৈরির কথাও জানান রাজীববাবু। নিজেদের সমস্যা নিয়ে নানা দফতরে দৌড়দৌড়ি না-করে সেই সেল-এর দ্বারস্থ হতে পারবেন শিল্পোদ্যোগীরা।
সংশ্লিষ্ট দফতরের দাবি, গত দু’বছরে রাজ্যে প্রায় ১২ হাজার ছোট ও মাঝারি কারখানা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সংখ্যায় বাড়লেও ব্যাঙ্কঋণ, প্রযুক্তি ও দক্ষ কর্মীর অভাব বরাবরের মতোই এই শিল্পকে তাড়া করে ফিরছে। এ কথা স্বীকার করে নিয়েই রাজীববাবু জানান, সমস্যার উৎস খুঁজে নির্দিষ্ট সমাধানসূত্রের কাছে পৌঁছে দিতেই আগামী মাসে সিনার্জি এমএসএমই ২০১৩ আয়োজন করছে তাঁর দফতর।
ছোট ও মাঝারি শিল্পের অন্যতম সমস্যা দক্ষ কর্মীর অভাব। রাজীববাবু জানান, প্লাস্টিক, নির্মাণ, পাট ও চর্মশিল্প মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ রাজ্যে প্রায় ১২ হাজার নির্মাণ কর্মী প্রয়োজন। ১০০ দিনের প্রকল্পের দৌলতে ওড়িশা ও বিহার থেকে কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। সমস্যা মেটাতে শ্রম ও কারিগরি শিক্ষা দফতরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে ছোট, মাঝারি এবং বস্ত্রশিল্প দফতর।
একই ভাবে ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দিতে প্রযুক্তি কেন্দ্র তৈরি করছে রাজ্য। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এই কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর এ রাজ্যে ১২০টি নয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবন হলেও মাত্র একটি এ রাজ্যের কাখানায় কাজে লাগানো হয়েছে। বাকি প্রযুক্তি পাড়ি দিয়েছে গুজরাতে। রাজ্যের আশা, সেই পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে এই প্রযুক্তি কেন্দ্র। |