|
|
|
|
ছোটদের নিয়ে এ বার মিছিল করবে মোর্চা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি |
জিটিএ সভা নিয়ে রাজ্য সরকার নরম মনোভাব দেখালেও ফের সুর চড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সোমবার মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি দার্জিলিঙের এক জনসভায় বলেছেন, “শুধু জিটিএ সদস্যেরা নন, চলতি মাসে দলের যে ৮০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের সকলকে ছাড়ার ব্যবস্থা হলে তবেই আমরা জিটিএ-এর বৈঠকে যোগ দেব।” শুধু তা-ই নয়, গোড়ায় রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের তরফে পাহাড়ে রসদ বিলির উদ্যোগে সরাসরি বাধা না-দিলেও এ দিন কার্যত সংঘাতের রাস্তায় হেঁটেছেন মোর্চা নেতৃত্ব। মোর্চা সূত্রের খবর, এ দিন যে ৩০টি এলাকায় রেশন-পণ্য বিলির বন্দোবস্ত হয়, তার আশেপাশে মোর্চার নেতারা গিয়ে বাসিন্দাদের ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করেছেন। ফলে, সুখিয়াপোখরি-সহ কয়েকটি এলাকায় দিনভর বিডিও অফিস, থানা, রেশন দোকানে পণ্য পড়ে থাকলেও কার্যত কেউই নিতে যাননি।
এখানেই শেষ নয়, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এ বার নাবালক-নাবালিকাদেরও মিছিলে নামানোর নির্দেশ দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। গুরুঙ্গ জানান, ১২ বছর বয়সী থেকে ১৮ বছর বয়সী গোর্খাদের আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মিছিলে সামিল করতে হবে। গোর্খা বিদ্যার্থী মোর্চাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবার দার্জিলিঙের মোটরস্ট্যান্ডে এক সভায় রোশন বলেন, “১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মিছিলে সামিলের যে নির্দেশ সভাপতি দিয়েছেন, তা সব ছাত্র সংগঠনের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।” আজ, মঙ্গলবার থেকে টানা ৫ দিন পাহাড়ের নানা এলাকায় ছোটদের নিয়ে ওই মিছিল হওয়ার কথা। |
|
সুখিয়াপোখরি থানায় রেশন পড়ে থাকলেও নিতে যাননি বাসিন্দারা। ছবি: রেজা প্রধান। |
মোর্চা সুর চড়ালেও রাজ্য কিন্তু আগামী ৪ সেপ্টেম্বর জিটিএ-র চিফ এক্সিকিউটিভ নির্বাচনের পরে পাহাড়ে শান্তি ফিরবে বলে আশায় রয়েছে। ওই নির্বাচনের জন্য ধৃত মোর্চা নেতারা জামিনের আবেদন করলে রাজ্য তার বিরোধিতা করবে না, এ কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকেই প্রধান কার্যনির্বাহীকে নির্বাচন করতে হবে এমনও বলেছে রাজ্য। সেক্ষেত্রে গুরুঙ্গরই ফের ওই পদে ফিরে আসার পথ খোলা রেখে দেওয়া হয়েছে। এ দিন মহাকরণে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও বলেন, “জিটিএ চিফ নির্বাচন হয়ে গেলে পাহাড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।” কিন্তু রাজ্য নরম মনোভাব দেখানোর পরেও মোর্চা যে শর্ত দিচ্ছে তাতে ফের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে কি না সেই প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর মন্তব্য, “প্রয়োজনে রাজ্য সরকার কতটা কড়া পদক্ষেপ করতে পারে তা সম্প্রতি পাহাড়বাসী দেখেছেন। আমরা বিপন্ন পাহাড়বাসীর কাছে রসদ, আনাজ পৌঁছে দেওয়ার কাজও শুরু করেছি। তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হলেও ধীরে ধীরে মানুষ ভয় উপেক্ষা করে বেরোচ্ছেন। আশা করব, আমাদের আরও কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য করবেন না মোর্চা নেতারা।”
দার্জিলিং জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, মোর্চা চাইলেও খুব কম বয়সীদের নিয়ে মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানান, স্কুল থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে যাতে মিছিল না হয়, সেই ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের যে রায় রয়েছে তা-ও মাথায় রাখা হয়েছে।
মোর্চার ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সঞ্জিত ছেত্রী এ দিন অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা জবরদস্তি করে অল্প বয়সীদের মিছিলে আনবেন না। সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “আমরা হাইকোর্টের রায়কে সম্মান করি। আমাদের সভাপতি চান, ছোট
থেকেই সকলে নিজেদের জাতিসত্তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোক। তা বলে আমরা কাউকে জোর করে আনব না।”
তবে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মোর্চার উদ্যোগে পাহাড়ে ৬টি দলের যে গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম শরিক অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি গুরুঙ্গের ওই নির্দেশের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ছোটদের দিয়ে মিছিলের কর্মসূচি মেনে নিতে পারছি না।” তাঁর বরং দাবি, “আমরা চাই বন্ধ বহাল রাখা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ছাড় দেওয়া হোক।” একই দাবি করেছেন ওই কমিটির চেয়ারম্যান এনোস দাস প্রধানও। তবে সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “বাবা-মা যদি বাচ্চাদের নিয়ে মিছিলে অংশ নেন, তা হলে আমার কিছু বলার থাকে না।”
|
পুরনো খবর: এ বার ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের ডাক পাহাড়ে |
|
|
|
|
|