এ বার ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের ডাক পাহাড়ে
ছাত্র-যুবদের এ বার আন্দোলনের সামনের সারিতে আনার কৌশল নিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সেই সঙ্গেই দলের ধৃত সদস্যদের জামিনে মুক্ত করে আনারও চেষ্টা শুরু হয়েছে।
এর মধ্যেই ১০ জিটিএ সদস্য-সহ মোর্চার প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। সব মিলিয়ে ধৃতের সংখ্যা আটশো ছুঁতে চলেছে। মোর্চার অন্দরের খবর, যে নেতারা বাইরে রয়েছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেও নানা পুরনো মামলা রয়েছে। যে কোনও সময়ে তাঁরাও গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে মোর্চা। তাই কৌশলগত ভাবে এখনই নেতাদের আন্দোলনের সামনের সারিতে রেখে পথে নামতে আগ্রহী নন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তার বদলে তিনি জোর দিচ্ছেন শাখা সংগঠনগুলির উপরেই। ২৭ অগস্ট থেকে টানা ৫ দিন পাহাড়ে আন্দোলনের প্রধান দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন বিদ্যার্থী মোর্চার হাতে।
এ দিন পাতলেবাস লাগোয়া মালিধুরাতে গুরুঙ্গ পাহাড়ের ছাত্র-যুবদের নিয়ে একটি সভা করেছেন। মোর্চা সূত্রে খবর, সেখানে ছাত্র-যুবদের বারেবারেই কোনও অশান্তিতে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “দলের সভাপতি বলেছেন যে, ছাত্ররা এ বার শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনে নামবে।” এতে অবশ্য পাহাড়ের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের অনেকেই দুর্ভাবনায় পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই প্রায় এক মাস ধরে পড়াশোনা বন্ধ। তার উপরে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পরে কোনও কারণে অশান্তি হলে মামলায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিদ্যার্থী মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রোহিত বিক্রম শর্মা অবশ্য বলেন, “আন্দোলন হবে একেবারেই শান্তিপূর্ণ ভাবে। ২৭ অগস্ট থেকে পাহাড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি দেশের সব প্রান্তের গোর্খা ছাত্রছাত্রীদেরও ওই ৫ দিন বিক্ষোভ আন্দোলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে প্রতিদিন দার্জিলিং জেলা প্রশাসনকে একটি করে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। সেখানে পাহাড়বাসীদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হবে।”
দার্জিলিঙের মোটরস্ট্যান্ডে মোর্চা ও সিপিআরএমের জমায়েত। রবিবার। ছবি: রেজা প্রধান।
মোর্চা সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ৫ দিন মোর্চার অন্য সব সংগঠনকে আন্দোলন না করার নির্দেশ দিয়েছেন গুরুঙ্গ। শুধু ছাত্র-ছাত্রীদেরই আন্দোলনে সামিল করতে চেয়েছেন গুরুঙ্গ। বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটকে আন্দোলনের হাতিয়ার করার পরামর্শও দিয়েছেন।
তবে দলের পোড় খাওয়া নেতাদের কয়েক জন বন্দি হয়ে যাওয়ায় দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করতেও সমস্যায় পড়ছেন মোর্চা নেতৃত্ব। তাই ধৃত নেতাদের জামিনে মুক্ত করার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। মোর্চার আইনি সেলের নির্বাহী সদস্য তথা দার্জিলিং বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেষমণি গুরুঙ্গ বলেন, “আমরা সকলের জামিনের আবেদন করেছিলাম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই আবেদনগুলি নিম্ন আদালতে খারিজ হয়ে যায়। তাই আমরা ফের জামিনের আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
রাজ্য সরকার ও শাসক দল তৃণমূল ইতিমধ্যে পাহাড়ে আবার খাদ্য ও রসদ বিলি করতে উদ্যোগী হয়েছে। প্রায় এক মাস হতে চলল, আন্দোলনের জেরে পাহাড়ে জনজীবন কার্যত অচল। স্কুল-কলেজ বন্ধ। অফিসে হাজিরার সংখ্যা খুবই কম। সরকারি গাড়ি কেবল চলছে। দোকানপাট খুলছে না। বিভিন্ন জায়গায় আনাজের অভাব তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সম্প্রতি পাহাড়ের কিছু জায়গায় রসদ বিলি করেছিলেন। তিনি এ দিন বলেন, “সোমবার থেকে সরকারি তরফে অন্তত ২০টি জায়গায় রেশনের জিনিসপত্র বিলি করা হবে। পাশাপাশি, যাদের রেশন কার্ড নেই, তাঁদের হাতে চাল-আনাজ তুলে দেবে তৃণমূল।” তৃণমূল মনে করছে, এ ভাবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে সমস্যার মধ্যে ঠেলে দিয়ে পাহাড়ের মানুষের থেকে গুরুঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “পাহাড়ের মানুষের গুরুঙ্গদের উপর কোনও আস্থা নেই বলে আমার ধারণা। পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করছে রাজ্য। যারা অশান্তি করছে, তারা ক্রমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।”
মুখ্যমন্ত্রীর সেপ্টেম্বরে পাহাড়ে যাওয়ার কথা। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর দার্জিলিং সফর দিয়ে পাহাড় সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য সর্বদল বৈঠক ডাকা দরকার।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.