পার্কের রমরমা, ক্ষয় ইছাই ঘোষের দেউলের
ছাই ঘোষের দেউল ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু সেই দেউলের দিকেই কারওর নজর নেই। জন্মেছে আগাছার ঝাড়। আগাছায় জমে থাকা বৃষ্টির জলে ঐতিহাসিক এই স্থাপত্য ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। দ্রুত তা সাফ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
কাঁকসার ঘন জঙ্গলের মাঝে অজয় নদের ধার ঘেঁষে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি উঁচু মন্দির। ‘ইছাই ঘোষের দেউল’ হিসাবে সেটি পরিচিত। প্রচলিত কাহিনী বলে, গৌড়ের রাজা তখন দেবপাল। আর কাঁকসার জঙ্গল ঘেরা ত্রিষষ্টিগড়ের সামন্তরাজা কর্ণসেন। তাঁর আশ্রিত সোম ঘোষের পুত্র ইছাই ঘোষ ত্রিষষ্টিগড়ের মধ্যেই আলাদা ঢেকুরগড় স্থাপন করে নিজেকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করেন। যুদ্ধ বাধে কর্ণসেনের সঙ্গে। কর্ণসেন হেরে যান। জয়ের নিশান হিসাবে ইছাই ঘোষ গড়ে তোলেন এক সুউচ্চ শিখর দেউল। ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণের মতে, দেউলটি গড়ে তোলা হয়েছিল মধ্যযুগের শেষদিকে।
দেউল ও সংলগ্ন ৮১ একর জায়গা নিয়ে নব্বই দশকের শুরুর দিকে জেলা পরিষদ সেখানে গড়ে তোলে ‘দেউল পার্ক’। পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে ছিল স্থানীয় বনকাটি পঞ্চায়েত। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় লোকজনের তেমন আনাগোনা ছিল না।
আগাছা জমেছে দেউলের গায়ে।—নিজস্ব চিত্র।
২০০৬ সালে পঞ্চায়েত পার্কটি ৩০ বছরের জন্য ‘লিজ’ দেয় একটি বেসরকারি সংস্থাকে। গড়ে তোলা হয় রিসর্ট, কনফারেন্স রুম, লেক, আর্ন্তজাতিক মানের গোলাপ বাগিচা, মুক্ত মঞ্চ। শুরু হয় মাছ চাষ, হাঁস-মুরগী-পশুপালন, ডেয়ারি শিল্প। লাগানো হয় বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছ। বদলে যাওয়া নতুন পার্কে বাড়তে থাকে ভিড়।
সম্প্রতি সেই দেউলের মাথায় আগাছা জন্মাতে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দেউলের মাথার প্রায় সব দিকেই গাছ জন্মেছে। দিন দিন লম্বায় তারা বাড়ছে। এমনিতেই দীর্ঘদিন দেউলটির সংস্কার না হওয়ায় সেটি বাইরে থেকে দেখলে ক্ষয়িষ্ণু মনে হয়। তার উপর আগাছায় বৃষ্টির জল জমে ক্ষতি হচ্ছে কাঠামোর। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ঐতিহাসিক এই স্থাপত্যের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য, অনিল দাস’রা বলেন, “ইছাই ঘোষের দেউল এলাকার প্রধান আকর্ষণ। ধর্মমঙ্গলেও ইছাই ঘোষের কর্মকাণ্ডের উল্লেখ আছে। রমরমা পর্যটন ব্যবসা চলছে দেউল ঘিরে। কিন্তু দেউলের খবর কেউ রাখে না।” এ বারের জেলা পরিষদের বিজয়ী প্রার্থী তৃণমূলের দেবদাস বক্সী বলেন, “খবরটি জানতাম না। আগের পঞ্চায়েত বোর্ড ওই সংস্থাকে লিজ দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর করব। পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” পার্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাঁদের তরফে কোনও গাফিলতির কথা স্বীকার করছেন না। সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দেউলটি যেখানে আছে সেটি ‘সংরক্ষিত’ এবং ঘেরা এলাকা। সেখানকার নির্মাণে কোনওরকম হাত লাগানো যাবে না। তিনি বলেন, “দেউল পার্কের ভালমন্দের সঙ্গে আমরা জড়িয়ে। কিন্তু যে দেউলকে কেন্দ্র করে পার্কটি গড়ে উঠেছে সেখানে কিছু করার অধিকার আমাদের নেই।” বিষয়টি পুরাতত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগকে জানানো হবে বলে জানান ওই আধিকারিক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.